ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

ব্যাংকক ও মিয়ানমারের চেয়েও ভয়াবহ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম নগরী!

প্রকাশিত: ১৭:১২, ২৯ মার্চ ২০২৫

ব্যাংকক ও মিয়ানমারের চেয়েও ভয়াবহ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম নগরী!

ছবি: সংগৃহীত

গতকাল ২৮ মার্চ থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া এই ভূমিকম্প এতটাই জোরালো ছিল যে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও কম্পন অনুভূত হয়। আর এই কম্পনের পরপরই নড়েচড়ে বসেছেন বিশেষজ্ঞরা, জানিয়েছেন, বাংলাদেশও ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে, যা ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপর্যয়।

গতকাল মিয়ানমারে আঘাত হানা ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিলো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহরের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার কাছে। ওই ভূমিকম্পের পর মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হলেও চট্টগ্রামে তেমন কিছুই হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আঘাতে চট্টগ্রাম নগরীর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীতে আনুমানিক ২ লক্ষ ভবন রয়েছে যার মধ্যে দেড় লক্ষ ভবনই ভূমিকম্পের চরম ঝুঁকিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রিখটার স্কেলে যদি ৭.৫ বা তার বেশি মাত্রার কোনো ভূমিকম্প হয়, তবে চট্টগ্রামে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।

চট্টগ্রামে এই ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে রয়েছে কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীর সংলগ্ন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, যার মধ্যে সমুদ্র বন্দর, শাহ আমানত বিমানবন্দর, ইস্টার্ন রিফাইনারি-এসব স্থাপনাগুলোর অধিকাংশই বেলে মাটির উপর নির্মিত, যা ভূমিকম্পের সময় বিপর্যয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের কারণে এসব স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে যদি কোনো পেট্রোকেমিক্যাল স্থাপনায় আগুন লাগে, তাহলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে শহর জুড়ে। যার ফলে চট্টগ্রামের সংকচিত সড়কের দুপাশে গড়ে ওঠা ভবনগুলোতে আগুনের তীব্রতা মোকাবেলা করা কঠিন হতে পারে। আর এই অগ্নিদুর্ঘটনা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এছাড়া, ভূমিকম্প হলে চট্টগ্রামের শত বছরের পুরনো কালুরঘাট সেতুর ভাঙ্গনও একটি বড় আশঙ্কা। এই সেতু ভেঙে পড়লে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। কক্সবাজারে ইউরেশিয়ান প্লেটের অবস্থান থাকায় এই অঞ্চলও ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় ভূমিকম্প বা সুনামির সময় চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের ইউএসটিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডক্টর ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম শহরের ভবনগুলোতে নিয়মিতভাবে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মূল্যায়ন ও শক্তি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি জানান, চট্টগ্রামে নতুন নির্মিত অনেক ভবন এখনও ভূমিকম্প প্রতিরোধী ডিজাইনের আওতায় আসেনি, যা ভবিষ্যতে বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। তার মতে, যেকোনো ভবনের নির্মাণকাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে ভূমিকম্পের ঝুঁকির মুখে রয়েছে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, স্কুল, রেল যোগাযোগ এবং সাধারণ মানুষের জীবনও। তাই এখনই উপযুক্ত প্রস্তুতি নেয়া না হলে তা ভবিষ্যতে পুরো নগরীর বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=P-H_swaoA8A

 

রাকিব

×