
ছবি:সংগৃহীত
মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে, আগামী ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস চীন সফরে যাচ্ছেন। চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের পাঠানো বিশেষ বিমানে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন। আঞ্চলিক পরিস্থিতির পরিবর্তন এবং ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্য দিয়ে এই সফর ভূরাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন মন্তব্য করেছেন যে, ড. ইউনুসের বেইজিং সফরে বিশেষ কিছু ঘোষণা আসতে পারে এবং এই সফর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে গণ্য হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধান উপদেষ্টার এই সফর বাংলাদেশের জন্য বেশ কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিক থেকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের কারণে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে শুল্কের বোঝা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে চীনা বিনিয়োগকারীরা বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র পুনঃস্থাপন করতে চাইছেন। ড. ইউনুসের চীন সফরের পর বাংলাদেশে একটি বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে ২০০ চীনা বিনিয়োগকারীর সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ থাকবে। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় একটি চীনা স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিদেশী বিনিয়োগের দরজা খুলে দেবে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোলার প্যানেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান লঙ্গি, চীনের একটি প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশে সোলার প্যানেল উৎপাদনে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যাপক বাজার রয়েছে এবং এই খাতে চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশের শক্তি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশের রোগীরা ভারতে ভিসা জটিলতার কারণে চিকিৎসা নিতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এর মধ্যে চীন বাংলাদেশের রোগীদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। চীনের হাসপাতাল চেইনগুলো বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণে আগ্রহী এবং বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে কুনমিং সিটিতে চারটি ডেডিকেটেড হাসপাতাল স্থাপন করবে।
বাংলাদেশ তিস্তা নদী ইস্যুতে চীনের সহযোগিতা চাচ্ছে, যা বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলতে পারে। চীনের সহযোগিতা নদী ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ড. ইউনুসের চীন সফর রোহিঙ্গা সংকটের পুনর্বিবেচনার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পরিবর্তিত হওয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনে চীনের সহায়তা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
ড. মোহাম্মদ ইউনুসের চীন সফর বাংলাদেশের কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বৈশ্বিক জোটের পরিবর্তনের মধ্যে, এই সফর বাংলাদেশের কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
আঁখি