
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে বৈঠক করেন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশটিতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইলেন। একইসঙ্গে ভারতে অবস্থানকালে শেখ হাসিনার বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য নিয়ে আপত্তিও জানিয়েছেন। এই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে অবস্থান নেওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শপথ নেন। এর পর থেকেই নানা ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। ভারত সরকারও শুরু থেকেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশকে টানা আক্রমণ করতে থাকে। বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ভারত বিরোধিতা চরমে পৌঁছায়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দ্ইু নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সরকারপ্রধানের বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চাওয়া হয়েছিল। নানা প্রচেষ্টার পরও তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এবার বিমসটেক সম্মেলনের বেশ কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ। শুরুতে আগ্রহ দেখায়নি ভারত।
কিন্তু সম্মেলন শুরুর আগেরদিন ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সম্মতি জানিয়ে চিঠি দেয় দেশটি। অবশেষে সেই প্রত্যাশার সফল বাস্তবায়ন ঘটেছে থাইল্যান্ডের বিমসটেক সম্মেলনে। সুযোগ পেয়েই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের চাওয়াগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরলেন ভারতের সরকারপ্রধানের কাছে।
শুক্রবার দুপুরে থাইল্যান্ডের বিমসটেক সামিটের সাইডলাইনে দুই সরকারপ্রধান পারস্পরিক বৈঠকে মিলিত হন। তখনই সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে। শুরুতেই দুইজন কুশল বিনিময় করেন। এর পর দুই সরকারপ্রধানের প্রায় ৪০ মিনিটের বৈঠক হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থাই প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে নৌশভোজে পাশাপাশি আসনে বসেছিলেন দুই শীর্ষ নেতা।
তখনো একান্তে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল তাদের। দুই দেশের প্রধানদের মধ্যে এই বৈঠক নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ নিশ্চিত করে বৈঠকের বিষয়ে জানাতে পারেনি। তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এই প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এই বৈঠকে দুইপক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুই সরকারপ্রধানের ৪০ মিনিটের বৈঠক ॥ শুক্রবার ব্যাঙ্ককে সাংরি লা হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই নেতা ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধা’ এবং ‘অভিন্ন উন্মুক্ত আলোচনা’র জন্য একে অপরকে শুভেচ্ছা জানান। তাদের মধ্যে ৪০ মিনিট কথাবার্তা হয় বলে জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। তাদের আলোচনা ছিল ‘অকপট, ফলপ্রসূ এবং গঠনমূলক’। বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে গভীরভাবে মূল্যায়ন করে।
তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যকার গভীর বন্ধুত্ব পরস্পর সম্পর্কের ইতিহাস, ভৌগোলিক নৈকট্য ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭১ সালে আমাদের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময়ে ভারতের সরকার ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। অধ্যাপক ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, গত আট মাস ধরে দুই দেশের মধ্যে অসংখ্য দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে।
দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমাদের উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে সম্পর্ককে সঠিক পথে নিয়ে যেতে আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই। বিমসটেকের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণকারী অধ্যাপক ইউনূস সাতটি সদস্যের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের সমর্থন কামনা করেন। তিনি গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়ন ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনে আলোচনার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার গ্রহণ করায় অধ্যাপক ইউনূসকে অভিনন্দন জানান এবং তিনি তাকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছাও জানান।
নয়াদিল্লি সব সময়ই ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ দিয়ে আসছে উল্লেখ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুই প্রতিবেশী দেশের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং এটি বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই। প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনূসের আন্তর্জাতিক মর্যাদার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ভারত সব সময় প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশকে সমর্থন করবে। ভারত বাংলাদেশের বিশেষ কোনো দলকে সমর্থন করে না উল্লেখ করে মোদি বলেন, আমাদের সম্পর্ক মানুষে-মানুষে’।
এ সময় নরেন্দ্র মোদির কাছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য বাংলাদেশের অনুরোধের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মাধ্যমে উসকানিমূলক মন্তব্য করে যাচ্ছেন এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন, যা ভারতের আতিথেয়তার অপব্যবহার বলে মনে হচ্ছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা ও উসকানিমূলক অভিযোগ করে আসছেন। আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি, তিনি যতদিন আপনার দেশে থাকবেন ততদিন তাকে এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নিন।
অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্টের উদ্ধৃতিও দেন, যেখানে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ওএইচসিএইচআর রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে যে বিক্ষোভ-সম্পর্কিত ১ হাজার ৪০০ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু ছিল।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিক্ষোভ চলাকালে হত্যা, নির্যাতন ও অন্যান্য অমানবিক কর্মকা-ের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে বিশ্বাস করার মতো যৌক্তিক ভিত্তিও প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং নির্দিষ্টভাবে তাদের চক্রের নেতাদের গ্রেপ্তার করা, তাদের হত্যা করা এবং তাদের লাশ লুকিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এর জবাবে শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে টানাপোড়েনের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দায়ী করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারত শুধু দেশের সঙ্গে আছে, কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে নয়।
অধ্যাপক ইউনূস সীমান্ত হত্যার প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন এবং জোর দিয়ে বলেন, প্রাণহানির সংখ্যা হ্রাসে একসঙ্গে কাজ করা কেবল অনেক পরিবারেরই বড় যন্ত্রণা রক্ষা করবে না, বরং আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে তুলতে এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতেও সহায়তা করবে।
এসব হত্যাকা- প্রতিরোধে উপায় খুঁজে বের করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যখন এসব হত্যাকা- ঘটে তখন আমি সব সময় কষ্ট পাই।’
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী শুধু আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে এবং ভারতীয় ভূখ-ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দুই নেতা এ বিষয়ে একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বিমসটেকে বাংলাদেশের সভাপতিত্ব নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমসটেকের দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করতে চায় এবং আশা করে যে সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য একটি দক্ষ পথ প্রদানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে সক্ষম একটি কার্যকর ও গতিশীল সত্তা হিসেবে আবির্ভূত হবে।
বৈঠকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্বেগের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবেদনগুলো ব্যাপকভাবে ফুলে ফেঁপে করা হয়েছে এবং এর বেশিরভাগই ভুয়া খবর। তিনি ভারতের এই নেতাকে কথিত হামলার ঘটনা তদন্তের জন্য বাংলাদেশে সাংবাদিক পাঠানোর আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি দেশে ধর্মীয় ও লিঙ্গ সহিংসতার প্রতিটি ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তার সরকার এ ধরনের ঘটনা রোধে গুরুতর পদক্ষেপ নিচ্ছে। উভয় নেতা একে অপরের সুস্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত মঙ্গল কামনা করে তাদের ফলপ্রসূ ও সৎ সংলাপ শেষ করেন এবং উভয় দেশের জনগণের অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, থাইল্যান্ডে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক খুবই গঠনমূলক, কার্যকরী ও ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি বলেন, বৈঠকে আমাদের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যতগুলো ইস্যু ছিল, সবগুলো নিয়েই কথা হয়েছে। আমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সবগুলো বিষয় প্রধান উপদেষ্টা উত্থাপন করেছেন।
বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে কথা হয়েছে, শেখ হাসিনা যে ওখানে বসে অনেক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টিকারী মন্তব্য করছেন, সেগুলো নিয়েও কথা হয়েছে। সীমান্ত হত্যা নিয়ে কথা হয়েছে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, নতুন করে এই চুক্তি করার বিষয়ে কথা হয়েছে এবং তিস্তার পানিবণ্টন নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রান্ত্রিক ব্যবস্থা চায় ভারত : বিক্রম মিশ্রি ॥ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখতে চায় ভারত। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যাঙ্কক সফর নিয়ে শুক্রবার এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, যেকোনো গণতন্ত্রে নিয়মিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ড. ইউনূসের কাছে নরেন্দ্র মোদি এ বিষয়ে নিজের দর্শন তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে সামনের দিনে একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে বৈঠক সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনূসকে যখন বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা জানান তখন তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানান।
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, যদি আরও কিছু সংস্কার প্রয়োজন পড়ে সে ক্ষেত্রে বাকি সংস্কার সম্পন্ন করে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে নরেন্দ্র মোদিকে জানান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা। শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে বিক্রম মিশ্রি বলেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আগেও বলেছি তার প্রত্যর্পণ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে অনুরোধ এসেছে। তবে এ বিষয়ে এখন আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।
এ বিষয়ে বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হয়, এ ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কোনো জবাব দেওয়া হয়নি। তবে ভারত বিষয়টির নোট নিয়েছে। সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিক্রম মিশ্রি বলেন, সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি এ নিয়ে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের গভীর উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদির হাত থেকে গোল্ড মেডেল নেওয়ার ছবি উপহার দিলেন ড. ইউনূস ॥ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাঁধাই করা ছবি উপহার দিয়েছেন। শুক্রবার ব্যাঙ্ককে বিমসটেক সামিটের সাইডলাইনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এই ছবি নরেন্দ্র মোদির হাতে তুলে দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ১০২তম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে অধ্যাপক ইউনূসের হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারই একটি আলোকচিত্র ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা-থাই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ॥ শুক্রবার ব্যাঙ্ককে বিমসটেক সম্মেলনে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ॥ শুক্রবার বিমসটেক সম্মেলনের এক ফাঁকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের অধ্যাপক ইউনূস বৈঠক করেন। বৈঠকে কুশলাদি বিনিময় ছাড়াও দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা-থাই নিরাপত্তা মন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ॥ এর আগে শুক্রবার থাইল্যান্ডের সামাজিক উন্নয়ন ও মানব নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ভারাওয়াত সিল্পা-আর্চা এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সংশিষ্ট মন্ত্রী জিরাপর্ন সিন্ধুপ্রাই অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ॥ শুক্রবার ব্যাঙ্ককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই সময়ে দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলাপ করেন।
উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলন বুধবার থেকে শুক্রবার ব্যাংককে অনুষ্ঠিত হয়। বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কক যান। শুক্রবার রাতেই তিনি ব্যাঙ্কক থেকে ঢাকা ফিরে আসেন।