ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৯ মার্চ ২০২৫, ১৫ চৈত্র ১৪৩১

পুলিশ প্লাজার সামনে

ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমন হত্যার মাস্টারমাইন্ড গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৭:৩৫, ২৬ মার্চ ২০২৫

ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমন হত্যার মাস্টারমাইন্ড গ্রেফতার

ছবি: জনকণ্ঠ

রাজধানীর গুলশান থানাধীন গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার সামনে ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার মূল হোতাসহ হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী ২জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত মাদক ব্যবসায়ী, অপহরণকারী, সন্ত্রাসী, এজাহারনামীয় আসামী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, প্রতারকচক্র, ধর্ষণকারী, পর্ণোগ্রাফি বিস্তারকারী, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। 

 বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) আনুমানিক রাত ২১.৩০ টায় রাজধানীর গুলশান থানাধীন গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার সামনে প্রকাশ্যে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গুলশান এবং বনানী এলাকার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমন মিয়া ওরফে সুমনকে  গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর ভিকটিম সুমন’কে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। উল্লিখিত হত্যা কান্ডের ঘটনায় গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয় (গুলশান থানার হত্যা মামলা নং-৩২, তারিখ-২১/০৩/২০২৫খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০)। 

উক্ত হত্যা কান্ডের ঘটনাটি দেশের বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার করা হয় এবং এটি সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-১, সিপিসি-১ এর একটি আভিযানিক দল উক্ত হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন এবং আসামীদের গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১, সিপিসি-১ প্রযুক্তিগত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এবং মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে মামলার রহস্য উদঘাটনে তৎপর হয়। জনৈক- মেহেদী মোঃ ওয়াসির মাহমুদ সাঈদ ওরফে বড় সাঈদ এর মাধ্যমে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে বিগত কয়েক বছর যাবত গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজী  করে আসছিল। 

বিগত ৫ই আগষ্ট ২০২৪ সালে সরকার পতনের পর মেহেদী পালিয়ে যায়। মেহেদী পালিয়ে গিয়ে তার বাহিনীর সদস্য মোঃ ওয়াসির মাহমুদ সাঈদ @ বড় সাঈদ এর মাধ্যমে গুলশান ও বাড্ডা এলাকার চাঁদা সংগ্রহ করত। কিন্তু সরকার পতনের পর অন্য একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রবিন গ্রুপের হয়ে সুমন গুলশান বাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজী শুরু করে। গুলশান এলাকার বিভিন্ন মার্কেটের দোকানে চাঁদাবাজীর উক্ত বিষয় নিয়ে মেহেদী গ্রুপের সাথে রবিন গ্রুপের সুমনের বিরোধের সৃষ্টি হয়। 

উক্ত বিরোধের কারণে মেহেদী গ্রুপের এর প্রধান মেহেদীর নির্দেশে সাঈদ সুমনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। মামলার ঘটনার অনুমান ৮/১০ দিন পূর্বে সাঈদ সুমনকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিল্লাল ও মামুনের নেতৃত্বে মেহেদী গ্রুপের ৪/৫ জন সন্ত্রাসী দিয়ে একটি কিলার গ্রুপ গঠন করে। মেহেদী গ্রুপের সদস্যরা প্রতিদিন সুমনের উপর নজর রাখে। ঘটনার দিন সন্ধ্যার সময় মেহেদী  গ্রুপের একটি কিলার গ্রুপ সাঈদ এর বাসায় মিটিং করে এবং তার বাসা হতে অস্ত্র নিয়ে গুলশান এলাকায় যায়। গুলশান এলাকায় গিয়ে সুমনকে গোপনে খুঁজতে থাকে এবং রাত্র অনুমান ২১.৩০ ঘটিকার সময় তার বাহিনীর সদস্যরা সুমনকে গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার সামনে ডাক্তার ফজলে রাব্বি পার্কের সামনে বসা অবস্থায় দেখতে পেয়ে গুলি করে। সুমন গুলি খেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তাকে আরো কয়েকটি গুলি করে। 

সুমনের মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা কৌশলে পালিয়ে যায়। র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মোঃ ওয়াসির মাহমুদ সাঈদ বড় সাঈদ (৫৯) ঘটনার পর গ্রেফতার এড়ানোর জন্য গা ঢাকা দিয়েছে। র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল বিষয়টি আমলে নিয়ে সাঈদকে গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।  

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ২৫ মার্চ দুপুর আনুমানিক ১৪.৩০ ঘটিকায় র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল র‌্যাব-৮ এর আভিযানিক দলের সহযোগিতায় ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মোঃ ওয়াসির মাহমুদ সাঈদ ওরফে বড় সাঈদ(৫৯), পিতা-মৃত এম এ আজিজ, মাতা-মৃত সালেহা বেগম, সাং-সঞ্জয়পুর, থানা-ঝালকাঠি সদর, জেলা- ঝালকাঠি এ/পি- রোড-১২, বাড়ী-১৩, লিংক রোড মধ্য বাড্ডা, ডিএমপি, ঢাকা’কে পটুয়াখালী থানাধীন পটুয়াখালী চৌরাস্তা এলাকা হতে আটক করা হয়। 

গ্রেফতারকৃত সাঈদ জানায় যে, এই কিলিং মিশনে মামুন ওরফে বেলাল সহ আরও কয়েকজন এই হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। সাঈদের তথ্য মতে একই তারিখ অর্থাৎ ২৫ মার্চ ২০২৫  ১৮.৪৫ ঘটিকায় মামুন ওরফে বেলাল (৪২), পিতা- মৃত আঃ কাদের, মাতা- ছাবিনা বেগম, সাং- মুরাদ নগর, থানা-মুরাদ নগর, জেলা- কুমিল্লা’কে গাজীপুর জেলার টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকা হতে আটক করে র‌্যাব-১। ঘটনার সাথে জড়িত বাকী পলাতক আসামীদের গ্রেফতার এবং উক্ত ঘটনায় ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। 
 

আজাদ/শহীদ

×