ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১

দরজায় ফুটা ছিল, ওরা যেকোন সময় ভেতরে দেখতে পারত, ঢুকেই পিটাত শেয়ার করলেন প্রেস সচিব

প্রকাশিত: ০০:১৬, ৭ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০০:১৯, ৭ এপ্রিল ২০২৫

দরজায় ফুটা ছিল, ওরা যেকোন সময় ভেতরে দেখতে পারত, ঢুকেই পিটাত শেয়ার করলেন প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজ এক ফেসবুক পোস্টে নাবিলা ইদ্রিস নামের এক ব্যাক্তির পোস্ট শেয়ার  করেন। পোস্টকৃত ব্যাক্তির প্রোফাইল পর্যবেক্ষণে দেখা যায় তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

শফিকুল আলমের শেয়ারকৃত পোস্ট থেকে জানা যায়, ইদ্রিস তার ব্যাক্তিগত ফেসবুক পোস্টে লিখেন, শুনতে হাস্যকর লাগলেও 'বাথরুম' আমাদের অনুসন্ধানের অন্যতম অংশ। বন্দিদের সার্বক্ষণিক চোখ বেঁধে রাখলেও, বাথরুমে অধিকাংশ সময়ই চোখ খুলে দেয়া হত বিধায় বাথরুমের লোকেশান এবং ডিজাইন দিয়ে আমরা অনেক ক্ষেত্রে গোপন বন্দিশালা চিহ্নিত করি। এর সাথে যোগ হয় বাথরুম শিডিউল আর গার্ড বিহেভিয়ার।

"আমাদের শুধু অমুক আর অমুক সময় বাথরুমে যেতে দিত উল্লেখ করে তিনি আরো লিখেন , এছাড়া দিত না", "দরজা বন্ধ করতে দিত না", "দরজায় ফুটা ছিল, ওরা যে কোন সময় ভেতরে দেখতে পারত", "বাথরুমে সময় দিত সর্বোচ্চ ৩ মিনিট, এর পরেই ওরা ঢুকে পড়ত আর পিটাত", "একদিন আমি বাথরুমে বসে থাকা অবস্থাতেই গার্ড ঢুকে আমাকে লাঠি দিয়ে পিটায়, কেন আমার কয়েক মিনিট বেশি সময় লেগেছে, এই দোষে", "আমার গা দিয়ে এত দুর্গন্ধ বের হত যে ওরাই আমার সেলের পাশে দাঁড়াত না", "ইন্টারোগেশন রুমে নিলে কড়া করে এয়ার ফ্রেশনার দিত", "টর্চারের চোটে--কিছু মনে করবেন না, ম্যাডাম--আমি প্রস্রাব করে ফেলি", "সিসিটিভি ছিল সেলের সামনে, তাই আমি সেলের ভেতরের প্যান ব্যবহার করলে ওরা সবই দেখতে পারত কিন্তু আমার এছাড়া কোন উপায় ছিল না", "আমার ছেলেকে কাশিমপুরে যেদিন দেখতে যেতাম সেদিন আমি সারাদিন পানি খেতাম না ইন কেস পথে বাথরুম লাগে, আমি মহিলা মানুষ, বয়স হয়েছে, বুঝেনই তো" ... এমন শত শত জবানবন্দি শুনেছি আমরা।

তিনি তার পোস্টে আরো উল্লেখ করেন রিসেন্টলি এসব জবানবন্দির কোডিং স্কিম তৈরি করতে গিয়ে আমার বারবার মিল্গ্র্যাম এক্সপেরিমেন্ট মনে পড়েছে। মনোবিজ্ঞানী স্ট্যানলি মিল্গ্র্যাম ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গবেষণাটি করেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের একজন ব্যক্তিকে প্রশ্ন করতে বলা হয়। যতবার ব্যক্তিটি ভুল উত্তর দেয়, ততবার অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় উত্তরদাতাকে ইলেক্ট্রিক শক দিতে। (অংশগ্রহণকারীর অজান্তে উত্তরদাতা আসলে কোন শক খাচ্ছিল না, কষ্টের অভিনয় করছিল মাত্র।) এক্সপেরিমেন্টে দেখা যায় যে অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী ভুল উত্তরদাতার নিদারুণ আর্তনাদ উপেক্ষা করে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শক দিতেই থাকে, দিতেই থাকে, এমনকি সর্বোচ্চ লেভেল পর্যন্তও দিতেই থাকে। মিল্গ্র্যাম এক্সপেরিমেন্ট দেখিয়েছিল সাধারণ মানুষও অথোরিটির চাপে কেমন অমানবিক কাজ করতে পারে।

আওয়ামী জাহেলিয়াতে কত এভারেজ মানুষ অমানুষ হয়ে গিয়েছিল খেয়াল করেন। যেসব মিলিটারি অফিসার এবং পুলিশের বড় কর্মকর্তারা হাসিনা বা তারেক সিদ্দিকী থেকে সরাসরি নির্দেশ পেত এবং আজ্ঞা পালন করত। যেসব জুনিয়র কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা এই ডার্টি ওয়ার্কগুলো নিজ হাতে করত। যেসব আর্কিটেক্টরা এই বন্দিশালাগুলো ডিজাইন করেছে, যেসব ডাক্তার এবং মেডিকেল এসিস্ট্যান্টরা সেখানে সার্ভ করেছে... লিস্টটা লম্বা।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি ৫ই আগস্টের পূর্বের অনেক বিহেভিয়ারই মেন্টালি র‍্যাশনালাইজ করতে পারি। কারণ ওই যে - মিল্গ্রাম দেখিয়েছে অথোরিটির চাপে মানুষ অনেক অমানবিক কাজই করতে পারে। তবে যেটা আমি এককেরেই র‍্যাশনালাইজ করতে পারিনা তা হল ৫ই আগস্টের এত মাস পরে গুমের মত বীভৎস ক্রাইমের জন্য অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে না দেওয়া। এই ট্র্যাজিক ক্রাইমটা আমি বুঝি না। ... দেখি আরও পড়াশোনা করতে থাকি। একদিন হয়ত এই সাইকোলজিও বুঝব।

ফুয়াদ

×