ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৬ চৈত্র ১৪৩১

সড়কপথে যানবাহনের কিছুটা ধীরগতি ॥ ট্রেন ও লঞ্চ ছাড়ছে নির্ধারিত সময়ে

স্বস্তিতেই ঢাকা ছাড়ছেন রাজধানীবাসী

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ০০:৩২, ২৮ মার্চ ২০২৫

স্বস্তিতেই ঢাকা ছাড়ছেন রাজধানীবাসী

নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের উৎসব পালন করতে বাড়ির পথে সাধারণ মানুষ

পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ঢাকা ছাড়ছেন রাজধানীবাসী। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর প্রতিটি বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ছিল ঘরমুখো মানুষের ভিড়। সড়কপথে ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন মহাসড়কে যাত্রীদের কিছুটা যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে ট্রেন ও লঞ্চ যাত্রীদের ঈদযাত্রা স্বস্তি হলেও টিকিট সংকটে কিছুটা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।
সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রতিটি বাস কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর সংখ্যা আরও তীব্র হয়। প্রতিটি কাউন্টারে ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। গাড়ি কাউন্টারে আসতে দেরি হওয়ায় যাত্রীদের ভিড় বেশি দেখা গেছে। তবে প্রচ- ভিড়ের মধ্যেও যাত্রীদের বাড়ি ফেরা নিয়ে চোখে-মুখে অন্য রকম আনন্দের ঝিলিক দেখা গেছে।
রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকায় আফরিন জাহান নামের এক যাত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি সবার জন্য কেনাকাটা করেছি। এই অপেক্ষাটা মধুর যন্ত্রণার। কতক্ষণে ফিরব বাড়ি। প্রতিবারই ঈদযাত্রায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়, বেশিরভাগ সময়েই বাসের সিডিউল বিপর্যয়, কখনো সড়কে যানজট। এবার সেরকম কিছুই ঘটেনি।’
কল্যাণপুর এলাকায় প্রতিটি বাস কাউন্টারে ছিল যাত্রীদের ভিড়। সিডিউল অনুযায়ী সময়মতো বাস ছেড়ে যাওয়ায় স্বস্তিতে থাকা যাত্রীদের অস্বস্তিতে ফেলেছে লাগেজের ভোগান্তি। বেশিরভাগ কাউন্টারেই অধিকাংশ যাত্রীকে লাগেজ নিয়ে বাইরে অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী মনির নামের এক যাত্রী জানান, ‘যানজটের ভোগান্তি এড়াতে আগে রওনা দিয়েছিলাম। দুই ঘণ্টা আগে বাস কাউন্টার এসে পৌঁছেছি। কাউন্টার থেকে বলেছে, সিডিউলমতো বাস ছাড়বে। কিন্তু এই দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার মতো জায়গা নেই কাউন্টারে। বাধ্য হয়ে লাগেজ-ব্যাগ নিয়ে কাউন্টারের সামনে বসে পড়েছি।’
আব্দুস সালাম নামে দিনাজপুর রুটের এক যাত্রী বলেন, ‘মায়ের জন্য ঈদে বাড়ি যাওয়া। এবার বাবা নেই। মাকে সঙ্গ দিতেই বউ-বাচ্চা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। সকাল-সকাল রেডি হয়ে কাউন্টারে আসছি। ভালো লাগছে ছোট্ট বাচ্চা সালাউদ্দিনের জন্য। এবারই প্রথম দাদু বাড়ি যাচ্ছে ঈদ করতে।’
হানিফ বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা শামীম বলেন, এবার এখনো অনাকাক্সিক্ষত কিছু ঘটেনি। সড়কে চাপ বাড়ছে। তবে এখনো সিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। বাস যথাসময়েই ছেড়ে যাচ্ছে। তবে কাউন্টারে বাড়তি ভিড় রয়েছে। যানজট-ভোগান্তি এড়াতে হয়তো অনেকে আগে চলে এসেছেন কাউন্টারে। তাই চাপ বেড়েছে।
স্বস্তিতেই ঢাকা ছাড়ছেন ট্রেন যাত্রীরা ॥ ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চতুর্থ দিনের মতো ট্রেনে ঢাকা ছেড়ে গেছেন যাত্রীরা। গত ১৭ মার্চ যারা টিকিট কিনেছেন তারা বৃহস্পতিবার ট্রেনে যাত্রা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে ট্রেন যাত্রা ছিল বেশ স্বস্তিদায়ক। গত কয়েক দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার কমলাপুর রেল স্টেশনে যাত্রীর ভিড় ছিল বেশি। সকাল থেকে সব ট্রেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে ছেড়ে গেছে নির্ধারিত সময়ে।

ট্রেন ছাড়ার প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই স্টেশনে অপেক্ষা করছিল পঞ্চগড় অভিমুখী একতা এক্সপ্রেস। ট্রেনে উঠতে যাত্রীদের কোনো হুড়োহুড়ি করতে দেখা যায়নি। সবাই স্বস্তিতে যার যার সিটে বসে বাড়ি ফিরেছেন। তবে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে শুধু চিলাহাটি অভিমুখী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে ট্রেনে যাত্রীদের চাপ আরও বৃদ্ধি পায়। কারণ অনেক যাত্রী অফিস শেষ করে বিকেল ও রাতের ট্রেনে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। 
ঈদযাত্রায় ট্রেনের সূচি বজায় রাখা ও সিডিউল বিপর্যয় নিরসনে ঢাকাগামী ৯টি ট্রেনের বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি বাতিল করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঈদে সারাদেশে চলাচলকারী ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেনের বাইরেও রয়েছে পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন জানান, সাধারণত কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সবচেয়ে বেশি ঘরমুখো মানুষ ট্রেনযোগে ঈদযাত্রা করেন। এ কারণেই বাড়তি নজর রয়েছে কমলাপুরে। যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা সফল করতে আমরা বদ্ধপরিকর। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকাগামী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, চিলাহাটি ও বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকবে না। বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রী বেড়েছে।

আমাদের পরিকল্পনাও সেভাবে সাজানো হয়েছে। যাত্রী ভোগান্তি এড়াতে আমাদের এখানে (কমলাপুর স্টেশন) কোনো ট্রেন পৌঁছলে সেটি দ্রুত ছাড়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে ঈদ স্পেশাল ট্রেনও চলাচল করছে।
টিকিট ছাড়া রেলস্টেশনে প্রবেশ বন্ধ ॥ ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ২৪ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনেও রেলের নিরবচ্ছিন্ন যাত্রীসেবা মিলছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নেওয়া কঠোর নিরাপত্তা, সময়ানুবর্তিতা ও অতিরিক্ত ট্রেন পরিচালনার মাধ্যমে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্টেশনে চলছে সুশৃঙ্খল ঈদযাত্রা।
বৃহস্পতিবার কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। তবে চিলাহাটি অভিমুখী নীলসাগর এক্সপ্রেস কিছুটা দেরিতে কমলাপুর ছেড়েছে। যাত্রীদের রেলস্টেশনে প্রবেশের আগে তিন স্তরে তল্লাশি করা হচ্ছে। বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি চারটি পৃথক লাইনে টিকিট যাচাই করে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

স্টেশনের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করতে র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী টিকিট কাউন্টার, প্ল্যাটফর্ম ও প্রবেশপথে নিয়োজিত রয়েছে। প্ল্যাটফর্মে অপ্রয়োজনীয় ভিড় এড়াতে যাত্রীদের দ্রুত ওঠানামায় সহায়তা করা হচ্ছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া লোকাল, কমিউটার ও মেইল ট্রেন স্বাভাবিকভাবে চলছে। পাশাপাশি ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকাগামী নয়টি ট্রেনের বিমানবন্দর স্টেশনের যাত্রাবিরতি বাতিল করা হয়েছে। ঢাকামুখী ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ঢাকামুখী এবং ঢাকা স্টেশন থেকে জয়দেবপুরমুখী ট্রেনে টিকিট ইস্যু বন্ধ রাখা হয়েছে।
নৌপথে লঞ্চে কেবিন সংকট ॥ ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে বাড়ছে যাত্রীদের চাপ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিটি লঞ্চ যাত্রী বোঝাই করে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। কিন্তু লঞ্চে কেবিন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ৩৩টি যাত্রীবাহী লঞ্চ ছেড়ে গেছে ও ৫৬টি লঞ্চ ঢাকায় প্রবেশ করেছে বলে অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়।

×