ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

চার বছর পর চাকুরি ফিরে পেলেন ফ্যাসিবাদের শিকার বিমানের ক্যাপ্টেন মাহবুব

প্রকাশিত: ১৭:০১, ২৫ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৭:০৩, ২৫ মার্চ ২০২৫

চার বছর পর চাকুরি ফিরে পেলেন ফ্যাসিবাদের শিকার বিমানের ক্যাপ্টেন মাহবুব

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

চাকুরি ফিরে পেলেন বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ে চাকুরিচ্যুত বিমানের সিনিয়র ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান। দীর্ঘ চার বছরের আইনি ও প্রশাসনিক লড়াইয়ের পর তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়েছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।


বাপা জানিয়েছে- ২০২১ সালে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তিনি তখন বিমানের পাইলটদের সংগঠন বাপা-এর সভাপতি ছিলেন এবং বেতন বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলেন। সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য পাইলটরা তাদের প্রাপ্য বেতন পেলেও মাহবুবুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়, যা শ্রম আইন ও সংবিধানের পরিপন্থী ছিল বলে দাবি করেছে বাপা।

এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে- “দেরিতে হলেও বিমানের এই সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়। তার চাকরির পুরো মেয়াদকাল ও জ্যেষ্ঠতা স্বীকৃত হয়েছে, যা ন্যায় বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। বাপা বিমানের বোর্ড ও কর্তৃপক্ষকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং দাবি করেছে, মাহবুবুর রহমানের বরখাস্তকালীন সময়ের সমস্ত বকেয়া বেতন দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করে বিমান। তাকে চাকরিচ্যুত করার চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের আর্টিকেল ৫৯(বি) অনুযায়ী বিমানের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আবু সালেহ মোসতাফা কামাল এই চাকরিচ্যুতির আদেশ দিয়েছেন। গত ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিমানের ২৬৫তম বোর্ড সভায় বিমানের এমডিকে চাকরিচ্যুতির আদেশ প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া হয়। 


বিমান জানিয়েছে-২০২০ সালের মে মাস থেকে বিমানের পাইলটদের তাদের বেতন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে ২০২১ সালের ১৩ জুলাই বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দীন আহমেদের একটি অফিস আদেশে সংস্থাটির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। কিন্তু পাইলটদের বেতন কাটার বিষয়টি বহাল থাকে। এরপর থেকেই ক্ষুব্ধ হন পাইলটরা। বেতন সমন্বয় না হলে বিমানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনা না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। আন্দোলনে সৌদি আরবের দাম্মাম, কাতারের দোহা, আবুধাবি ও দুবাই রুটে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে বিমানের এমডির আশ্বাসে সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন তারা। বেতন সমন্বয় না করায় অক্টোবরে আবারো কর্মবিরতির ডাক দেন পাইলটরা। অনিশ্চয়তায় পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইট। বিমানের কোটি কোটি টাকার বিক্রিত টিকেট ফেরত দেন যাত্রীরা। বাপার সভাপতি হিসেবে পাইলটদের পক্ষে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান।

তার চাকরিচ্যুতির প্রকৃত কারণ উল্লেখ না করলেও বিমান জানায়, আন্দোলনের অংশ হিসেবে পাইলটরা মাসে ৭৫ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইট পরিচালনা এবং ৮ দিনের কম ডে-অফ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এর ফলে বিমানের কাতার, দুবাই, ওমান ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট সিডিউল লণ্ডভণ্ড হয়েছে। বাপা সভাপতির নেতৃত্বে পাইলটরা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কৃত্রিম পাইলট সংকট তৈরি করে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে।

শিহাব

×