
এবারের ঈদের লম্বা ছুটি
সাবধান ! এবারের ঈদের লম্বা ছুটির আনন্দে মেতে থাকার আগে অপরাধী চক্র সম্পর্কে সতর্ক ও সাবধান হবেন। নতুবা পড়তে পারেন অপরাধী চক্রের খপ্পরে। বিপদ ডেকে আনতে পারে অসাবধনতার কারণে। বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে যারা গ্রামের বাড়িতে যাবেন তাদের বাড়িতে বা ফ্ল্যাটে চুরি কিংবা গণচুরি হতে পারে। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসা ও যাওয়ার পথে অপরিচিত ব্যক্তি প্রলোভনের টোপ দিয়ে বিষাক্ত জাতীয় কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব কেড়ে নিতে পারে অজ্ঞানপার্টি।
যারা রাজধানীতে থাকবেন তারা ঈদের সময়ে নির্জনস্থানে গণছিনতাইয়ের শিকারে পড়তে পারেন। ঈদের ছুটিতে বিভিন্নস্থানে ওতপেতে আছে অপরাধী চক্র। এ জন্য সতর্ক ও সাবধান করে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটিতে রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব। ঈদের ছুটিতে রাজধানী ঢাকায় ১৫ হাজার পুলিশের কড়া নিরাপত্তার আয়োজন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ঈদের সময় রাজধানীতে দিনেরাতে ৬০০টি পুলিশ দল টহল দেবে। এ ছাড়া প্রতিদিন মহানগরের ৭৫টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করা হবে।
নিরাপত্তা জোরদারে থাকছেন র্যাব, এপিবিএন, সিটিটিসি, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরাও। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা- প্রতিরোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় তল্লাশিচৌকি বসানোর পাশাপাশি বিপণিবিতান ও আবাসিক এলাকায় টহল জোরদার করা হচ্ছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার ইতোমধ্যে ২৮ মার্চ থেকে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে।
এ সময় স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে যাবেন দেড় থেকে দুই কোটি মানুষ। ঈদ ঘিরে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কারণে নিরাপত্তার বিষয়টির ওপর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট ও অফিস ফাঁকা হয়ে যাবে। ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি এই ভয়ের অন্যতম কারণ। এসব বিষয় মাথায় রেখে ঈদের আগে ও পরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ডিএমপি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেছেন, ঈদের ছুটিতে ঢাকাবাসীর নিরাপত্তায় বিঘœ ঘটবে না। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ছুটিতে নেই। হাইওয়ে পুলিশ সচল আছে। ঈদের ছুটিতে যারা বাসা ছেড়ে যাবেন, তারাও নিশ্চিন্তে থাকবেন। ফলে ঈদে টানা ছুটি থাকলেও নিরাপত্তায় কোনো বিঘœ ঘটবে না। সচিবালয়ে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা ৯ দিনের ছুটি থাকা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রতি বছরই ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে ঈদ মৌসুমি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তাই প্রতিবারের মতো এবারের ঈদেও রাজধানীবাসীকে সতর্ক ও সাবধান করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষ। এ জন্য অপরাধ প্রতিরোধ ও অপরাধী পাকড়াও করার মতো কিছু কৌশলী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তারা। ঈদের আগের ছুটি থেকে ঈদের ছুটির পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা বিধানে তৎপরতা চালানো অব্যাহত রাখবে।
বিপণিবিতান এবং বাস টার্মিনাল এলাকায়ও নিরাপত্তা জোরদার করা হবে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া জাতীয় ঈদগাহের জন্য থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ মোতায়েন, চেকপোস্ট স্থাপন, হাট এলাকায় যানজট নিরসনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঈদের ছুটিতে রাজধানী ফাঁকা করে চলে যাওয়া রাজধানীবাসীর ছুটির আনন্দ মাটি হতে বসে চুরি-ডাকাতির আতঙ্কে। রাজধানীবাসীর ঈদের আনন্দ নির্বিঘœ করতে আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে।
রাজধানীর শপিংমল, টার্মিনাল এবং এলাকাভিত্তিক অপরাধ প্রতিরোধ করার জন্য বাস টর্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল, রেল স্টেশন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় চুরি, ডাকাতি এবং ছিনতাই প্রতিরোধসহ ট্রাফিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে টহল ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ব্যাংক, মার্কেট, জুয়েলারি শপ, অন্যান্য দোকানপাটসহ বাসাবাড়িতে চুরিÑডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশ সতর্ক থাকবে। মার্কেট ও টার্মিনাল এলাকায় অপরাধ প্রতিরোধ করতে নিয়মিত মোবাইল ডিউটিতে রাখা হয়েছে।
ঈদের ছুটিতে যারা ঢাকার বাইরে যাবেন তারা সময় নিয়ে ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারেন, যাতে শেষ মুহূর্তের ট্রেন, বাস, লঞ্চ ও ফেরিঘাটের মারাত্মক ভিড় এড়িয়ে নির্বিঘেœ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা যায়। রেল, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে, যাত্রা পথে এবং চলার পথে পাশের যাত্রী, অপরিচিত কোনো ব্যক্তি, হকার কিংবা ফেরিওয়ালার নিকট থেকে খাদ্য সামগ্রী, চা-সিগারেট, পান-বিড়ি, কলা-রুটি, চকলেট, শরবত, জুস, কোমল পানীয় বা অন্য কোনো খাবার গ্রহণ মারত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অভিহিত করে তা গ্রহণ থেকে সতর্ক ও সাবধান থাকার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষ পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রতি ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে নির্জনস্থানে গণছিনতাই হওয়ার রেকর্ড আছে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের খাতায়। এ জন্য রাজধানীতে ইউনিফর্ম পুলিশ, সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্য, পুলিশ সদস্যদের মাঠে নামিয়ে অপরাধীদের পাকড়াও করার নানা ধরনের কৌশল নেওয়া হয়েছে। প্রতি ঈদের ছুটিতেই রাজধানী ফাঁকা করে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে চলে যায় অনেকেই।
রাজধানী ফাঁকা হয়ে যাওয়ার সুযোগে আবাসিক এলাকায় ও ফ্ল্যাটে গণচুরি হয়। গণচুরি ও গণডাকাতি হয় মার্কেটে বা বিপণিবিতানে। সংঘবদ্ধ অপরাধী দল ঈদের ছুটির ফাঁদে ফেলে এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার সুযোগ নেয়। বাড়ির ও ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে বা জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে সর্বস্ব নিয়ে চলে যায় অপরাধী চক্র। মার্কেটে বা বিপণি বিতানের দারোয়ান বা সিকিউরিটি গার্ডদের হাত করে বা প্রলোভন দিয়ে কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে হাত-পা বেঁধে মার্কেটের দোকানে গণচুরি বা গণডাকাতি করে আসছে দুর্বৃত্ত চক্র।
প্রতি ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে গণছিনতাই, গণচুরি বা গণডাকাতির মতো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি অনেকেই অবগত থাকলেও সতর্ক বা সাবধান হওয়ার ব্যাপারে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে অবহেলা করেন। এই সুযোগে দুর্বৃত্ত চক্র সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায়। ঈদের ছুটি শেষে গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে এসে সর্বস্ব লুটে নেওয়ার ঘটনা দেখে মাথায় হাত পড়ে। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ঘটনার বিবরণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লু-িত মালামাল উদ্ধার হয় না।
থানা পুলিশের তখন আর খুব একটা বেশি কিছু করা হয় না বলে অতিতে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে রাজধানীবাসীকে যারা ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবেন তাদেরকে আগাম সতর্ক ও সাবধান করে দিয়েছেন।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী নগরবাসীকে উদ্দেশ করে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, আমাদের ব্যবস্থাপনাটা আমরা করব।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ হলে তারা নাগরিক সচেতনতার উপদেশ দিয়ে বলেছেন, শুধুমাত্র পুলিশি নিরাপত্তাই যথেষ্ট নয়। ঈদের ছুটিতে যারা গ্রামের বাড়িতে যাবেন তারা দরজা, জানালা ঠিকমতো লাগানো হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবেন। রাতের বাসার বা দোকানের চারপাশে আলোকিত রাখার ব্যাবস্থা করবেন।
মূল্যবান দলিল ও মূল্যবান সম্পদ ব্যাংকের লকারে রাখতে হবে। বিপদের সম্ভাবনা থাকলে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ফাঁড়িকে অবহিত করবেন। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের ঈদের ছুটিতে বেশি ও পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থায় করা হয়েছে। রাজধানীবাসীর যারা ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাবেন ট্রেনে, বাসে লঞ্চে অপরিচিত কোনো ব্যক্তির দেওয়া কিছু খাওয়া বা পান করা ঝুঁকিপূর্ণ অভিহিত করে তা গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রাজধানীতে ঈদের ছুটিতে নির্জনস্থানে গণছিনতাই প্রতিরোধে নামানো হয়েছে ইউনিফর্ম পুলিশর পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরা। লেডি কনস্টেবলের আছে বোরকা টিম। রাজধানীতে ঈদের ছুটিতে ঘোরাফেরার করার সময়ে নির্জনস্থান ও অপরাধের স্পটগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষ। আর ঈদের ছুটিতে যারা গ্রামের বাড়িতে যাবেন তারা রাজধানীর বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকানপাটে যাতে চুরি, গণচুরি, গণডাকাতির কবলিত না হয় সেই জন্য আগে থেকেই স্বজনদের কাছে স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান জিনিসপত্র রাখার পরমার্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাসভবনের কর্তব্যরত দারোয়ান, সিকিউরিটি গার্ডসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
র্যাব-৪ এর সিও লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম জানিয়েছেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। ঢাকার বাসস্থান ত্যাগের পূর্বে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, রাস্তায় কারও থেকে খাদ্য গ্রহণে ও সখ্য না করতে অনুরোধ করেছেন।