
ছবি : জনকণ্ঠ
ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে বাগেরহাটের দু’টি বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবনসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। এসব স্থানে ঈদের দিন থেকে উপচে পড়ছে মানুষের ঢল। পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্মল পরিবেশে সময় কাটাতে পেরে খুশি দর্শনার্থীরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের পর্যটকরা ৬’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ষাটগম্বুজ মসজিদ ও বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন।
করমজল, হারবারিয়া, হিরণ পয়েন্ট, কচিখালী ও দুবলার চরসহ বনের প্রতিটি ভ্রমন স্পটে ঘুরে আনন্দ উপভোগ করছেন তারা। একইসাথে বলেশ্বর ও ভৈরব নদীর বাঁধে পর্যটকদের ঢল নেমেছে।
লাখো দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের সুন্দরবনসংলগ্ন শরণখোলার বলেশ্বর নদীর তীরের “রিভারভিউ ইকোপার্ক”। বিশাল বলেশ্ব নদী, নিল আকাশ ও প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে রিভারভিউ ইকো পার্কে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।
গত সোমবার ঈদের দিন থেকে হাজার হাজার হাজার পর্যটক এসব স্থানে আসছেন। ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের দীর্ঘ ছুটির কারণে আগামী কয়েকদিন পর্যটকের চাপ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা থেকে সুন্দরবনে ঘুরতে আসা ইসমত আরা বেগম ও চন্দ্র শেখর বলেন, অনেকদিন থেকে ইচ্ছা ছিল সুন্দরবন ঘুরতে আসবো। এবার দীর্ঘ ছুটি পেয়ে সুন্দরবনে চলে এলাম। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। বিভিন্ন রকম বন্যপ্রাণী দেখলাম। নিজ হাতে হরিণকে গাছের পাতা খাইয়েছি। কাছ থেকেই বানরের লাফালাফি দেখেছি। সুন্দরবনের এই বন্য পরিবেশ দেখে অনেক ভালো লাগছে।
পর্যটক রাতুল হাসান বলেন, মোংলা থেকে সুন্দরবনের করমজল পয়েন্টে আসা খুবই সহজ। প্রতিবছর ঈদের সময় বন্ধুরা মিলে মোংলা থেকে ট্রলার ভাড়া করে সুন্দরবনে আসি। এবছর মানুষের চাপ একটু বেশি, ফলে ট্রলার ভাড়া নিতে একটু হিমশিম খেতে হয়েছিল। আজ করমজল পয়েন্ট ঘুরেছি, কাল হারবাড়িয়াসহ আরো কিছু স্পট ঘুরবো।
অপর পর্যটক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, পরিবারের সঙ্গে ষাটগম্বুজ ও সুন্দরবনে এসে ঈদের আনন্দ বহুগুণ বেড়ে গেছে। এর আগে চিড়িয়াখানায় অনেক বন্যপ্রাণী দেখেছি। অনেক ইচ্ছা ছিল সুন্দরবন এসে খোলা পরিবেশে বন্যপ্রাণী দেখার। সেই ইচ্ছা পূরণ হলো। গাছ গাছালির ভেতর থেকে হেঁটে বনের আসল পরিবেশ উপভোগ করেছি। কচ্ছপ, কুমির, বানর, হরিণ এবং বিভিন্ন রকমের পাখি দেখে ভালো লাগছে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, এবার পবিত্র ঈদ উপলক্ষে লম্বা সরকারি ছুটির কারণে করমজল পয়েন্টসহ সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলোতে মানুষের ভিড় বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ আসছেন। ঈদের দিন থেকে দর্শনার্থীর চাপ অনেক বেড়েছে। অতিরিক্ত পর্যটকের আগমনে যাতে বনের পরিবেশ নষ্ট না হয় সেদিকে আমরা খেয়াল রাখছি। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমাদের কর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন।
বাগেরহাট জাদুঘরে কাস্টোডিয়ান মোঃ যায়েদ বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থাপনা। এই স্থাপনার প্রতি দেশী বিদেশী দর্শনার্থী ও গবেষকদের আগ্রহের কমতি নেই। যার ফলে প্রতিনিয়ত এখানে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের জনবল অনেক কম। যার ফলে দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে আমাদের কিছুটা হিমশিম খেতে হয়। তারপরে আমরা সব সময় চেষ্টা করি দর্শনার্থীদের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে।
অপরদিকে, ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে লাখো দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের শরণখোলার বলেশ্বর নদীর তীরের “রিভারভিউ ইকোপার্ক”। বিশাল বলেশ্ব নদী, নিল আকাশ ও প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে রিভারভিউ ইকো পার্কে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। ঈদের দিন থেকে উপচে পড়ছে মানুষের ঢল। পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্মল পরিবেশে বিনামূল্যে সময় কাটাতে পেরে খুশি দর্শনার্থীরা।
শরণখোলা উপজেলার তৎকালিন নির্বাহী অফিসার মোঃ নুর-ই-আলম সিদ্দিকি বলেশ্বর নদীর তীরে পর্যটন বান্ধব নান্দনিক পরিবেশ গড়ে তুলেন। তাঁর ভাষায়, নাগরিক কর্মব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে এ স্থানটি অত্যন্ত মনোরম আকর্ষনীয়। তাই প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী এখানে আসছেন। দর্শনার্থীদের ঘীরে পার্ক এলাকায় থাকা ফুসকা, চানাচুরসহ বিভিন্ন খাদ্য বিক্রেতা ও স্পিডবোট-নৌকা চালকসহ অনেক মানুষের কর্ম সংস্থান হচ্ছে। বিভিন্ন উৎসবে এখানে দর্শনার্থী ক্রমশ: বাড়তে থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।
বর্তমানে নিলফামারীর সৈয়দপুর সদর উপজেলার ইউএনও হিসেবে কর্মরত মোঃ নুর-ই-আলম সিদ্দিকি আরও বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ঝড়-জলচ্ছাস ঠেকাতে শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরে তৈরি করা বেড়িবাঁধকে টেকসই করতে মাটির উপর কনক্রিটের ব্লক দেওয়া হয়। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলা সদরের রায়েন্দা-মাছুয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন বড়ই তলা এলাকায় এক কিলোমিটারের বেশি জায়গা জুড়ে কংক্রিটের ব্লকে রং করে উপজেলা প্রশাসন। জায়গাটির নাম দেওয়া হয় ‘শরণখোলা রিভারভিউ ইকোপার্ক’। এরপর থেকে এই ইকোপার্ক কেন্দ্রিক নানা কর্মযজ্ঞ চলতে থাকে। সেই সাথে দর্শনার্থীও বৃদ্ধি পাচ্ছে।##
আঁখি