ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১

আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ২৯ মার্চ ২০২৫

আল বিদা মাহে রমজান

তিরিশ রোজার সিয়াম শেষে এলো খুশির ঈদ

তিরিশ রোজার সিয়াম শেষে
এলো খুশির ঈদ,
জাগলো আকাশ পাহাড় নদী
ভেঙে চাঁদের নিদ।
-(কবি ফজল-এ-খোদা)
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার ধারাবাহিকতায় বিদায় নিল রহমতের প্রথম দশক, মাগফিরাতের মাঝের দশদিন ও নাজাতের সমাপনী দিনগুলো। একে একে এক বছরের জন্য হারিয়ে গেল ইতিকাফের স্বর্গীয় আমেজ, শবে কদরের হৃদয়গ্রাহী ইবাদতের পরিবেশ। এখন সামনে শুধু ঈদের আনন্দ। মুসলিম জিন্দেগীতে এ এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির দ্রুত পরিসমাপ্তি!

মাহে রমজানের পর শাওয়ালের বাঁকা চাঁদ উদয় হওয়ার পয়গাম মুসলিম সমাজে কী যে বাঁধ ভাঙা আনন্দ বন্যা নিয়ে আসে তা একমাত্র কোনো জশস্বী কবির মুখেই শোভা পায়। নজরুল বলেছিলেন: শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো / কত বালু চরে কত আঁখিধারা ঝরায়ে গো / বরষের পরে আসিলে ঈদ।’ 
আসলে এ ঈদ আনন্দের কোনো তুলনা হয় না। আর আরবি ‘ঈদ’ শব্দের অর্থও খুশি, আনন্দ। আবার ঈদের আরেক অর্থ বারবার আসা। ফিতর মানে ভাঙা। বছর ঘুরে সিয়ামের মাসের পর রোজা ভাঙার এ উৎসব বারবার ফিরে আসে বলেই এই ঈদ ‘ঈদুল ফিতর’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর হলো রোজা ভাঙার উৎসব। তাহলে নামেই বোঝা যায়, এদিন কোনো সচরাচর আনন্দোৎসবের দিবস নয়, এ হলো রোজাদারের সাধনার সুফলের বহির্প্রকাশ। খুশি ও ইবাদতের সমন্বিত এক নির্মল আনন্দধারা।
মাহে রমজান মুসলমানদের দ্বারে-দ্বারে নিয়ে এসেছিল খোদাভীতি, সংযম, সাম্য, মৈত্রী ও ভালোবাসার সওগাত। মাসব্যাপী এসব সাধনা ও অনুশীলনে প্রতিটি মুসলমান কাক্সিক্ষত নৈতিক চরিত্রগুলো অর্জন করেছেন বৈ কি? আজ ঈদের আনন্দধারায় তা সমাজে প্রদর্শনের বাস্তব মহড়া শুরু হবে, যা গোটা বছরের জন্য উম্মাহর পাথেয় হয়ে থাকবে। এ হলো ইসলামের দর্শন।

তাই এই ঈদের আনন্দ নীতি-নৈতিকতা বিসর্জিত আনন্দ উৎসব কিংবা উৎসবের নামে হৈ-হুল্লোড় ও বাড়াবাড়িকে সমর্থন করে না। অথচ একশ্রেণির মানুষ ঈদকে ভোগের মহড়া, অপচয়, অপব্যয়ের প্রতীকে পরিণত করে তুলছে।
বস্তুত আজকের এ ঈদ ত্যাগের, নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার আর উৎসর্গ করার, এ ঈদ ধনী-গরিব, শহুরে-গ্রামীণ সবার মাঝে সাম্য মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন রচনার। আজকে ঈদের দিনেও ইসলাম তাই গরিবদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারটি প্রাধান্য দিয়েছে। হাদীস শরীফে ঈদের নামাজের আগেই গরিবদের হক মিটিয়ে দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যাতে তাদেরকে হাত পাততে না হয়। ঈদকে শুধু আমরা আনন্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখব না।

ঈদের সঙ্গে ইবাদতের সমন্বয় ঘটাব। ঈদের বিশেষ নামাজ, আদব শিষ্টাচার, ওয়াজিব মুস্তাহাবসমূহ মেনে চলব। সম্ভব হলে মরহুম ময়-মুরুব্বিদের কবর জিয়ারত করব। বাকি সময়টুকু অন্যকে আপ্যায়ন করা এবং নিজে আল্লাহর দেওয়া ঈদের সামিয়ানার নিচে আপ্যায়িত হওয়ার কোশেশ করব। 
মাসব্যাপী ‘মাহে রমজান’ কলামের এখানেই সমাপ্তি। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। বিদায় রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের সুসংবাদবাহী মাহে রমজান। ঈদ মোবারক আসসালাম।

×