
পুরুষদের পছন্দ পাঞ্জাবি। শহরের একটি শপিংমলে ঘুরে ঘুরে পাঞ্জাবি দেখছে এক কিশোর
দেশের বিভিন্নস্থানে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। চলছে কেনাকাটার ধুম। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো-
ঝালকাঠি
ঝালকাঠিতে জমে উঠতে শুরু করেছে ঈদ বাজার। মুসলিম সম্প্রদায়ের এ বৃহত্তম উৎসবকে ঘিরে মার্কেটগুলোতে এখন সাজসাজ রব। পছন্দের পোশাকটি কিনতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। তবে দাম নিয়ে রয়েছে তাদের অসন্তোষ। গুণগত মানের কারণে দাম বেশি পড়ছে বলে দাবি করেছেন বিক্রেতারা। ঈদকে সামনে রেখে ঝালকাঠি শহরের মির্জাপুর মার্কেট, খান সুপার মার্কেট, আল মারজান, হাওলাদার সুপার মার্কেট, ঋতুরাজ শপিংকমপ্লেক্সসহ ছোট-বড় দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়েছে।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে এসব মার্কেটে। মার্কেটের মধ্যে মৌ ফ্যাশন, ঘোমটা, বধূয়া, হাসনেহেনা, ঝলক, আচল ও ভাই ভাই দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে সব ধরনের পোশাক। পুরুষের চেয়ে বিভিন্ন বয়সের নারী ও শিশুদের সমাগমই বেশি রয়েছে দোকানগুলোতে। পছন্দের পোশাকের মধ্যে মেয়েদের বিশেষ আকর্ষণ পাকিস্তানি থ্রি পিস, লেহাঙ্গা, ফারসি গারারা, সারারা, বারবি গাউন, শট গাউন, পার্টি ফোরক। পাশাপাশি সিল্ক ও সুতির থ্রি পিসসহ রং-বেরঙের শাড়ির চাহিদাও রয়েছে।
ছেলেদের পাকিস্তানি মুলতান, সুলতান ও আফগানিস্তানের রশিদ পাঞ্জাবির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট, পাজামাসহ আকর্ষণীয় পোশাকও রয়েছে শপিং মলে। তবে এ বছর দাম যেন আকাশ ছোঁয়া। পছন্দের পোশাকের দাম নাগালের বাইরে থাকলেও ঈদে নতুন পোশাক কিনতে তো হবেই। দুই হাজার থেকে দশ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে আকর্ষণীয় পোশাক।
যশোরে
যশোরের ঈদবাজারে রকমারি ডিজাইনের সব পাঞ্জাবির পসরা সাজানো হয়েছে। গরমের ভেতর ঈদ, এটি বিবেচনায় রং ও কাপড়েও আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। গরম বিবেচনায় আরামদায়ক কাপড়ের পাঞ্জাবি সংগ্রহে রেখেছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, গরমের কারণে হালকা রং ও কম কাজ করা সুতি পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। পাঞ্জাবির নকশায় গত বছর থেকে এ বছর একটু বেশি আধিক্য দেখা যাচ্ছে।
ছোট ছোট ফুল, বুকের দিকে হাল্কা কাজ। এক রঙের পণ্য বেশি, তবে ছাপা নকশার পাঞ্জাবিও চলছে। যশোরের দোকানগুলোতে এক রঙের কাপড়ে হাতা ও গলায় কাজ করা পাঞ্জাবির সংখ্যা বেশি। সাদা কাপড়ে সাদা সুতায় নকশা করা পাঞ্জাবিও আছে। এক রঙের কাপড়ে হাত ও গলায় হাল্কা নকশার পাঞ্জাবির প্রতি ক্রেতার আগ্রহ বেশি এমনটাই জানালেন ব্যবসায়ীরা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সিল্ক, লিলেন, রেমি কটন, ফাইন কটন, কটনের পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। গত বছরের মতো এবারও ডিজিটাল প্রিন্টের পাঞ্জাবি চাহিদা রয়েছে।
পাঞ্জাবির সামনে এমব্রয়ডারি, সুই-সুতার ভারি কাজের দেখা মিলছে বেশি। তা ছাড়া এবার জমকালো কাজের পাঞ্জাবিও রয়েছে অনেক। প্রতি পিস রঙিন ও সাদা পাঞ্জাবির দাম সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত, তবে খাদি কাপড়ের মধ্যে হাতে নকশা করা পাঞ্জাবির দাম একটু বেশি। যশোরের বাজারে বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের সুতির পাঞ্জাবি ৭শ’ থেকে ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কারুকাজ করা শর্ট পাঞ্জাবি ও লং পাঞ্জাবি ৯শ’ থেকে ২ হাজার টাকা দাম।
মটকা ও সিল্কের পাঞ্জাবি ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে কটন প্রিন্টেড পাঞ্জাবি ১ হাজার ২৯৯ টাকা, কটন এমব্রয়ডারি পাঞ্জাবি ১ হাজার ৪৫০ টাকা, কটন এমব্রয়ডারি পাঞ্জাবি ১ হাজার ৪৫০ টাকা, প্রিন্টেড কটন পাঞ্জাবি ৯৯৯ টাকা, সফট কটন এমব্রয়ডারি পাঞ্জাবি (সঙ্গে পায়জামা ফ্রি) এক হাজার ২৮০ টাকা।
মাগুরায়
মাগুরায় শেষ মুহূর্তে টুপি ও কসমেটিক, জুতা স্যান্ডেল দোকানে উপচেপড়া ভিড়। ক্রেতারা ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য টুপি ক্রয় করছেন। টুপির দোকানগুলো বর্তমানে জমজমাটভাবে কেচাকেনা চলছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় চারদিক মুখরিত হয়ে উঠছে। শহরের বেবী প্লাজা, নূরজাহান প্লাজা, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট, বকশী মার্কেট, সুপার মার্কেট, জুতা পট্টি, টোনাটুনি শপিং মল, হাজিপুর মার্কেট ও দোকানগুলোতে বাজার করতে দেখা যাচ্ছে।
গার্মেন্টস ও শাড়ি কাপড়ের দোকানগুলোতে প্রচুর ভিড় হচ্ছে। ক্রেতারা এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেট ঘুরে পছন্দের পণ্য ক্রয় করছেন। বর্তমানে ছিট কাপড়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে বেশি। জুতার দোকানগুলোতে ভালো ভিড়। নানা ডিজাইয়ের জুতা খুঁছছেন তরুণীরা। দর্জিরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নতুন পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। ফুটপাত জমে উঠেছে। সবকিছু মিলিয়ে মাগুরার ঈদ বাজার জমজমাট। গভীর রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। ঈদ উপলক্ষে শহর আলো ঝলমলভাবে সেজেছে।
সাটুরিয়া
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় জমে উঠেছে ঈদের বেচাকেনা। ঈদের বাকি আছে আর মাত্র কয়েকটা দিন। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিপণি বিতান, শপিং মল ও ফুটপাতের দোকানগুলো। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে সাটুরিয়া উপজেলা সদর বাজারের বিভিন্ন বিপণি বিতানে ঘুরে দেখা যায়, ঈদকে ঘিরে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ সকল শ্রেণির মানুষ কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বিশেষ করে কাপড়ের দোকানে প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ক্রেতাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাহারি ডিজাইনের পোশাক, যা স্থানীয় দোকানিরা বাজারের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সংগ্রহ করেছেন।
ঈদের বাজারে বিক্রেতাদেরও যেন দম ফেলার সময় নেই। তারা ক্রেতাদের সেবা দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দোকানিরা জানান, এ বছর বিভিন্ন ধরনের নতুন ডিজাইনের পোশাক এসেছে, যা ক্রেতাদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে মেয়েদের পোশাকের মধ্যে থ্রি পিস, নায়রা, অরগাঞ্জা, লেহেঙ্গা, স্কাট ও ফ্লোর টাচ ড্রেস রয়েছে। ছেলেদের পোশাকের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে জিন্স প্যান্ট, টি-শার্ট, ফতুয়া ও সুতি পাঞ্জাবি।
এ ছাড়া শাড়ির বাজারে রয়েছে কাতান, সিল্ক, তাঁত ও জামদানির সমাহার। সাটুরিয়া সদর বাজারের পোশাক ব্যবসায়ী জুয়েল আহমেদ বলেন, এ বছর পোশাকের ডিজাইনের ভিন্নতা এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দাম কিছুটা বেশি। তবে আমরা চেষ্টা করছি ক্রেতাদের সন্তুষ্ট রাখতে।শারমিন আক্তার নামের এক ক্রেতা বলেন, ১০ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলেন শপিং করতে। স্বামী, মেয়ে আর নিজের জন্য জামা কিনতেই সব টাকা শেষ।
ঈদ বাজার নির্বিঘœ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সাটুরিয়া থানার ওসি শাহিনুল ইসলাম বলেন, ঈদ উপলক্ষে বাজার ও শপিং মলগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের টহল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
নীলফামারীতে রেললাইনেই ঈদের বাজার
ঈদবাজারকে কেন্দ্র করে জীবনের গল্পটা যেন রেললাইন ঘিরেই ক্রেতা-বিক্রেতারা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। হুইসেল বাজিয়ে যখন ট্রেন চলে আসে তখন সব কিছু টানাটানি করে সরে যেতে হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন জীবনমানেই যন্ত্রণা। ব্যবসা না করলে খাব কি? এভাবেই যতদিন পারি জীবন সংসার টেনে নিয়ে যেতে হবে।
আর ক্রেতারা বলছেন বড় বড় দোকানে ঈদের জামা-কাপড়ের যে দাম-ওই জামা কাপড় রেললাইনের দোকানে এসে কিনতে হয় কম দামে। উত্তরাঞ্চলের বড় ব্যবসা বাণিজ্য শহর নীলফামারীর সৈয়দপুর। শহরজুড়ে দেড় কিলোমিটার রেলপথ। এ জটলার বাজার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে। আগে থেকেই এখানে বাজার বসে আসছে। এবার ঈদের কাপড়-চোপড়, বেল্ট, স্যান্ডেল, জুতা, কসমেটিকস, দুল-ফুলের দোকান, প্যান্ট, শার্ট, লেপ-তোষক, ফল, ভ্যানিটি ব্যাগ, মানি ব্যাগসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান বসছে। এর আগে এ জায়গায় বেশ ক’জন প্রাণ হারিয়েছেন।
এবারও জটলায় দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সৈয়দপুর-চিলাহাটি, সৈয়দপুর-পার্বতীপুর রেলপথে প্রতিদিন আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেন মিলে ১২টি ট্রেন যাতায়াত করে থাকে। যাতে বাজার বসতে না পারে, সে জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেললাইনের দুই পাশে বেরিয়ার নির্মাণ করে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। তবুও লোকজন এসব তোয়াক্কা করছেন না।
সৈয়দপুরের স্টেশন মাস্টার ওবায়দুল ইসলাম বলেন, অস্থায়ী বাজারটি উচ্ছেদে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। কয়েকবার উচ্ছেদও হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না। নতুন করে আবার বাজার বসে। সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ-উন নবী বলেন, আমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেছিলাম। রেললাইনের ওপর থেকে বাজার সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছি। এরপর আমরা উচ্ছেদসহ আইনগত ব্যবস্থা নেব।