ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১

বাকেরগঞ্জে অসহায় পরিবারকে ঈদ উপহার প্রদান ও চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন বিএনপির নেতা

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ১৮:১১, ৩০ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৮:১২, ৩০ মার্চ ২০২৫

বাকেরগঞ্জে অসহায় পরিবারকে ঈদ উপহার প্রদান ও চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন বিএনপির নেতা

ছবি: সংগৃহীত

'মোর কোন ঈদ নাই, এক বেলা ভিক্ষা না করলে দুই শিশু সন্তান না খেয়ে থাকে 'এই শিরোনামে গত কাল (২৯ মার্চ) নিজস্ব সংবাদদাতা বাকেরগঞ্জ থেকে দৈনিক জনকণ্ঠ নিউজ পোর্টালে একটি সংবাদ প্রকাশ করলে সংবাদটি বাকেরগঞ্জের চরাদী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সোহাগ হাওলাদারের নজরে আসে।

রবিবার (৩০ মার্চ) সোহাগ হাওলাদার পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে অসহায় নিলুফা বেগমের বাড়িতে এসে তার দুই শিশু সন্তানের ঈদ উপহার তুলে দেন এবং নিলুফা বেগমের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। 

উল্লেখ্য, বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের মৃত নিজাম সিকদারের স্ত্রী নিলুফা বেগম। নিলুফা বেগমের স্বামী নিজাম শিকদার গ্রামে ভিক্ষা করে তার সংসার চালাতেন। শারীরিক অসুস্থতায় চিকিৎসার অভাবে গত এক বছর আগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে দুই শিশুসন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন নিলুফা বেগম। দুই শিশু সন্তান নিয়ে নিলুফা বেগমের ঠাঁই হয় পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের জরাজীর্ণ একটি ঘরের বারান্দায়। দুই শিশু সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী নিলুফা বেগম (৬০) জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ছেলেমেয়ের মুখে দুমুঠো ভাতের জন্য এখন তিনি ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে ঘুরছেন দুয়ারে দুয়ারে।

২৯ মার্চ (শনিবার) পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে ৬০ বছরের বৃদ্ধা ভিক্ষুক নিলুফা বেগমের সঙ্গে কথা হয় জনকণ্ঠ সংবাদ মাধ্যমের, নিলুফা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, "বাবা ঈদ আসলে সবাই আনন্দ ফুর্তি করে। আর আমাদের জন্য ঈদ আসলে কষ্ট আরো বাড়ে। দুই শিশুসন্তান নিয়ে ভিক্ষা করি সংসার চালাতাম। জীবনের শেষ প্রান্তে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে বিছানায় পড়ে রয়েছি। ছেলেমেয়ের মুখে এক বেলা ভাতই দিতে পারছি না। এখন ঈদ আসছে জামা কাপড় আর পাব কোথায়।" চোখের পানি ছেড়ে করুন সুরে কেঁদে কেঁদে নিলুফা বেগম বলেন, "বাবা, মোর কেউ নেই! ঘর দুয়ার হারিয়েছি অনেক আগেই। বাকেরগঞ্জ, সাহেবগঞ্জ ৫ নং ওয়ার্ডে একটি ভাড়া বাসায় মোড় অসুস্থ স্বামী নিয়া ঐহানে ভাড়া বাসায় থাকতাম। মোর স্বামী নিজাম সিকদার ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন। প্রায় এক বছর হয়েছে তিনি মারা গেছেন। তাই এখন কি করমু যেদিন ভিক্ষা করতে বের না হই, সেই দিন মোগো না খাইয়া থাকতে হয়। মাস গেলেই ১৫০০ টাকা ঘর ভাড়া দিতে হয়। মুই নিজেও অসুস্থ, ঔষধের টাকাও ভিক্ষা করেই জোগাড় করতে হয়। এখন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছি। বাবা জীবনডা আর চলে না। গরিবের কষ্ট কেউ দেহে না।"

ভিক্ষুক নিলুফা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, "সুখ কি জিনিস জীবনে চোখে দেখলাম না। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। ভিক্ষার টাকায় মাঝেমধ্যে সামান্য চিকিৎসা করালেও ভালো হয়নি। এভাবেই ভিক্ষে করতে করতে কখন জানি শ্বাসটা মোর বন্ধ হয়ে যায়। মোড় ১৩ বছরের ছেলে আব্দুল্লা ফাজিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। মেয়ে মারজিয়া ১১ বছর বয়স ও সরকারি মডেল ইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। মুই একলা মানুষ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিক্ষা করেই সংসার চালাতাম এখন জরায়ু টিউমার ও কিডনি সমস্যায় বিছানায় পড়ে রয়েছি।" নিলুফা বেগম একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অসহায় নিলুফা বেগম ও তার সন্তানদের অসহায় জীবন চিত্র জনকণ্ঠ নিউজ পোর্টালে প্রকাশ করা হলে বিএনপি নেতা সোহাগ হাওলাদার তার পাশে দাঁড়ান। 

এ বিষয়ে সোহাগ হাওলাদার বলেন, "ঈদ মানেই ধনী গরিব কোন ভেদাভেদ থাকবে না। জনকণ্ঠ নিউজ পোর্টালের সংবাদটি দেখার পরে আমি নিলুফা বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছি। ঈদের পরে তার সুচিকিৎসা করানো হবে।"

আবীর

আরো পড়ুন  

×