
দেশের তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা
গত কয়েকদিন ধরে সারাবিশ্বে আলোড়ন তোলা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ‘পাল্টা’ শুল্ক-নীতি অবশেষে কার্যকর হয়ে গেছে। বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ১০টা ১ মিনিট (স্থানীয় সময় ১২টা ১ মিনিট) থেকে কার্যকরের পর দেশের তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতার সঙ্গে সঙ্গে ক্রয়াদেশ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্ববাজারে রপ্তানি কমার পাশাপাশি বাংলাদেশে কারখানা বন্ধ এবং শ্রমিকের চাকরি হারানোর শঙ্কা উদ্যোক্তা এবং অর্থনীতিবিদদের মনে কাজ করছে। সবমিলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা আসতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। উদ্যোক্তারা বলছেন, বুধবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক প্রযোজ্য হবে। যদি না সেই পণ্য ৯ এপ্রিলের আগে জাহাজে উঠিয়ে চূড়ান্ত গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে থাকে।
ফলে অনেক বাংলাদেশী পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে সরে আসতে বাধ্য হতে পারে। তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নতুন করে হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে শ্রমিকদের ওপর। কিছু কারখানাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে শ্রমজীবী মানুষদের জীবন-জীবিকা চরম ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুল্কঝড়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যে ব্যাপক হারে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। সংকটে থাকা পোশাকশিল্প ও ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণে ট্রাম্পের এই শুল্কঝড় সমূহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাদের অভিমত, এই সিদ্ধান্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শিল্প সুরক্ষার উদ্দেশ্যে বলা হলেও, আদতে এর মাধ্যমে চলমান বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থার ভিত্তিকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
গবেষকেরা দেখেছেন, বড় অর্থনীতির দেশগুলোর বাণিজ্য উত্তেজনা ছোট-বড় সব দেশের প্রবৃদ্ধিতে আঘাত করে। নতুন উত্তেজনায় প্রবৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য অংশ হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে, মাঝারি ও স্থায়ী মেয়াদে এর পরিমাণ যথাক্রমে ১ ও ২ শতাংশ হতে পারে। অতিরিক্ত শুল্কের কারণে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে ভোক্তাদের জন্য মূল্যবৃদ্ধি ঘটাবে, যা বৈশ্বিকভাবে মুদ্রাস্ফীতির চাপ সৃষ্টি করবে। এখন বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির হার ০.৭ থেকে ১.৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা ॥ আগে নির্দিষ্ট এইচএস কোড অনুযায়ী, বাংলাদেশের পোশাকের ওপর শুল্ক ছিল ১৫ শতাংশ। ফলে ৫ এপ্রিলের পর থেকে সেটি দাঁড়ায় ২৫ শতাংশে। নতুন করে বুধবার থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশী পণ্যে ৩৭ শতাংশ ‘দেশভিত্তিক বাড়তি শুল্ক’ আরোপ করায় মোট শুল্কহার গিয়ে ঠেকছে ৫২ শতাংশে।
উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশে তৈরি একটি পোশাকের মূল্য ১০ ডলার। ৫ এপ্রিলের আগেও সেটির ওপর ১৫ শতাংশ শুল্কে মূল্য দাঁড়াত ১১ দশমিক ৫০ ডলার। ৫ এপ্রিল থেকে ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্কে সেটি বেড়ে হয় ১২ দশমিক ৫০ ডলার। আর বুধবার থেকে নতুন ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপে সেই পণ্যের চূড়ান্ত মূল্য দাঁড়াবে ১৫ দশমিক ২০ ডলার।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারক ও সাধারণ ক্রেতাদের জন্য এই বাড়তি মূল্য একটি বড় চাপ হয়ে দাঁড়াবে। এর ফলে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেলে মার্কিন বাজারে পোশাকের চাহিদা কমে যেতে পারে। বিকল্প হিসেবে যেসব দেশের ওপর শুল্কহার তুলনামূলক কম, আমদানিকারকরা সেসব দেশ থেকে পণ্য আনতেই বেশি আগ্রহী হবেন। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পাল্টা শুল্কের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত বড় ধরনের সংকটে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি জানান, ইতোমধ্যে অনেক রপ্তানি আদেশ স্থগিত হয়েছে। পাশাপাশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো মূল্যছাড়ও দাবি করছে।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার জায়গা হলো, যেসব পোশাক পুরানো মূল্যে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে, সেগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ক্রেতারা নতুন শুল্ক পরিস্থিতির কারণে সেগুলো গ্রহণ করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, যদি সময়মতো ক্রেতারা ওই চালান গ্রহণ না করে, তাহলে পণ্য আটকে যাবে এবং রপ্তানির অর্থ দেশে ফিরবে না। এতে রপ্তানিকারকরা বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত সমাধানের জন্য তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্পষ্ট উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে সরকার সঠিক পথে এগোচ্ছে। এখন সময় এসেছে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষিতে যাওয়ার। নিছক চিঠিপত্র চালাচালি করে এই সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করা জরুরি, যাতে আলোচনার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় এবং দেশের রপ্তানি স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে।’
বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি ও জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান জানান, ‘আমাদের এখন পর্যন্ত কার্যাদেশে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে নতুন কার্যাদেশ পেতে দেরি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের কার্যাদেশ প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন ক্রেতারা বিকল্প হিসেবে মিসর, জর্ডান বা ভারতের দিকে ঝুঁকতে পারেন, যেহেতু সেসব দেশে শুল্কহার তুলনামূলক কম।’
এদিকে প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, ব্যবসা এখনো স্বাভাবিক আছে। বাংলাদেশের সুতি কাপড়ের পোশাক রপ্তানিতে সম্ভাবনা অনেক বেশি।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন ক্রেতার বরাত দিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় বলা হয়েছে, যদি বাংলাদেশের শুল্ক ৩৭ শতাংশেই থাকে এবং অন্যান্য দেশের ওপর শুল্ক কম থাকে, তাহলে ভারত, পাকিস্তান, মিসর ও কেনিয়ার কাছে বাংলাদেশ বাজার হারাতে পারে। আগামী কয়েক সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও বদলাতে পারে।
বিজিএমইএ সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানান, ‘কয়েকজন ক্রেতা পণ্য রপ্তানি স্থগিত রাখতে বলেছেন। ছোট ব্র্যান্ডগুলো রপ্তানিকারকদের ওপর পুরো শুল্ক বহনের চাপ দিচ্ছে, যা অযৌক্তিক। তিনি বলেন, শিল্পের পক্ষে এই শুল্ক বহন করা অত্যন্ত কঠিন। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো ৪০ লাখ পোশাকশ্রমিকের জীবিকা বিবেচনায় রেখে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিজিএমইএ’র শীর্ষ নেতাদের এক বৈঠকে অতিরিক্ত শুল্কারোপের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন সবাই। বিজিএমইএ’র ফোরাম প্যানেল লিডার মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, গত মার্চে তৈরি পোশাক খাতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও নতুন করে বিপদের মুখে পড়েছি আমরা। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বুঝে দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক জানান, রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চলমান কার্যাদেশ স্থগিত করার নির্দেশনা দিয়েছে। একইসঙ্গে মূল্যছাড়ের চাপও দিচ্ছে। যখন ন্যায্য দাম পাওয়ার লড়াই চলছে, তখন এই পরিস্থিতি খাতটির জন্য আরও চাপ তৈরি করছে।
বিজিএমইএ’র আরেক সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী, সেটি স্পষ্টভাবে জানতে হবে সরকারকে। অন্যথায় অনাকাক্সিক্ষত এই ‘সুনামি’ মোকাবিলা করা কঠিন হবে।
পাশাপাশি সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ মন্তব্য করেন, ভারত ও পাকিস্তানে তুলনামূলক কম শুল্ক আরোপ হওয়ায় মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে। বিশেষ করে যেসব কারখানা যুক্তরাষ্ট্রে বড় আকারে রপ্তানি করে, তারা ব্যাপক চাপে পড়বে।
বিজিএমইএ’র ফোরামের মহাসচিব ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী বলেন, গত শতকে এমন নজিরবিহীন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। প্রয়োজনে আমদানি বাড়িয়ে শুল্ক পুনর্বিবেচনার কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের অর্থনীতি রক্ষা করতে রপ্তানি খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এদিকে শুল্ক কর আরোপে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্যের রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়বে যা দেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি জানায়, পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বিকল্প উৎসে পণ্য সংগ্রহ করতে উৎসাহিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অনেক বাংলাদেশী পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে সরে আসতে বাধ্য হতে পারে। ফলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে শ্রমিকদের ওপর। কিছু কারখানাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে শ্রমজীবী মানুষদের জীবন-জীবিকা চরম ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বৈদেশিক আয়ের একটি বড় অংশ তৈরি পোশাক খাত থেকে অর্জিত হয়। এই খাতে প্রায় ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় সংগঠনটি। এ ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব যেন শ্রমিকের মজুরির ওপর না পড়ে, তার দায়ভার ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিতে হবে।
সম্প্রতি ফিশার ইনভেস্টমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান ধনকুবের কেন ফিশার এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা বোকামি, ভুল, চরম উদ্ধত, ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাকে অবজ্ঞা করা এবং সমস্যাই নয়- এমন একটি বিষয়কে ভুল যন্ত্র দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, এটা ব্যর্থ হবে এবং সমস্যা যতটা তার চেয়ে আতঙ্ক বেশি এবং এখান থেকে এটা অতিরঞ্জিত।
বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পোশাকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক আরোপ উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান। তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত মার্কিন ক্রেতাদের জীবনে বিঘœ ঘটাবে এবং মার্কিনিদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে।
নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করাটা একেবারেই উচিত নয়। এটি এমন এক পদক্ষেপ যা আমেরিকান ক্রেতাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে তোলে, আমাদের অধিক নিরাপত্তার জন্য কিছুই করে না।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। বিভিন্ন দেশের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্ককে বিশ্বের ইতিহাসের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ধাক্কা বলেও অভিহিত করেছেন ক্রুগম্যান। পল ক্রুগম্যান বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করাটা একেবারেই উচিত নয়। এটি এমন এক পদক্ষেপ যা আমেরিকান ক্রেতাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে তোলে, আমাদের অধিক নিরাপত্তার জন্য কিছুই করে না।
দেশের অন্যতম বৃহৎ ডেনিম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ ট্রাম্পের আদেশে পরিষ্কারভাবে এটিকে ‘অতিরিক্ত’ শুল্ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ৯ এপ্রিলের আগে আমরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারব না।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেছেন, দেশের উদ্ভূত সামগ্রিক বাণিজ্য মোকাবিলা করার জন্য পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখা দরকার। পাশাপাশি উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি করতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করা যেতে পারে, যা বিশ্ববাজারের পরিবর্তিত চাহিদা পূরণ করতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা এখনো পরিষ্কার নই। এটি ৩৭ শতাংশ হতে পারে, কিংবা যদি বর্তমান মোস্ট ফেভারড নেশন (এমএফএন) হারের সঙ্গে যোগ করা হয় তাহলে ৫২ শতাংশেরও বেশি হতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য ইতোমধ্যে অনেক পণ্যে ১৫ শতাংশের ওপরে আছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আইনুল ইসলাম মনে করেন, দেশের উদ্ভূত সামগ্রিক বাণিজ্য মোকাবিলা করার জন্য পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখা দরকার। পাশাপাশি উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি করতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করা যেতে পারে, যা বিশ্ববাজারের পরিবর্তিত চাহিদা পূরণ করতে পারে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক মনে করেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের স্থিতিস্থাপকতা ও অভিযোজন ক্ষমতার ওপর আস্থা রেখে বলা যায়, সক্রিয় ও কৌশলগত পদক্ষেপের মাধ্যমে চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সাহসের সঙ্গে।