
নির্বাচনী আচরণবিধির খসড়া প্রায় চূড়ান্ত
নির্বাচনী আচরণবিধির খসড়া প্রায় চূড়ান্ত। এতে নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার থাকছে না। এখন এটি অনুমোদনের জন্য কমিশনে জমা দেওয়া হবে। অনুমোদনের পর তা সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হবে এবং এই আচরণবিধি মানাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সর্বোচ্চ কঠোর হবে। সোমবার দুপুরে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আচরণ বিধিমালার খসড়া করার জন্য বসেছিলাম। খসড়াটি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। চূড়ান্ত করার পর এটি কমিশনে প্লেস করব। এরপর কমিশন তা চূড়ান্ত করবে। সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও নতুন নতুন কিছু বিষয় তা অন্তর্ভুক্ত করব। আশা করি চমৎকার একটি আচরণবিধি হবে।
নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার রাখছেন নাকি রাখতে চাচ্ছেন না-এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব পোস্টার না রাখা। সে প্রস্তাবকে আমরা ভালোই মনে করছি। আচরণ বিধিমালায় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের বিষয়টিও আছে। গুজব যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেগুলোও আমরা ভাবছি। আমরা সর্বোচ্চ কঠোরতার জন্য যে টুলসগুলো আছে, সেগুলোকে শক্তিশালী করব। দুইশ টাকা, পাঁচশ টাকা জরিমানার বিষয়গুলো আরও বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে। এ ছাড়া আচরণবিধির বাইরেও পেনাল কোড আছে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের পোস্টারিংয়ে ছেয়ে যায় গ্রাম থেকে শহরের রাস্তাঘাট, অলি-গলি ও দেওয়াল। যার ফলে নষ্ট হয় সৌন্দর্য। এবার এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায় নির্বাচন কমিশন। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে যেন গ্রামীণ পর্যায়েও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে, সবাই যেন নির্বিঘেœ যার যার প্রচার চালাতে পারেন সেভাবেই আচরণবিধি করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সংস্কার কমিশনের সুপারিশও সেরকম।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী ব্যয় ন্যূনতম রেখে যাতে শৃঙ্খলা বিঘিœত না হয়, গ্রামীণ পর্যায়ে একেবারে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে যেন প্রচার-প্রচারণা করতে পারে, সে ধরনের একটা মনোভাব নিয়ে করতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে আরপিও যেখানে সংশোধন করার প্রয়োজন হবে সেখানে সংশোধন করা হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নতুন দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের যে বিজ্ঞপ্তি এতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নামে একটি সংগঠন রিট করেছে। এটা শুধু তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। দুই একটি দল আবেদন করেছে। এখন ২০ এপ্রিলের মধ্যে যদি অনেক দল আবেদন করে তাহলে একরকম হবে।
তবে ২০ তারিখ আসলে বোঝা যাবে সময় বাড়ানো হবে কি না। একটি দল আবেদন করেছে। আমাদের ধারণা ২০ এপ্রিলের মধ্যে বেশ ক’টি দল আবেদন করার জন্য প্রস্তুত। আবেদন করতে হবে বর্তমান আইন অনুযায়ী। এজন্য অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকে বসব আমরা।
আরও এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইনে করণিক ভুল সংশোধনের জন্য করা প্রস্তাবটা আমরা পাঠিয়েছিলাম। অনুমোদন এখনো কেবিনেট থেকে পাইনি। না পেলে বিদ্যমান আইনেই সংসদীয় সীমানা নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের প্রায় সবগুলোই আমরা আচরণবিধির খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করেছি।
আচরণবিধি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এটা একটা ভালো প্রশ্ন। আমরা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অংশীজনকে সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকে বসব। পরিস্থিতিই আমাদের বলবে, কী করতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমাদের তো প্ল্যান আছে কবে কি করব। এই যে আমরা মিটিং করছি। এটাও প্ল্যানিংয়ের অংশ।
এনআইডির বিষয়ে প্রতারিত না হতে ইসির আহ্বান ॥ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিষয়ে প্রলুব্ধ হয়ে প্রতারিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার গণমাধ্যমে ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলমের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানিয়েছে ইসি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর সংখ্যক ফেসবুক পেজ/ফেক আইডি হতে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রলুব্ধ করে এনআইডি সংক্রান্ত সেবা দেওয়ার নামে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে; যা অনাকাক্সিক্ষত।
প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় পরিচালিত পেজ লিঙ্ক এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও আইডিইএ প্রকল্প (২য় পর্যায়) পরিচালিত পেজ লিঙ্ক নামে দুইটি পেজে ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যাদি ও ভিডিও কন্টেন্ট নিয়মিত প্রকাশ করা হয়। এ দুইটি পেজ ছাড়া অন্য কোনো ফেসবুক পেজে এনআইডি সংক্রান্ত সেবা গ্রহণের বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে প্রতারিত না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।