
সাঁড়াশি অভিযান চলছে রাজধানীর বাস টাার্মিনালগুলোতে
সাঁড়াশি অভিযান চলছে রাজধানীর বাস টাার্মিনালগুলোতে। যেখানেই বাড়তি ভাড়া, সেখানেই হানা। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপনে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন নগরের মানুষ। ঘরমুখো এসব মানুষের উপস্থিতিতে অনেকটাই সরব হয়ে উঠেছে বাস টার্মিনালগুলো। এ সুযোগে বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ ওঠে।
সেজন্য শুক্রবার গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে বিআরটিএর পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। ঈদে যাত্রীর চাপ বাড়ার সুযোগে মালিক শ্রমিকরা পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন কৌশলে বাড়তি আদায়ের অভিযোগ ওঠার পরই এ ধরনের অভিযানে নামে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, শুক্রবার দুপুরে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে বিনিময় পরিবহনের একটি বাসকে এক সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ড করেন বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেট। এ টার্মিনাল পরিদর্শনে যান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়কে বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক। বেলা পৌনে ১২টার দিকে তিনি ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের বিনিময় পরিবহনের একটি বাসে উঠে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন।
তখন যাত্রীরা অভিযোগ করেন, ৩৯০ টাকার ভাড়া বাসটি ৫০০ টাকা করে নিয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পর সিনিয়র সচিব উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেটদের বাসটির কাগজপত্র নিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এতে পরিবহনটির শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাৎক্ষিণক বিক্ষোভ শুরু করেন।
তারা বলতে থাকেন, অন্য সময় বাস খালি যায়, ৩৯০ টাকার ভাড়া ২০০ টাকাও রাখা হয় তখন। আমাদেরও ঈদ আছে। আমাদের তো বোনাস নেই। পরে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটরা। আলোচনায় বাসটিকে জরিমানা না করে সাতদিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়।
এই ঘটনার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক বলেন, আমরা যাত্রীদের বলেছি, আপনারা বেশি ভাড়া দেবেন না। যদি আপনাদের কাছ থেকে কোনো পরিবহন বেশি ভাড়া নেয়, তাহলে অভিযোগ করলে আমরা ওই পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করব।
মহাখালী বাস টার্মিনালে ঈদ যাত্রার জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টার্মিনালে র্যাবের ও বিআরটিএর অফিস আছে। এছাড়া আমাদের অভিযোগ কেন্দ্র আছে এবং পুলিশের টহল আছে। কোথাও যদি কোনো বাড়তি ভাড়া নেয়, তাহলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
রাস্তায় যেসব চালকরা যানজটের সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, রাস্তায় চালকদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ঈদযাত্রায় মহাখালী বাস টার্মিনালের কী অবস্থা দেখেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি ভালো। তবে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী বিনিময় পরিবহনের একটি বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। বেশি ভাড়া নিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব ও রুট পারমিট বাতিল করে দেব।
এদিকে দুপুরে গাবতলী গিয়ে শোনা যায়, যাত্রীদের নানা অভিযোগ। তাদের অভিযোগ, সাধারণ সময়ে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ১৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও সেলফি পরিবহনের বাসে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। এতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে ছুটতে হচ্ছে তাদের।
তবে অন্যান্য লোকাল সার্ভিসে একই দূরত্বে ২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। সেলফি পরিবহনে ভাড়া বেশি নেওয়ার কারণ হিসেবে বিরতিহীনভাবে চলাচল ও আসন ফাঁকা রেখে ফেরত আসাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন।
যাত্রীদের অভিযোগ গাবতলী থেকে পাটুরিয়া-ফেরিঘাটগামী লোকাল বাস সার্ভিস সেলফি পরিবহনে যাত্রী প্রতি ৩০০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। হাঁকডাক ছেড়ে যাত্রী তুলছেন শ্রমিকরা। ঠিক তার পাশেই অন্যান্য লোকাল বাস সার্ভিসগুলোও হাঁকডাক ছেড়ে যাত্রী খুঁজছেন।
কুষ্টিয়ার যাত্রী মো. ফজলু জানান, তিনি যাবেন গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। এরপর ফেরি পার হয়ে ওপারের লোকালে চেপে পৌঁছাবেন গন্তব্যে। তিনি বলেন, ‘সবসময় ঘাট পর্যন্ত দেড়শ’ টাকা দিয়ে যাই। কিন্তু আজ তিনশত টাকা করে নিচ্ছে। কী করব, ভাড়া বেশি লাগলেও যেতে হচ্ছে। দূরপাল্লার বাসে নির্ধারিত ভাড়ায় না গিয়ে লোকালে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবহনে যেতে যে টাকা খরচ হবে লোকালে ভাড়া বেশি দিলেও তার থেকে কম টাকায় আগে পৌঁছাতে পারব।
সেলফি পরিবহনের যাত্রী রাজবাড়ীগামী মো. নাইম। অন্য লোকাল বাসে দুশ’ টাকা ভাড়া হলেও একশত টাকা বেশি দিয়ে সেলফিতে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য লোকাল বাস সারা রাস্তায় যাত্রী নেবে। সব জায়গা থামবে। আর সেলফি বাসে যাত্রী ফুল হয়ে গেলে আর কোথাও দাঁড়াবে না। টাইমে চলে সেলফি। ঠিক টাইমে ঘাটে নামিয়ে দেবে।
অনেক সময় অন্যান্য লোকাল গাড়ি মানিকগঞ্জ পর্যন্ত যায়। তারপর আর যায় না। যদি এখন মানিকগঞ্জ গিয়ে নামিয়ে দেয়, তখন আবার ঝামেলা। তাই একশত টাকা বেশি হলেও সেলফিতে যাচ্ছি।
এদিকে ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে সেলফি পরিবহনের এক টিকিট বিক্রেতা বলেন, সাধারণ সময়ের থেকে সব সময়ই ঈদের সময় ভাড়া কিছুটা বেশি হয়। এছাড়া এই সময় আমরা শুধু যাত্রী নিয়ে যাচ্ছি। আসার সময় আমাদের গাড়ি ফাঁকা আসছে। কোনো যাত্রী থাকছে না।
অন্যান্য লোকাল বাসের থেকেও ভাড়া বেশির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য গাড়ি থেকে অর্ধেক সময়ে আমাদের গাড়ি ঘাটে পৌঁছাবে। সারা রাস্তায় যাত্রী তুলবে। আর আমরা এখান থেকে যাত্রী নেব। সব আসন ফুল হয়ে গেলে একটানে ঘাটে চলে যাব। আর কোথাও থেকে যাত্রী তুলব না।
এভাবে ভাড়া বেশি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে গাবতলী টার্মিনালে দায়িত্বরত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ভিজিলেন্স টিমের সহকারী পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেব।
বিআরটিএর পাাশাপাশি ভোক্তা অধিকারের দুটো ভ্রাম্যমাণ আদালত মহাখালী গাবতলী ও সায়েদাবাদ টার্মিনালে অভিযান শুরু করলে কাউন্টারুগুলোতে শুরু হয় দৌড়াদৌড়ি।
কেউ কেউ মুুহূর্তেই আগের দামেই টিকিট বিক্রির মাইকিং শুরু করে। কেউ আবার কাউন্টার ছেড়ে অন্যত্র গা ঢাকা দেয়। তবে তিনটে টার্মিনালেই বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। আগামীকাল রবিবার পর্যন্ত চলবে এই অভিযান।