ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

ফারাক্কার ভাটিতে নির্মিত হবে ২৫ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ

জাহিদ হাসান মাহমুদ মিমপা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ৬ এপ্রিল ২০২৫

ফারাক্কার ভাটিতে নির্মিত হবে ২৫ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ

ভারতের গঙ্গা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করেছে পদ্মা নদী হয়ে। নদীটিতে প্রতি বছর বর্ষাসহ শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙন দেখা দেয়। এতে করে পদ্মা তীরবর্তী মানুষ ভিটামাটিসহ আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়। ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর অন্যতম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ বাজার থেকে শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়নের বোগলাউড়ি পর্যন্ত অঞ্চলটি। এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ‘পদ্মা নদীর তীর রক্ষা’ নামে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে বাঁধ ও প্রায় ৪ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চর অপসারণ করা হবে। ফলে নৌ-যোগাযোগ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভাঙনের হুমকিতে থাকা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, কৃষকের আবাদি জমি রক্ষাসহ মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন ঘটবে। আরও জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর, মনাকষা এলাকায় পদ্মা নদীর বাম তীরে ১১ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের নারায়ণপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা এলাকায় ১০ দশমিক ৮৮০ কিলোমিটার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চর আশাড়িয়াদহ এলাকায় পদ্মা নদীর ডান তীরে ৩ দশমিক ৭৬০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণের কাজ করা হবে। এছাড়া শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে ৪ দশমিক ২৫০ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হবে ।

পদ্মা তীরবর্তী বাসিন্দা আবুল মুমিন বলেন, জেলায় তিনটি নদী আছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙন হয় পদ্মায়। বছরের পর বছর নদী ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হলে পদ্মা পাড়ের মানুষ স্বস্তি পাবেন ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, প্রকল্পের আওতায় সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২৫ কিলোমিটার পদ্মা নদীর এলাকাজুড়ে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ৪ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই প্রকল্পে। আমরা আশা করছি, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে বাকি সব ধাপ সম্পন্ন করতে পারব। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এ এলাকার লোকজন স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের (উন্নয়ন অনুবিভাগ) অতিরিক্ত সচিব ড. আ ন ম বজলুর রশীদ সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের দোভাগী-ঝাইলপাড়া গ্রামে পদ্মা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন, পদ্মা নদীর ভাঙনের কারণে এই এলাকাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে নদী ভাঙনের কারণে খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। পদ্মা নদীর অন্যান্য এলাকায় পাড় বেঁধে ফেলা হয়েছে। বাকি প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এমনকি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশাবাদী, সরকার অনুমোদন দিলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা যাবে । নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ হলে স্থায়ীভাবে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি রক্ষায় প্রকল্পটি প্রয়োজন আছে বলেও মনে করেন অতিরিক্ত সচিব ড. আ ন ম বজলুর রশীদ।

মুমু

আরো পড়ুন  

×