ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১

যেসব ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে ভারত

প্রকাশিত: ১১:০৭, ৭ এপ্রিল ২০২৫

যেসব ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে ভারত

ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই ‘গণহত্যার বিচার’ শুরু হয়েছে বলে জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এমন একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি ভারতে আশ্রয় নেওয়ায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনাকে ভারতের আশ্রয় দেওয়া দুই দেশের সম্পর্ককে জটিল সমীকরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে চিঠি দিয়ে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইলেও ভারত তার কোনো জবাব দেয়নি। উল্টো ভারতের কিছু অংশে তাকে আশ্রয় ও রাজনৈতিক প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একান্ত বৈঠক হয়। অনেকেই ধারণা করছিলেন এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে সম্পর্কের বরফ গলবে, তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। বিশ্লেষকদের মতে, সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত থাকলেও মূল চ্যালেঞ্জ শেখ হাসিনার ইস্যুতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এম শহিদুজ্জামান বলেন, “ভারতের প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী হাসিনাকে ফেরত পাঠানো দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে রাজনৈতিক কারণে ভারত তাকে ফেরত দেবে না বলেই আমি মনে করি।”

তিনি আরও বলেন, “আগে যেসব একতরফা সুবিধা ভারত পেত, এখন সেসব আর পাবে না। বাংলাদেশও চীনের মতো বিকল্প কৌশলগত অংশীদার খুঁজতে বাধ্য হবে।”

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস বলেন, “শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে কিছু বিতর্ক থাকলেও অর্থনীতি, মানুষে-মানুষে সংযোগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার মতো ইস্যুতে আলোচনা বন্ধ করা ঠিক নয়। বিশেষ করে সার্কের মতো আঞ্চলিক ফোরামকে সক্রিয় করতে হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রক্ষা জরুরি।”

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের পরিচালক ড. এম জসিম উদ্দিন বলেন, “ড. ইউনূস ও মোদির বৈঠক ছিল কূটনৈতিক বিজয়। এতে ভারত সরকার পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত একজনকে আশ্রয় দেওয়া আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে অগ্রহণযোগ্য। শেখ হাসিনার ভারতের অবস্থান ও তার কর্মকাণ্ড সম্পর্ক উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয়েছে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করলেও আমদানি করেছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

এছাড়া ভারতের জন্য একটা বড় দুশ্চিন্তার ব্যাপার হলো, শিলিগুড়ি করিডর বা চিকেন নেক এলাকা। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে একটা বিকল্প যোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখাও ভারত জরুরি মনে করে। আছে সেভেন সিস্টার্স নিরাপত্তা ইস্যুও। ফলে ভারত চায় না এগুলো নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বন্ধ থাকুক।

অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্যও সবচেয়ে নিকটতম ও বড় প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের শীতলতা কাটানো উচিত। বিশেষ করে পানি চুক্তি নবায়ন ও তিস্তা চুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রয়েছে। এছাড়া যত দ্রুত সম্ভব ভিসা জটিলতাও কাটাতে চায় বাংলাদেশ। বাণিজ্য বৈষম্যও কমিয়ে আনাও জরুরি। ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানিও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আশিক

×