ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১

চীনকে মহান বন্ধু মনে করে বাংলাদেশ! চীনা পত্রিকায় চীন-বাংলাদেশ সস্পর্কে রূপরেখা

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ১ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৬:৩৩, ১ এপ্রিল ২০২৫

চীনকে মহান বন্ধু মনে করে বাংলাদেশ! চীনা পত্রিকায় চীন-বাংলাদেশ সস্পর্কে রূপরেখা

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইউনূস চীনে তার প্রথম সফরের শেষে চীনা দৈনিককে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চীন এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা গত পাঁচ দশকের ফলস্বরূপ। তিনি আরও জানিয়েছেন, আগামী অর্ধ শতাব্দীতে এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী এবং গভীর হবে।

বিশ্বখ্যাত সামাজিক উদ্যোক্তা এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, চীনের প্রতিবেশী কূটনীতি এবং এর বৈশ্বিক উদ্যোগগুলো, যেমন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) এবং মানবতার জন্য একটি সম্মিলিত ভবিষ্যত নির্মাণের ধারণা, তাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

এ বছর চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ড. ইউনূস বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, যা শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নয়, জনগণের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি হয়েছে। তার মতে, এটি বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্য অনুসরণীয় একটি মডেল।

তিনি বলেন, "এমন একটি বন্ধু আমাদের পাশে থাকলে আমরা শুধু শক্তিশালীই নই, বরং আমাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়ে।" ড. ইউনূস বিশ্বাস করেন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভিত্তি এত শক্তিশালী যে এটি ভবিষ্যতে আরও সফল হবে।

ড. ইউনূস আরও বলেন, "এটি আমাদের জন্য এক প্রেরণাদায়ক সম্পর্ক, যেখানে আমরা একে অপরকে সাহায্য করি, সহযোগিতা করি, এবং একে অপরের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করি।" তিনি মনে করেন, তার চীন সফর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত এখন যখন দেশটি এক নতুন দিগন্তে পৌঁছেছে।

চীন এবং বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রতি অনেক এগিয়েছে। চীন গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে রয়েছে এবং ২০২৩ সালে তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২৩.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে BRI-তে যোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হয়েছে এবং জনগণের জীবনমানও উন্নত হয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, "বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দেশের স্থলবদ্ধ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে।"

তিনি আরও বলেন, "যতটা সন্দেহ প্রথমে ছিল, বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের মাধ্যমে যখন জনগণের উপকার হবে, তখন সবাই এর সাফল্য মেনে নেবে।"

বাংলাদেশে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে চীনা বিনিয়োগকারীরা শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারবেন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হবেন। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সুবিধা তৈরি হবে, যা একে অপরকে আরও শক্তিশালী করবে।

চীনে ড. ইউনূসের সফরের সময় তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ড. ইউনূস তাকে "একজন প্রেরণাদায়ক নেতা" হিসেবে উল্লেখ করেন। তাদের প্রথম সাক্ষাৎ ২০০৯ সালে চীনে হয়েছিল। ড. ইউনূস বলেন, শি একজন দূরদর্শী নেতা, যিনি তার দেশের জনগণের সমস্যাগুলোর সমাধানে গভীরভাবে চিন্তা করেন।

ড. ইউনূস আরও বলেন, শি জিনপিংয়ের "একটি অংশীদারী ভবিষ্যত গঠন" ধারণা তাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি মনে করেন, এটি শুধু একটি দেশের জন্য নয়, বরং সমগ্র পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য মানবতার একত্রে কাজ করার আহ্বান।

ড. ইউনূস বলেন, "পৃথিবীকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এটি একসাথে কাজ করার একটা বৈশ্বিক লক্ষ্য।" তিনি নিজেও "শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ" এর লক্ষ্যে কাজ করছেন, এবং মনে করেন এটি মানবজাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

তথ্যসূত্রঃ https://www.facebook.com/share/1AFDJ33MSe/

মারিয়া

×