
ছবিঃ সংগৃহীত
সরকার সাধারণ জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছে। ঈদে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ৮ম সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সভায় কমিটির সদস্যগণ অংশগ্রহণ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, আজকের সভায় মূলত সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, বিশেষ করে আগামীকাল স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং আসন্ন পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। তিনি জানান, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, দেশবিরোধী ও ধ্বংসাত্মক আন্দোলন-সমাবেশে উসকানিদাতাদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি, টহল জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি আরও বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঈদ নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো এবং আবাসিক হোটেল ও বস্তিতে অভিযান বৃদ্ধির সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, ঈদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সড়ক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ অধিদপ্তর এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। সকল কন্ট্রোল রুম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় Joint Operation Center (01320001223) এর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবে।
ঈদে ট্রাফিক ও যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, যমুনা সেতু, পদ্মা সেতু ও ফ্লাইওভারসহ টোলপ্লাজাসমূহে যানজট নিরসনে ইটিসিসহ (Electronic Toll Collection) দ্রুত টোল আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহনকারী বা যাত্রীবাহী যানবাহন ছাড়া, নির্মাণ সামগ্রী বহনকারী এবং লম্বা যানবাহনসমূহকে ঈদের পূর্বের তিন দিন এবং পরের তিন দিন মহাসড়কে চলাচল না করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাত্রী পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে সড়ক, নৌ এবং রেলপথে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই না করা হয় এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ/দপ্তর/সংস্থাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাত্রী সাধারণকে সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ অপরাধমূলক কার্যক্রম রোধে ইউনিফর্মধারী পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন, বিশেষ বিশেষ রাস্তায় ও মোড়ে চেকপোস্ট স্থাপন, টাকা স্থানান্তরে মানি এস্কর্ট প্রদান, জাল টাকার বিস্তার রোধ এবং শনাক্তকরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ঈদের ছুটির পূর্বেই গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, শিল্প কারখানা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী মালিক, শ্রমিক এবং বহিরাগতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট - 'জিরো টলারেন্স'। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধর্ষণসহ সকল ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং কঠোর শাস্তির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত হলেও তা নিশ্চিত ও যথাযথ হতে হবে, সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
মারিয়া