ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

‘গিনেস বুক রেকর্ড’ গড়েছিলেন আগেই, এখন গড়ছেন দেশ, কে এই আশিক চৌধুরী?

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১০ এপ্রিল ২০২৫

‘গিনেস বুক রেকর্ড’ গড়েছিলেন আগেই, এখন গড়ছেন দেশ, কে এই আশিক চৌধুরী?

ছবি: সংগৃহীত।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুকে নাম লিখিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পাওয়া স্কাইডাইভার আশিক চৌধুরী এখন দেশের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস এবং তথ্যনির্ভর উপস্থাপনার মাধ্যমে ইতোমধ্যে তিনি জনসাধারণের দৃষ্টি কেড়েছেন।

বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার উপস্থাপিত প্রেজেন্টেশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সাবলীল ভাষায় দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর বিশ্লেষণ তুলে ধরা এই প্রেজেন্টেশন অনেকেই উদাহরণ হিসেবে শেয়ার করছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই বলছেন—পূর্বে যারা প্রবাসে থেকে দেশে ফিরে আসতে দ্বিধান্বিত ছিলেন, তাদের জন্য অনুপ্রেরণার নাম এখন আশিক চৌধুরী। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর, আশিকের মতো বহু মেধাবী প্রবাসী নাগরিক দেশে ফিরে এসে দায়িত্ব নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

লেখক গাজী মিজানুর রহমান তার ফেসবুক পোস্টে আশিকের প্রশংসা করে লেখেন, “কিছু লোক দেশপ্রেমের কথা বলে বিদেশে সম্পদ গড়ে তোলে, আর আশিক চৌধুরীর মতো প্রকৃত দেশপ্রেমিকরা বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে দেশের সেবায় ফিরে আসেন। এটাই প্রকৃত দেশপ্রেমের প্রতিচ্ছবি।”

জানা গেছে, আশিক চৌধুরীর বাড়ি চাঁদপুরে, তবে বাবার চাকরির কারণে তার বেড়ে ওঠা যশোরে। তিনি সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ)-তে। ২০০৭ সালে স্নাতক শেষ করেই দেশের একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ২০১১ সাল পর্যন্ত সেই প্রতিষ্ঠানেই কর্মরত ছিলেন। চাকরির পাশাপাশি সময় পেলেই বেরিয়ে পড়তেন রোমাঞ্চের খোঁজে।

পরবর্তীতে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান এবং সেখান থেকেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নতুন অধ্যায় শুরু করেন। সর্বশেষ তিনি সিঙ্গাপুরে এইচএসবিসি ব্যাংকের রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

একটি হোয়াটসঅ্যাপ কলে শুরু হয় নতুন যাত্রা। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস একদিন আশিককে ফোন করে বলেন, “আশিক, দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ এসেছে। আসবা নাকি?”

এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কোনো দ্বিধা ছাড়াই স্ত্রী নন্দিনিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ৭ এপ্রিল ২০২৫, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তার পদমর্যাদা প্রতিমন্ত্রীর সমপর্যায়ে উন্নীত করে।

ফেসবুকে নিজের এক পোস্টে আশিক লিখেছেন, “গত এক মাস শুক্র-শনিবারসহ দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেও কূল পাচ্ছি না। দুই শতাধিক সিইও ও বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সমস্যা বুঝে সমাধানের চেষ্টা করছি। সবাই প্রত্যাশা করে আমরা জিতি, কিন্তু ভুল করলে সমালোচনাও আসে। সমালোচনা হোক, শেখা হোক, আমরা এগিয়ে যাবো। দেশটা ধীরে ধীরে সঠিক পথে হাঁটবে।”

দেশের প্রতি ভালোবাসা শুধু দায়িত্ব পালনে নয়, সাহসিকতায়ও প্রকাশ পেয়েছে আশিকের জীবনযাত্রায়। তিনি একজন স্কাইডাইভার, যিনি ৪১ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে আকাশ থেকে লাফ দেন। এই রোমাঞ্চকর এবং গর্বিত মুহূর্ত তাকে এনে দিয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ স্থান।

বন্ধুদের ভাষায়, আশিক চৌধুরী এখন বাংলাদেশের ‘চিফ মার্কেটিং অফিসার’। তার অভিজ্ঞতা, আন্তর্জাতিক সংযোগ এবং দেশপ্রেম আজ তাকে দেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত করেছে। দেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে যেসব মেধাবী তরুণরা ভূমিকা রাখতে চান, তাদের জন্য অনুপ্রেরণার নাম এখন আশিক চৌধুরী।

সায়মা ইসলাম

আরো পড়ুন  

×