
মাহে রমজানের আজ ২৫তম দিবস
মাহে রমজানের আজ ২৫তম দিবস। আগামীকাল পবিত্র শবে কদর। ইবাদত বন্দেগির বিশ্ব রজনী। বছরে যে পাঁচটি রাত মুমিনরা বেশি পরিমাণে ইবাদত বন্দেগিতে শামিল হন, বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করতে পরম আনন্দ বোধ করেন, পবিত্র শবে কদর এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেগঘন ইবাদতের রজনী। এ ধরনের ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে আমাদের মধ্যে অনন্তকাল আখিরাতের কথা মনে পড়ে।
পরকালীন ভয়, কবর জীবনে একাকিত্ব ও জবাবদিহিতার পেরেশানি একজন মানুষকে দুনিয়াতে শত সুন্দর পথের অভিসারী করে তোলে। দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যে সেতু রচনা করে কবর জীবন। আল্লাহওয়ালা মুমিন মানুষের জন্য কবর জীবনও শান্তির এবং করুণাময় খোদা তায়ালার পক্ষ থেকে নানা নাজনেয়ামত গ্রহণের।
ইবনে আবদুল বার বলেছেন : হজরত নবী করীম (স.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, কোনো মুসলমান যখন তার ভাইয়ের কবরের কাছ দিয়ে যায়, যাকে (দুনিয়ার জীবন থাকাকালে) সে চিনত এবং তাকে সালাম দেয়, তখন আল্লাহ তায়ালা তার আত্মাকে ফিরিয়ে দেন, যতক্ষণ না সে ওই সালামের উত্তর দেয়।’
এর দ্বারা জানা যায় যে, মৃত ব্যক্তি তার দর্শনার্থীদের হুবহু চিনতে পারে এবং তার সালামের উত্তর দেয়। বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে বিভিন্ন সনদের মাধ্যমে হজরত নবী করীম (স.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি (স.) বদর যুদ্ধে কাফিরদের লাশ একটি গর্তে নিক্ষেপ করার জন্য আদেশ দেন।
তারপর তিনি ওই গর্তের কাছে এসে দাঁড়ান এবং নাম ধরে তাদের সম্বোধন করে বলতে থাকেন- হে অমুক ব্যক্তির ছেলে অমুক, তোমরা কি তোমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সঠিক পেয়েছ? আমি তো আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতিকে সঠিক পেয়েছি। তখন হজরত উমর (রাদি:) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (স.)! আপনি কি এমন লোকদের সম্বোধন করে কথা বলেছেন, যারা লাশে পরিণত হয়েছে? নবী করীম (স.) বললেন, শপথ ওই সত্তার! যিনি আমাকে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন, আমার কথাগুলো তোমরাও তাদের চাইতে বেশি শুনতে পাও না, কিন্তু তারা উত্তর দিতে পারে না।’
হজরত নবী করীম (স.) হতে এও প্রমাণিত আছে যে, কাউকে দাফন করার পর লোকেরা যখন ফিরে যেতে থাকে, তখন ওই মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়।
এ ছাড়াও হজরত নবী করীম (স.) তাঁর উম্মতকে এ শিক্ষা দিয়েছেন যে, যখন তারা কবরবাসীকে সালাম করে, তখন যেন তাদের সম্বোধন করেই সালাম করে অর্থাৎ তারা যেন বলে, আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাদ দিয়ার কাউমিম মু’মিনীন... (হে কবরবাসী মু’মিনগণ! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)! আর এ ধরনের সম্বোধন তাদেরকেই করা হয়, যারা শোনে ও বোঝে।
অন্যথায় এই সম্বোধন তো অস্তিত্বহীন বস্তু ও জড় পদার্থকে সম্বোধন করারই অনুরূপ। এর ওপর পূর্ববর্তী বিজ্ঞজনেরা একমত। তাদের থেকে পরম্পরায় বর্ণিত হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তি তার কবর জিয়ারতে যে আসে, তাদের চিনতে পারে এবং তাদের দেখে উল্লাসিত হয়ে ওঠে।
হাদিসে আছে, আলে আসিম আল্ যাহদরীর স্বগোত্রীয় জনৈক ব্যক্তি বলেছেন, আমি আসীম যাহদরীকে, তার মৃত্যুর দু’বছর পর স্বপ্নে দেখলাম। আমি তখন বললাম, আপনি কি দুনিয়া থেকে চলে যাননি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যা আলবত। আমি বললাম, এখন আপনি কোথায় আছেন?
তিনি উত্তর দিলেন, জান্নাতের একটি বাগানে আছি। আমি এবং আমার কয়েকজন সঙ্গী প্রত্যেক জুমআর রাতে এবং জুমআর সকালে বকর ইবনে আবদুল্লাহ মুখনীর (রহ.) কাছে সমবেত হই এবং তোমাদের অবস্থাদি সম্পর্কে অবহিত হই। আমি তখন জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কি সশরীরে সমবেত হন, না আপনাদের আত্মা সমবেত হয়? তিনি উত্তর দিলেন, আমাদের দেহ তো বিলুপ্ত হয়ে গেছে, অতএব, আত্মাগুলো এখন পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমরা যে আপনাদের জিয়ারত করতে যাই, তা কি আপনারা অনুভব করতে পারেন? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, জুমার সমস্ত দিন এবং শনিবার সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত আমরা তা অনুভব করতে পারি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, অন্যান্য দিন ব্যতীত শুধু এই দুই দিনে কেন? তিনি উত্তর দিলেন, জুমার দিনের প্রকৃষ্টতা ও মহাত্ম্যের কারণে।’
পবিত্র জুমার দিনের উসিলায়, মাহে রমজানের শবে কদরের উসিলায় আল্লাহ পাক আমাদের কবর জীবনে শান্তি দান করুন। আর আমাদের মরহুম পিতামাতা ময়মুরুব্বিদের কবরসমূহ বেহেশতি ঘ্রাণে সুশোভিত করুন।