
ছবি: সংগৃহীত
কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন মোল্লা মার্কেটের ৬টি দোকানে তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রিয়াজ মুসল্লী নামের স্থানীয় এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। ঈদের আগমুহুর্তে দোকান বন্ধে চরম বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভোগী দরিদ্র দোকানিরা।
জানা গেছে, বন্ধ করে দেওয়া ৬টি মধ্যে ৩টি শুটকির, ২টি আচার-চকলেটের এবং ১টি কাপড়ের দোকান।
দোকানিরা জানান, ২৬ মার্চ রাতে দোকানপাট বন্ধ করে বাসায় যান তারা। পরের দিন (২৭ মার্চ) সকালে এসে দেখেন তাদের তালার উপরে নতুন তালা লাগানো রয়েছে। পরে তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মুসল্লী ও ঘরামিরা এই তালা দিয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ মুসল্লীর ছেলে রিয়াজ মুসল্লীর নেতৃত্বে দোকানগুলোতে তালা দেওয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। অভিযুক্ত রিয়াজ মুসল্লী কুয়াকাটার লতাচাপলী ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
দোকান বন্ধ করে দেওয়ায় দোকানিরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এভাবে দিনে-দুপুরে দখল-সন্ত্রাসের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরাও আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, নতুন করে তাদের সঙ্গে ভাড়াটিয়ার চুক্তি করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
এক ভুক্তভোগী আচার ও চকলেট দোকানি আল-আমিন জানান, তিনি প্রায় ৫ বছর আগে ৩ লাখ টাকা অগ্রিম জামানত দিয়ে মাসিক ৩ হাজার টাকা ভাড়ায় বেল্লাল মোল্লার কাছ থেকে ওই দোকান নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। গত বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকালে দোকান খোলার জন্য গিয়ে দেখেন দরজায় তার লাগানো তালার উপরে আরো একটি নতুন তালা দেওয়া রয়েছে।
তিনি আরও জানান, দোকানে তালা দেওয়ায় ঈদের বেচাকেনার প্রস্তুতি নিতে পারছেন না। মুসল্লী ও ঘরামিরা তাদের সঙ্গে চুক্তি করে দোকান চালানোর জন্য তালা দিয়েছে।
অন্য এক ভুক্তভোগী শুটকির দোকানি রেজা মোল্লা জানান, তিনি ৮-৯ বছর আগে ৩ লাখ টাকা জামানত ও মাসিক সাড়ে ৬ হাজার টাকা ভাড়ার চুক্তিতে বেল্লাল মোল্লার কাছ ওই দোকান নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন।
দোকানি নিজাম বেপারী জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি ব্যবসা করছেন। বেল্লাল মোল্লার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দোকান করছেন। গতকাল সকালে মুসল্লী বাড়ির লোকজন তালা দিয়েছে। তালার উপরে আবার কাঠ লাগিয়ে আটকে দিয়েছে, যাতে দোকান খোলা না যায়। তার ভ্যাষ্য, 'মালিকানার বিরোধ থাকলেও বেল্লাল মোল্লার সাথে তাদের (মুসল্লী বাড়ির লোকজন) বিরোধ। আমরা তো অনেক টাকা খরচ করে ভাড়া নিয়ে দোকান করছি। এখানে আমাদের কী অপরাধ? দোকানপাট বন্ধ করে দিলে সংসার চলবে কীভাবে?'
মোল্লা মার্কেটের সম্পত্তির দাবিদার বেল্লাল মোল্লা বলেন, 'এই জমি আমি ২৬-২৭ বছর আগে কিনেছি। এরপরও তো বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো। তখন দখল নেয়নি কেন? এ নিয়ে বহুবার কাগজপত্র নিয়ে বসা হয়েছে। আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।' তার দাবি, গায়ের জোরে তার ভাড়াটিয়াদের দোকানে তালা দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যুবদল নেতা রিয়াজ মুসল্লী বলেন, ‘ওই জমিতে সর্বপ্রথম আমাদের একটা ঘর ছিলো। ওই জমির মালিক আবার বাবা আজিজ মুসল্লীসহ আমার চাচারা। আমাদের সাড়ে ৩ শতক জমি রয়েছে। প্রায় ১৭ বছর আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল বারেক মোল্লা তা দখল করে পার্টি অফিস করেন। বাকি জমিতে মার্কেট করে ভাড়া দেন।'
তিনি আরও জানান, 'ওই জমি নিয়ে আমার বাবাকে চৌরাস্তায় মারধর করা হয়েছে। হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। তারপরও ৫ আগস্টের পরে আমাদের সঙ্গে নতুন করে ভাড়ার চুক্তির জন্য ওই ভাড়াটিয়াদের বহুবার কথা বলতে বলেছি, তারা শোনেনি। আমি মহিপুর থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী, পৌরসভার প্রশাসকের কাছে ঘুরেছি। কেউ কোনো সমাধান দেয়নি। তাই নিরুপায় হয়ে দোকান বন্ধ করে দিয়েছি। জোর করলে গত সাত মাস ধরে ঘুরতাম না।'
মহিপুর থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম জানান, তারা কেউ এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন।
মেজবাহউদ্দিন মাননু/রাকিব