ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৭ চৈত্র ১৪৩১

রাঙ্গাবালীর আগুন মুখা নদীতে হারিয়ে যাবে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মানচিত্র

আঃ রহিম গাজী, রাঙ্গাবালী সংবাদদাতা: (পটুয়াখালী)

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ৭ এপ্রিল ২০২৫

রাঙ্গাবালীর আগুন মুখা নদীতে হারিয়ে যাবে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মানচিত্র

ছবি: সংগৃহীত

নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙছে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন। অন্য দিকে ছোট হতে চলেছে এই ইউনিয়নের আয়তন। ভিটা-বাড়ি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে মাথা গুজবার ঠাঁই খুঁজছেন বেড়িবাঁধে ও আশ্রায়ন কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া ইউনিয়নবাসী। এমন ঘটনা ঘটিয়েছে সর্বনাশা আগুন মুখা নদী।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন। চার পাশে নদী বেষ্টিত ইউনিয়নটিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনের সাথে যুদ্ধ করেও পরাজিত হচ্ছে এখানকার মানুষ। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু রক্ষা করতে পারছে না অনেকে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চালিতাবুনিয়া, উত্তর চালিতাবুনিয়া, মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা ও গোলবুনিয়াসহ অনেকগুলো গ্রাম নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে।

ভিটেমাটি হারিয়ে উচ্চবিত্তরা হয়েছেন মধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্ত হয়েছেন দিনমজুর আর দিনমজুর হয়েছেন নিঃস্ব। এদের মধ্যে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন লতার চরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেঁড়িবাধের ওপর। থাকার জায়গা না থাকায় অনেকে হয়েছেন বাস্তুহারা।

ভাঙন কবলিত এই জনপদের বাসিন্দাদের জানমালের নিরাপত্তায় ও নদী ভাঙন থেকে সুরক্ষায় দৃশ্যমান কোন উদ্যোগের নজির চোখে পড়েনি এখনও। এতে ফসলি জমি এবং ভিটেমাটি হারিয়ে কেউ হয়েছে ভূমিহীন আর কেউ হয়েছে নিঃস্ব। শুধু নদী ভাঙন নয়, নানা সময়ে হওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতি এবং ঝুঁকির মধ্যে থাকেন এই ইউনিয়নের নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। অবহেলিত এসব মানুষদের রক্ষায় অতি শীঘ্রই সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘ পরিকল্পনা করে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করছেন সচেতনমহল।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে চালিতাবুনিয়ায় নদী ভাঙন শুরু হয়। এ পর্যন্ত ইউনিয়নটির মূল ভূখণ্ডের প্রায় তিনএকাংশ বিলীন হয়েছে।

একটু আবহওয়া খারাপ হলে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের অনেক গ্রাম। অনেকের বাড়িঘর তলিয়ে যায়, থাকে না রান্নার ব‍্যাবস্থা। তখন অনেকের না খেয়ে থাকতে হয়।

ইউনিয়নের বাসিন্দারা বলেন, এখনই যদি নদী ভাঙ্গনের দীর্ঘমেয়াদী বা স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ না করা হয় তাহলে এই এলাকার মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না এবং চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আশ্রয় নেয়ার জন্য যে একটি সাইক্লোন সেল্টার ছিল সেটিও বিলীন হয়ে গেছে। টেকসই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ না থাকায় দুর্যোগের সময় নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় জনসাধারণের। একদিকে বেড়িবাঁধ তৈরি   করে অন‍্য দিকে নদীর স্রোতে ভেঙে যায়। 

এখনই নদী ভাঙ্গন রোধের জন‍্য দ্বীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। তা নাহলে রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে চালাতাবুনিয়া ইউনিয়নের মানচিত্র মুছে যাবে। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব যাহাতে এই চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গন রোধের ব‍্যাবস্থা গ্রহণ করেন।

চালিতাবুনিয়ার ইউনিয়নের প‍্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ বিপ্লব হাওলাদার বলেন, এ বিষয়ে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তারা আমাদের আশ্বস্ততা দিয়ে আসতেছে, এবং তৎকালীন ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মোঃ মহিবুর রহমান মহিবকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু তিনি নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। এভাবে নদী ভাঙ্গতে থাকলে অচিরেই রাঙ্গাবালী উপজেলার মানচিত্র থেকে মুছে যাবে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন। আমি চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের জনগণের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করব, নদী ভাঙ্গন রোধে তারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে ইউনিয়নবাসীকে রক্ষা করেন।

এ ব‍্যাপারে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের এস ও  মো: বাদশা আলম দৈনিক জনকনণ্ঠকে বলেন, "চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গন রোধের প্রকল্পের কাজটি অনুমোদনের জন‍্য কর্তৃপক্ষর কাছে পাঠানো হয়েছে, অনুমোদনটি পাশ হলে কাজ শুরু করা হবে।

আবীর

আরো পড়ুন  

×