ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা

যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের আয়োজনই সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ৪ এপ্রিল ২০২৫

যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের আয়োজনই সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা তাঁর সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমি জনগণকে আশ্বস্ত করেছি, একবার নির্বাচন পরিচালনায় আমাদের ম্যান্ডেট পূরণ হয়ে গেলে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হলে, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করব।’
শুক্রবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণদানকালে প্রধান উপদেষ্টা এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি নাগরিকেরÑ সে নারী হোক কিংবা ধর্মীয় সংখ্যালঘু অথবা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য, প্রত্যেকের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাব।  
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের জন্য বলিষ্ঠ ও সুদূরপ্রসারী সংস্কার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সুশাসন, দুর্নীতি দমন এবং অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা যে সংস্কারের পরিকল্পনা করেছি, তার মূলে রয়েছে এগুলোই। জনগণের মালিকানা, জবাবদিহিতা ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগ, নির্বাচনী ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করে। 
প্র্রধান উপদেষ্টা বলেন, কমিশনগুলো ইতোমধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে, যা সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। স্বতন্ত্র কমিশনগুলোর পেশ করা সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের জন্য আমি আমার নেতৃত্বে এবং ছয়টি কমিশনের প্রধানদের সমন্বয়ে সাত সদস্যের একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করেছি। গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম ও নারী অধিকারের বিষয়ে নীতি সুপারিশ করতে আমরা সম্প্রতি চারটি অতিরিক্ত কমিশন গঠন করেছি।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে একটি বর্বর সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস লড়াইয়ে গণহত্যায় লাখ লাখ সাধারণ নারী-পুরুষ, শিশু ও যুবক সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ স্বীকার করে। আমাদের জনগণ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত এবং মুক্ত সমাজের আকাক্সক্ষা করেছিল, যেখানে প্রতিটি সাধারণ মানুষ তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। 
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দুঃখজনকভাবে, গত ১৫ বছরের সময়কালে, আমাদের জনগণ, বিশেষ করে তরুণরা ক্রমান্বয়ে তাদের স্থান এবং অধিকারকে সঙ্কুচিত হতে দেখেছে। তারা প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গভীর অবক্ষয় প্রত্যক্ষ করেছে এবং নাগরিক অধিকার পদদলিত হয়েছে। ১১৮ শিশুসহ প্রায় ২ হাজার নিরীহ মানুষ, যাদের বেশিরভাগই যুবক, তাদের জীবনের বিনিময়ে নৃশংস কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটায় সাধারণ মানুষ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তার ইতিহাসে পুনর্জন্ম প্রত্যক্ষ করেছে। শেখ হাসিনার দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করা ছাত্র  নেতারা ইতিহাসের এই ক্রান্তিলগ্নে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমার কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। আমি আমাদের জনগণের স্বার্থে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছি।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে সাম্প্রতিক বিধ্বংসী ভূমিকম্পের ফলে প্রাণহানির ঘটনায় থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের সরকার এবং জনগণের প্রতি আন্তরিক শোক ও গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি প্রিয়জন হারানো পরিবারগুলোর প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে থাই প্রধানমন্ত্রী এবং সম্মেলনের চেয়ারপারসন পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, বিমসটেক মহাসচিব রাষ্ট্রদূত ইন্দ্র মনি পান্ডে এবং বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন  

×