ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশের চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে বিনিয়োগে আগ্রহী যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানসমূহ: প্রেস সচিব

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ৯ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২৩:১৫, ৯ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশের চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে বিনিয়োগে আগ্রহী যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানসমূহ: প্রেস সচিব

ছবিঃ সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে শেয়ার করেন এমনি একটি পোস্ট যার হেডিং ছিল 'বাংলাদেশের চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার উদ্যোগে ৫ কোটি ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানসমূহ'।

পোস্ট-এ বলা হয়,

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাম্প্রতিক লন্ডন সফরের সময় যুক্তরাজ্যভিত্তিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে চুরি হয়ে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে ৫ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে—এ তথ্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর যুক্তরাজ্যে একটি সফর করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের পাচারকৃত সম্পদ শনাক্ত ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে সমর্থন প্রদান।

সম্পদ পুনরুদ্ধার টাস্কফোর্সের প্রধান হিসেবে মংসুর ১৭ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের অন্যতম গন্তব্যস্থল হিসেবে যুক্তরাজ্যকে ধরা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “গত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনামলে আত্মসাৎকৃত ও বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার অন্তর্বর্তী সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত অগ্রাধিকার।”

এছাড়াও, উল্লেখ করা হয় যে এসব পাচার হওয়া অর্থের প্রধান উৎস ছিল ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অপব্যবহার।

লন্ডন সফরের সময় আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গভর্নর মনসুর জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ১১টি প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ১১টি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে, যাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তদন্তাধীন একটি মাত্র পরিবারই প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

একটি মামলায় দেখা গেছে, একটি ব্যাংকের মোট আমানতের প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে, যার ফলে সেই ব্যাংকটি কার্যত ধ্বংসের মুখে পড়ে।

মনসুর বলেন, যুক্তরাজ্য থেকেই বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার অনুসন্ধান ও পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হচ্ছে।

গত ১৯ মার্চ লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে মনসুর জানান, এই উদ্যোগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততার প্রক্রিয়া নির্ধারণে একটি Terms of Reference (ToR) এপ্রিল মাসের শেষ নাগাদ প্রকাশ করা হবে। সেমিনারে প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান ও প্রায় ১০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন আইনি বিশেষজ্ঞ, ফরেনসিক তদন্তকারী এবং লিটিগেশন ফান্ডাররা।

এই উদ্যোগে বিশ্বব্যাংকের Stolen Asset Recovery প্রোগ্রাম এবং International Centre for Asset Recovery (ICAR) কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে।

বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম লিটিগেশন ফান্ডার পৃথকভাবে গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে এবং বাংলাদেশের সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় জোরালো আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

তারা সম্মিলিতভাবে ৫ কোটি ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে, তবে শর্ত হিসেবে বলেছে যে, আইনগতভাবে টেকসই মামলা পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকতে হবে।

মনসুর তাদের বাংলাদেশে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যাতে তারা সম্ভাব্য মামলাগুলো পর্যালোচনা করে লিটিগেশন ফান্ডিং বিবেচনা করতে পারে।

এ সফরের সময় গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের All-Party Parliamentary Group on Corruption এবং যুক্তরাজ্যের Foreign, Commonwealth and Development Office-এর এশিয়াবিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট এমপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

তিনি বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে শক্তিশালীকরণ এবং চলমান ব্যাংকিং সংস্কারে যুক্তরাজ্যের অব্যাহত সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আইসিএআরের আইনি কৌশলগত সহায়তার জন্য তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ এবং যেসব দেশে পাচারকৃত সম্পদ লুকিয়ে রাখা হয়েছে, উভয়ের জন্যই সফল সম্পদ পুনরুদ্ধার একটি নৈতিক, রাজনৈতিক এবং আর্থিক প্রয়াস।”

এছাড়াও, যুক্তরাজ্যভিত্তিক কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা যুক্তরাজ্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে যাতে তারা বাংলাদেশের পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় আরও সহযোগিতা করে, যার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, যাতে তারা বুঝতে পারে যে তারা আর্থিক অপরাধ করে পার পাবে না।

মনসুর বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে একটি নতুন সম্পদ পুনরুদ্ধার আইন বর্তমানে খসড়া করা হচ্ছে।

ইমরান

আরো পড়ুন  

×