ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

করতোয়া নদীর ১০.৭৫ একর জমি উদ্ধার: ডিসির দাবি, ‘একতরফা ও বেআইনি’ বলছে বিসিএল

মাহফুজ মন্ডল, বগুড়া

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ১০ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৭:১১, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

করতোয়া নদীর ১০.৭৫ একর জমি উদ্ধার: ডিসির দাবি, ‘একতরফা ও বেআইনি’ বলছে বিসিএল

ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া সদরের বাঘোপাড়ায় করতোয়া নদীর জমি অবৈধ দখলমুক্ত করতে বুধবার দিনভর জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে বিসিএল গ্লাস ফ্যাক্টরি কর্তৃক দখলকৃত প্রায় ১০.৭৫ একর ভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ উচ্ছেদ অভিযানে ‘একতরফা সিদ্ধান্ত’ ও ‘আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষার’ অভিযোগ তুলেছে ফ্যাক্টরির মূল উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান টিএমএসএস ও বিসিএল গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

বুধবার বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, দেশের অগ্রাধিকারভিত্তিক সাতটি নদীর একটি করতোয়া নদী। এর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতেই এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৯৪ সাল থেকে টিএমএসএস করতোয়ার বিভিন্ন অংশে প্রায় ১৭ একর ভূমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। এর মধ্যে বাঘোপাড়া, মহীষাবাথান ও গোকুল মৌজায় বিসিএল গ্লাস ফ্যাক্টরি ৯৩ শতাংশ ভূমি দখল করে। ১৬.৯৭ একর নদী ভূমি মাটি ফেলে ভরাট করা হয় এবং দুই জায়গায় করতোয়ার স্বাভাবিক প্রবাহে লুপ তৈরি করা হয়। জেলা প্রশাসকের দাবি, নদীর জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার এখতিয়ার কারো নেই। টিএমএসএস আদালতে নেওয়া ইনজাংশন খারিজ হয়ে গেছে এবং কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় দখলমুক্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে নদীতীর রক্ষায় গাছ লাগানো ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে জেলা প্রশাসনের। 

অপরদিকে, আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মমইন কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত সম্মেলনে বিসিএল গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ দাবি করেছে, তাদের কারখানা ৩৮ একর জমির ওপর স্থাপিত, যার মাত্র ০.৫ একর জায়গা সরকার থেকে লিজ নেওয়া জমির মধ্যে পড়ে। উচ্ছেদ করা অংশ টিএমএসএস-এর নিজস্ব কবলা সম্পত্তি এবং তা কোনোভাবেই লিজকৃত নয়।

তাদের দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড একতরফাভাবে পরিমাপ করে একটি শেড নদীর জমি হিসেবে চিহ্নিত করে, যার ভিত্তিতে ২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ নোটিশ জারি করেন। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, যা পরবর্তীতে বাতিল হয়ে যায় তবে মামলাটি এখনো জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন।

বিসিএল অভিযোগ করে, বিচারাধীন অবস্থায় ও নোটিশ ছাড়াই উচ্ছেদ চালানো হয়। এতে তাদের গ্লাস ফ্যাক্টরির ভারী যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত মেশিনারির কন্টেইনার ভেঙে ফেলা হয়। উচ্ছেদের সময় কর্মকর্তাদের ফ্যাক্টরিতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়, যার ফলে জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। তারা আরও বলেন, ফ্যাক্টরির নির্মাণকাজ শুরু করার আগে প্লান পাস, পরিবেশ ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের অনাপত্তিপত্রসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। তিনজন জেলা প্রশাসক অনাপত্তিপত্রও দিয়েছিলেন।

বিসিএল-এর মতে, সরকার যখন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কাজ করছে এবং ঢাকায় ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’ চলছে, তখন নির্মাণাধীন একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মনে নেতিবাচক বার্তা যেতে পারে। 

করতোয়া নদী রক্ষায় জেলা প্রশাসনের দৃঢ় অবস্থান যেমন পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের প্রতিফলন, তেমনি ফ্যাক্টরির বিনিয়োগ ও আইনি বিষয়াবলী ঘিরে থাকা বিতর্ক জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। মামলাটি বিচারাধীন থাকায় চূড়ান্ত মতামতের জন্য এখন আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা।

আবীর

×