
এবার জাতীয়ভাবে বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হবে বাংলা নববর্ষ
এবার জাতীয়ভাবে বর্ণিল আয়োজনে উদ্্যাপিত হবে বাংলা নববর্ষ। আর সে উদ্যাপনে বাঙালির চিরায়ত শিল্প-সংস্কৃতি সঙ্গে থাকবে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা। সকল জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণে ছড়িয়ে যাবে নববর্ষের আনন্দ। সেই সুবাদে দেখা মিলবে চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন জাতিসত্তার উদ্যাপন।
নববর্ষ ও চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদান, রবীন্দ্র সরোবরসহ শহর ঢাকার নানা প্রান্তে অনুষ্ঠিত হবে কনসার্ট, ড্রোন শোসহ মনমাতানো বহুমাত্রিক আয়োজন। বর্ষবরণে রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ নানা কর্মসূচি। সেই ¯্রােতধারায় ৩০ জেলায় অনুষ্ঠিত হবে লোকনাট্য উৎসব। ১২ জেলায় অনুষ্ঠিত হবে বৈশাখী অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে অনুষ্ঠিত হবে পক্ষকালব্যাপী বৈশাখী মেলা। নেত্রকোনার বিরিশিরিতে অনুষ্ঠিত হবে লোকজ সাংস্কৃতিক মেলা। সকল জাতিসত্তার মানুষের অংশগ্রহণে এবং দল-মত নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে এবারের পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপনে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত হবে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, এবারের নববর্ষের আয়োজনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি হতে যাচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক। আর সেজন্য প্রস্তুত পাহাড় থেকে সমতলের বাসিন্দাসহ সারাদেশ। গণঅভ্যুত্থানের পর বড় পরিসরে চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নতুন বছর বরণে উৎসবের আয়োজন করেছে সরকার।
বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষের আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।
এবারের নববর্ষ উদ্যাপন প্রসঙ্গে ফারুকী বলেন, এ বছর আমরা অল ইনক্লুসিভ একটা নতুন বছর উদযাপন করতে যাচ্ছি চৈত্র সংক্রান্তিসহ। সকল জাতিগোষ্ঠী এটাকে সাদরে গ্রহণ করছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও অনুষ্ঠান হচ্ছে। ফ্ল্যাগশিপ অনুষ্ঠান বলতে যা বোঝায়, এবার সেটাই হতে যাচ্ছে।
ফারুক বলেন, আমাদের কালচারাল ফিলসফি কী, কেন আমরা এটা করছি। আমাদের সরকারের সব কাজের পেছনে দুটো ব্যাপার কাজ করে। একটা হচ্ছে কালচারাল হিলিং, আরেকটা হচ্ছে কালচারাল ইনক্লুসিভনেস। আমরা দীর্ঘদিন বিভাজনের মধ্যে ছিলাম। একটা গোষ্ঠীর সঙ্গে আরেকটি গোষ্ঠীর দূরত্ব, সংশয়, অবিশ্বাস ছিল।
সেটা থেকে হিলিংয়ের একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমবার শিল্পকলা একাডেমি চাঁদরাতে অনুষ্ঠান করেছে। সামনে সারাদেশে হবে। শুধু মুসলমানদের উৎসব নয় অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবগুলোও সারাদেশব্যাপী হবে।
পাহাড় থেকে সমতলসহ সারাদেশ এবং ঢাকার চৈত্র সংক্রান্তির আয়োজনগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরেন ফারুকী। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উৎসবগুলো চৈত্র সংক্রান্তি ঘিরে হয়। তাই আমাদের উৎসবটাও এবার চৈত্র সংক্রান্তি থেকে শুরু হচ্ছে। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশের ১২ জেলায় সাধুমেলা হবে। সেখানে সাধুসঙ্ঘ ও আধ্যাত্মিক গানের অনুষ্ঠান হবে।
চৈত্র সংক্রান্তি আয়োজন : চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে ঢাকা শহরে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে কনসার্ট হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে গান শোনাবে গারো সম্প্রদায়ের ব্যান্ডদল এফ মাইনর, মারমা সম্প্রদায়ের লা রং, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ইমাং, খাসিয়া সম্প্রদায়ের ইউনিটি ও চাকমা সম্প্রদায়ের ইনভোকেশন। বাংলা ব্যান্ডদলের মধ্যে পরিবেশনা উপস্থাপন করবে মাইলস, ওয়ারফেজ, ভাইকিংস, অ্যাভয়েড রাফা, দলছুট ও স্টোন ফ্রি।
নববর্ষের অনুষ্ঠান : পয়লা বৈশাখ নববর্ষের সকালে রবীন্দ্র সরোবরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে সুরের ধারা। বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, খিয়াং, খুমি, সাঁওতাল, বম, লুসাইসহ মোট ২৮টি জাতিগোষ্ঠী একঝাঁক শিল্পী অংশ নেবে নববর্ষের সকালে বেরুনো চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রায়। প্রথমবারের মতো রক মিউজিয়ানদের সংগঠন বামবা এতে অংশ নেবে।
ঢাকা ও এর আশপাশ থেকে দুই শতাধিক তরুণ মিউজিশিয়ান গিটার ও ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে হাজির হবে এই শোভাযাত্রায়। একসঙ্গে তারা গাইবে ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি/প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’। বিকেলে মানিক মিয়া এভিনিউতে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নববর্ষের অনুষ্ঠান হবে। সন্ধ্যা সাতটায় সেখানে চীনা দূতাবাসের সহযোগিতায় হবে ড্রোন শো।