ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

হজ ফ্লাইট শুরু ২৯ এপ্রিল

বাড়ি ভাড়া চূড়ান্ত না হওয়ায় ১০ হাজার ৪৮৭ জনের হজযাত্রা নিয়ে শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ৮ এপ্রিল ২০২৫

বাড়ি ভাড়া চূড়ান্ত না হওয়ায় ১০ হাজার ৪৮৭ জনের হজযাত্রা নিয়ে শঙ্কা

আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে হজ ফ্লাইট

আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে হজ ফ্লাইট। এজন্য আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই হজের ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হবে। তবে মক্কায় ৭ হাজার ২৭৪ ও মদিনায় ৩ হাজার ২১৩ জনের বাড়িভাড়া এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় এই ১০ হাজার ৪৮৭ জনের হজযাত্রা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ওমরাহ পালনকারীদের এ সময়ের মধ্যে সৌদি থেকে দেশে ফিরতে হবে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। উপদেষ্টা বলেন, এজেন্সির দেওয়া তথ্য অনুসারে, ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত  মক্কায় ১ হাজার ১২৬ জন এবং মদিনায় ১ হাজার ৬৭ জন হজযাত্রীর নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে হোটেল/বাড়িভাড়ার রিকোয়েস্ট এখনো সাবমিট করা হয়নি।

বেসরকারি মাধ্যমের ৮১ হাজার ৯০০ হজযাত্রীর মধ্যে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মক্কায় ৭৪ হাজার ৬২৬ জন ও মদিনায় ৭৮ হাজার ৬৮৭ জনের বাড়িভাড়া নিশ্চিত হয়েছে এবং মক্কায় ৭ হাজার ২৭৪ জন এবং মদিনায় ৩ হাজার ২১৩ জন  মোট ১০ হাজার ৪৮৭ জন হজযাত্রীর বাড়িভাড়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি। 
তিনি আরও বলেন, আমার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হজ এজেন্সিসমূহকে অব্যাহতভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাড়িভাড়ার রিকোয়েস্ট সাবমিট করার জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। বাড়িভাড়া চুক্তি সম্পাদন করেনি এরূপ এজেন্সিসমূহকে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।
উপদেষ্টা বলেন, সোমবার পর্যন্ত এরূপ এজেন্সির সংখ্যা ছিল ২১, কিন্তু এখন সেটা ৯টিতে নেমে এসেছে। সৌদি সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসারে আগামী ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সকল হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উল্লিখিত সময়ের মধ্যেই সকল হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার জন্যও আমরা হজ এজেন্সিসমূহকে চিঠি দিয়েছি।

আমরা সকল এজেন্সিকে অনুরোধ জানাব তারা যেন হজযাত্রীদের হজব্রত পালনের স্বার্থে সৌদি সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাড়িভাড়ার রিকোয়েস্ট সাবমিট ও ওই রিকোয়েস্ট অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীদের সৌদি গমনের ক্ষেত্রে আশঙ্কা থেকে যায়।
তিনি আরও বলেন, হজযাত্রীদের প্রতি কতিপয় হজ এজেন্সির কমিটমেন্ট ও দায়বদ্ধতার অভাবে এখনো বেসরকারি মাধ্যমের ১০ হাজার ৪৮৭ হজযাত্রীকে নিয়ে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। আমরা আপনাদের মাধ্যমে স্পষ্ট করে বলতে চাই- কোনো এজেন্সির অবহেলা বা গাফিলতির কারণে একজন হজযাত্রীও যদি হজ করতে না পারে সে দায় সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নিতে হবে। এ দায় কোনোভাবেই ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় বহন করবে না। কোনো এজেন্সির অবহেলা ও দায়িত্বহীনতাকে ধর্ম মন্ত্রণালয় বরদাস্ত করবে না। 
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এ বছর সরকারি মাধ্যমে নিবন্ধিত ৫ হাজার ২০০ জন হজযাত্রীর জন্য আমরা সকল ধরনের আনুষ্ঠানিকতা তথা-মিনায় ও আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ ও ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, বাড়ি/হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি, পরিবহন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনেক আগেই সম্পন্ন করেছি।

এখন তাদের ভিসার কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং আমরা আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হবে, ইনশা আল্লাহ আমাদের হজযাত্রীরা আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে হজের উদ্দেশ্যে ফ্লাইট শিডিউল মোতাবেক সৌদি আরব গমন করবেন।
তিনি বলেন, এ বছর আমাদের হজযাত্রীদের একটি বিরাট অংশ অর্থাৎ ৮১ হাজার ৯০০ জন হজযাত্রী বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজব্রত পালনের জন্য নিবন্ধন করেছেন। সৌদি সরকারের এজেন্সি প্রতি ন্যূনতম হজযাত্রীর বাধ্যবাধকতার কারণে মোট ৭৫৩টি এজেন্সির অধীনে নিবন্ধিত এসব হজযাত্রী ৭০টি লিড এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালন করবেন।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান, কঠোর মনিটরিং ও ফলো-আপ তৎপরতার কারণে সৌদি সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় ১৪ ফেব্রুয়ারির ২০২৫ তারিখের মধ্যে বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের জন্য কেবল মিনা ও আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ গ্রহণ এবং ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি-এই দুটি অ্যাক্টিভিটি সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে সৌদি সরকার মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়া ও পরিবহন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির সময় ২৫ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে এবং তারা এ বিষয়ে কঠোর সতর্ক বার্তা জারি কর।
যে, ২৫ মার্চের মধ্যে অনলাইনে নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি করতে সক্ষম না হলে সংশ্লিষ্ট হাজযাত্রীরা ২০২৫ সালে হজ করতে পারবেন না। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ রাত ৩টা পর্যন্ত আমাদের কর্মকর্তারা অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তারপরও কিছুসংখ্যক এজেন্সি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে বাড়িভাড়ার রিকোয়েস্টই সাবমিট করেনি।

সৌদি সরকার পুনরায় ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিন সময় বৃদ্ধি করে। আমার সচিব ঈদের ছুটির মধ্যে সব হজ এজেন্সি ও এয়ারলাইন্সসমূহকে নিয়ে সভা করেন এবং এ সভায় এজেন্সিসমূহকে যথাসময়ে নুসুক মাসার প্ল্যটফর্মের মাধ্যমে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দেন। গত ৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩ টায় প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ হয়ে যায়। এর একদিন পর ৫ এপ্রিল সৌদি সরকার পুনরায় প্ল্যাটফর্ম খুলে দিয়েছেন। তবে এটি যে কোনো সময় বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
এজেন্সির গাফিলতির কারণে কেউ হজে যেতে না পারলে কি ধরনের পদক্ষেপ নেবেন? সাংবাদিকদের এ উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, হজ এজেন্সির অব্যবস্থাপনার কারণে কেউ যদি কোনো হজে যেতে না পারেন তাহলে আমরা তাদের লাইসেন্স বাতিল করে দেব।

এদিকে চলতি বছর পবিত্র ওমরাহ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত যেসব বিদেশী মুসল্লি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন, তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে দেশটির হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওমরাহ পালনকারীদের তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার শেষ তারিখ আগামী ২৯ এপ্রিল নির্ধারণ করেছে হজ মন্ত্রণালয়। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেট।এ নির্দেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়াও সর্বোচ্চ ১ লাখ রিয়াল জরিমানা হতে পারে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বিদেশী ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি আরব ত্যাগের শেষ তারিখ হিসেবে ১ জিলকদ অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল নির্ধারণ করেছে। আগামী ১ জিলকদ থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক হজ মৌসুমের প্রস্তুতি হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে সৌদির এই মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ১৩ এপ্রিল তথা ১৫ শাওয়াল পর্যন্ত পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য ওমরাহ যাত্রীরা সৌদি আরবে প্রবেশ করতে পারবেন।

মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, ওমরাহ যাত্রীদের ফিরে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত তারিখের বেশি সময় ধরে সৌদিতে অবস্থান করলে তা আইনগত শাস্তির বিধানের মধ্যে পড়বে। এ ছাড়া ব্যক্তিদের পাশাপাশি ওমরাহ পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হজযাত্রীদের প্রস্থান সম্পর্কিত নিয়ম এবং নির্দেশাবলি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সৌদি আরবের এই মন্ত্রণালয় সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে ফিরে যেতে যে কোনো ধরনের বিলম্ব আইনের লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচিত হবে। কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃক হজযাত্রীদের অতিরিক্ত সময় ধরে অবস্থানের বিষয়ে রিপোর্ট না করলে লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়াও সর্বোচ্চ ১ লাখ রিয়াল জরিমানা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, হজের সময় যেন হজযাত্রীরা নির্বিঘেœ পবিত্র মক্কা ও মদিনায় পৌঁছাতে পারেন এবং সেখানে অবস্থান করতে পারেন সেজন্য ওমরাহকারীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সৌদি আরব ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে।
হজের সময় মক্কার কাবা শরীফে ২০ লাখেরও বেশি মুসল্লির সমাগম হয়। এছাড়া বছরের যে কোনো সময় পবিত্র ওমরাহ পালন করা গেলেও পবিত্র হজ করতে হয় আরবি বর্ষপঞ্জিকার শেষ মাস জিলহজ মাসে।

×