
ছবি: সংগৃহীত
ঠাকুরগাঁওয়ে একটি গ্রামে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে গ্রামবাসী। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি, গভীর রাতে কে বা কারা এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রায় নিয়মিতভাবেই দুই একদিন পরপরই ঘটছে আগুন লাগার ঘটনা। সবাই ঘুমালে বিশেষ করে ভোররাতেই এমনটা ঘটাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।
অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি নিয়মিতভাবে ঘটছে ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানার ১ নং রুহিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ঘণিমহেষপুর গ্রামে। রমজান মাসে বন্ধ থাকলেও গত তিন মাস ধরেই এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী ১৩-১৪টি পরিবার।
রুহিয়া উত্তরা বাজার জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম হামিদুর রহমান জানান, 'গত তিন মাস আগে কাদো রাম এর বাসা থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হয়। এ পর্যন্ত একটার পর একটা চলছে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা। আমরা সবাই একটা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। শেষ গত মঙ্গলবার ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হতেই চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে তৈমুরের বাসার আগুন নেভাতে সাহায্য করি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি, তবে ততক্ষণে খড়ের গাদা ও খড়ির ঘর পুড়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় তার।'
ভুক্তভোগী তৈমুর রহমান বলেন, 'লোকজন যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখনই এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আমার ও অন্যান্য গ্রামবাসীর এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসতে আসতে আমাদের অনেক কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।'
তৈমুর রহমানের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, 'সারাদিন কৃষিকাজ করে এভাবে রাত জেগে পাহারা দেয়া সম্ভব না। এটা আমাদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। এটা জ্বীন-ভূতের কাজ না, এটা মানুষেরই কাজ। আমরা বাচ্চাদের নিয়ে অনেক ভয়ে ভয়েই রাতে ঘরে থাকছি।'
আনোয়ার হোসেন ও ফারুখ হোসেন নামের স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, 'স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আমরা একটা সালিশের ব্যবস্থা করেছিলাম। তাতে কিছুদিন এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা বন্ধ ছিলো। তবে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর তা আবারো ঘটছে নিয়মিতভাবেই। আমাদের বাচ্চারা এখন ঘরে থাকতেই ভয় পায়। এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে থানায় মৌখিক অভিযোগ করলে থানা থেকে পুলিশ এসে উল্টো আমাদেরকেই বলে দুষ্কৃতিকারীদের ধরিয়ে দিতে।'
এছাড়া, একই গ্রামের কাদো রাম, খোরশেদ, মকবুল, দারাজ উদ্দিন, শহিদুলসহ প্রায় ১৫ জনের গত তিন মাসে প্রায় ১৫-১৬টি খড়ের গাদা, গোয়াল ঘর ও রান্নাঘরে আগুন লাগে। ফলে আগুন আতঙ্কে রাত-দিন পার করতে হচ্ছে গ্রামের প্রতিটি বাড়ির মানুষকে। কে বা কারা আগুন দিচ্ছে, রাত জেগে পাহারা দিয়েও তাদের ধরতে পারছে না গ্রামবাসী।'
রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল মুঠোফোনে জানান, 'রুহিয়া ঘনিমহেষপুর গ্রামের নিয়মিতভাবে আগুন লাগার ঘটনায় মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তবে কেউ এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা বিষয়টি সম্পর্কে জানার পর ইতোমধ্যেই সেখানে আমাদের টহল বাড়িয়েছি। এছাড়াও এ বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় তদন্ত করে দোষীদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'
ওই গ্রামে বেশিরভাগ আগুন লাগার ঘটনায় আগুনের উৎস পাওয়া গেলেও গভীর রাতে খড়ের গাদায়, রান্নাঘর ও গোয়াল ঘরে আগুন লাগার কারণ জানেন না ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা। তবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে খুব দ্রুতই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশা করছেন তারা।
এস, এম জসিম উদ্দিন/রাকিব