
ছবি: সংগৃহীত
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ফের নতুন করে সহিংসতার বিস্ফোরণ ঘটেছে। গতকাল (৭ এপ্রিল) চরবংশীর খাসেরহাট বাজার এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার পর আজ (৮ এপ্রিল) সকালে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়ে ৩টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ১০টি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ২ নম্বর চরবংশী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা মেহেদী কবিরাজ, রুহুল আমিন খাঁ ও আরিফ সরদারের বাড়িতে একযোগে হামলা চালায় কৃষক দলের সদ্য সাবেক সদস্য সচিব শামীম গাজীর অনুসারীরা। এ সময় তারা গাজী বাড়িসহ ৩টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং ১০টি বাড়ি ও বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। এতে এলাকায় চরম উত্তেজনা ও নারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সোমবার সংঘর্ষে নিহত ফ্রান্সফেরত প্রবাসী সাইজ উদ্দিন দেওয়ান ছিলেন শামীম গাজীর পক্ষের সমর্থক। তার মৃত্যুর জেরে আজকের এ প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেক পরিবার এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, 'খাসেরহাট এলাকায় সহিংসতা থামছে না। আজকের অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কেউ মামলা করেনি, তবে তদন্ত চলছে এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।'
কৃষক দল নেতা শামীম গাজী বলেন, 'সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ মিথ্যা। রাজনৈতিক কারণে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে প্রতিপক্ষের লোকজন।'
মেহেদী কবিরাজ ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তাই অনেক চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বিএনপির স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে দীর্ঘদিনের আধিপত্য বিস্তার, মাছঘাট ও চরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ সহিংসতার সূচনা হয়। দলীয় কমিটি বিলুপ্ত হলেও মাঠপর্যায়ে বিরোধ ও ক্ষমতা নিয়ে টানাপোড়েন চলমান থাকায় সংঘর্ষ থামছে না।
এদিকে, খাসেরহাটের এই ধারাবাহিক সহিংসতায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তারা বক্তব্য, 'আমরা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি হতে চাই না। নিরাপত্তা চাই, শান্তি চাই।'
এখন পুরো এলাকার পরিস্থিতি থমথমে, স্থানীয়দের চোখে-মুখে বিরাজ করছে আতঙ্ক। রাজনৈতিক বিরোধে এই সহিংসতা রোধে প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়াই এখন সময়ের দাবি।
প্রদীপ কুমার রায়/রাকিব