ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের সহায়তায় জেআরপি বৈঠক

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ১০০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:১৮, ২৫ মার্চ ২০২৫

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ১০০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একশ’ কোটি ডলার সাহায্য চেয়েছে জাতিসংঘ

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সহায়তার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একশ’ কোটি ডলার সাহায্য চেয়েছে জাতিসংঘ। জয়েন্ট রেসপন্স প্যান (জেআরপি) বৈঠকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট মোকাবিলায় ২০২৫-২৬ মেয়াদের জন্য প্রায় একশ’ কোটি ডলার সহায়তার আবেদন করেন। সোমবার জেনেভায় অংশীজনদের সঙ্গে জেআরপির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই আহ্বান জানানো হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফেরত যেতে চান বলে মহাসচিবকে জানিয়েছেন স্থানীয় রোহিঙ্গারা। তাদের নিরাপদে মিয়ানমার প্রত্যাবর্তনের জন্য জেআরপি অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছিলেন রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, আর্থিক সম্পদ হ্রাস এবং প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে তারা এবং ১০০টিরও বেশি অংশীদার রোহিঙ্গা সংকটের জন্য ২০২৫-২৬ সালের যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা চালু করছে। সেখানে বলা হয়েছে আবেদনটি রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় সম্প্রদায়সহ প্রায় ১.৪৮ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রথম বছরে ৯৩৪.৫ মিলিয়ন ডলার সাহায্য চায় তারা।
অনুষ্ঠানে খলিলুর রহমান বলেন, রাখাইনে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে এবং আরাকান আর্মি ওই প্রদেশের বড় ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তিনি বলেন, বর্তমানে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে এবং প্রতি বছর ৩০ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করছে। রাখাইনে সংঘর্ষের কারণে গত কয়েক মাসে আরও ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে।
রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি আহ্বান জানান এবং এর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার বলে উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য জেআরপির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ২০২৫-২৬ প্রথমবারের মতো দুই বছরের জন্য জেআরপি তৈরি করা হয়েছে যা দীর্ঘস্থায়ী এই সংকটের যাত্রা এবং বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে। এটি দাতাদের দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার সুযোগ করে দেবে। ২০২৬ সালের পরিকল্পনাগুলো পরিস্থিতির বিবেচনায় পরবর্তী সময়কে নির্ধারণ করা হবে।
জেআরপি ২০২৫-২৬ মেয়াদের লক্ষ্য ॥ জেআরপি ২০২৫-২৬ মেয়াদে পাঁচটি প্রধান লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, দ্রুত ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য কাজ করা, রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, ছেলে-মেয়েদের সুরক্ষা ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করা, ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রদান করা, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধন করা, দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা জোরদার এবং জলবায়ুু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা।
জেআরপির অর্থ কোন খাতে ব্যবহার হবে ॥ জেআরপির তহবিলে আটটি খাতের অগ্রাধিকারভিত্তিক কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, আশ্রয়ণ, পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি, সুরক্ষা, শিক্ষা এবং জীবিকা ও দক্ষতা উন্নয়ন।
তবে এটি কক্সবাজার ক্যাম্প এবং ভাসানচরে বসবাসকারী শরণার্থী জনগোষ্ঠী বা কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিশাল চাহিদার সম্পূর্ণ প্রতিফলন নয়।
এর মধ্যে কিছু এনজিও এবং অন্যান্য কৌশলগত অংশীদার জেআরপি কাঠামোর বাইরে তহবিল সংগ্রহ করে, যা জেআরপির কৌশল, পরিকল্পনা ও কর্মসূচির পরিপূরক হিসেবে কাজ করে (যেমন- এমএসএফ, রেড ক্রস/ রেড ক্রিসেন্ট পরিবার, এএফএডি এবং তুর্কি এনজিও)।
জেআরপি’র অংশীদার ॥ জেআরপির দুই ধরনের অংশীদার রয়েছে। এর মধ্যে তহবিলের জন্য আবেদনকারী অংশীদার ‘অ্যাপিলিং পার্টনার বা আবেদনকারী সংস্থা’ এবং যারা আবেদনকারী সংস্থার মাধ্যমে নির্বাচিত হচ্ছে নির্দিষ্ট কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে।
২০২৫ সালের জেআরপির মোট ১১৩টি অংশীদারের মধ্যে রয়েছে ৫৬টি বাংলাদেশী এনজিও, ৩৩টি আন্তর্জাতিক এনজিও, ১১টি জাতিসংঘের সংস্থা এবং ১৩টি অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।
২০২৫-২৬ সালের জেআরপি বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওসহ ১১৩টি সংস্থাকে সমন্বিত করেছে। এর মূল লক্ষ্য হলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। একইসঙ্গে কক্সবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেও সহায়তা প্রদান করা।
জেআরপির উপকারভোগীরা ॥ জেআরপি ২০২৫-২৬’র আওতায় সরাসরি সুবিধাভোগীদের মধ্যে কক্সবাজার ও ভাসানচরের ক্যাম্পে বসবাসকারী ১০ লাখ ৯০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং কক্সবাজার জেলার প্রায় ৩ লাখ ৯২ হাজার স্থানীয় জনগোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত। সংকটের ফলে আর্থিক, সামাজিক, নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ক্ষতির মুখে থাকা এসব স্থানীয় জনগণ মানবিক সহায়তা ও সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। এই সহায়তা আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশীদারের বহুবর্ষীয় উন্নয়ন কার্যক্রমের পরিপূরক, যা কক্সবাজার জেলার উন্নয়ন ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয়জনিত প্রভাব কমাতে সহায়তা করছে।
জেআরপি তহবিল ॥ ২০২৫ সালের প্রয়োজনভিত্তিক কার্যক্রমের জন্য মোট একশ’ কোটি ডলার তহবিল প্রয়োজন যা সদস্য রাষ্ট্র ও বেসরকারি দাতাদের কাছ থেকে আসবে। জেআরপি একটি অর্থায়নকৃত কর্মসূচি নয় বরং এটি ১১৩টি মানবিক অংশীদারের (যার মধ্যে ৫৬টি বাংলাদেশী এনজিও) পক্ষ থেকে একটি আবেদন, যা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জরুরি মানবিক সহায়তা ও তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও ক্ষুদ্র আয়ের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য করা হচ্ছে।
২০২৫ সালের জন্য জেআরপি বরাদ্দের আনুমানিক ৪০ শতাংশ (৩৮ কোটি ডলার কক্সবাজার ও ভাসানচরের জন্য) জরুরি জীবন রক্ষাকারী কার্যক্রমে প্রয়োজন। ২০২৪ সালের জেআরপি আবেদন ছিল ৮৫ কোটি ডলার, যার মধ্যে ৫৬ কোটি মার্কিন ডলার (৬৫ শতাংশ) তহবিল পাওয়া গিয়েছিল। অর্থের এই ঘাটতির কারণে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা হ্রাস করতে হচ্ছে, যা রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, পুষ্টি ও সামগ্রিক কল্যাণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এই ইভেন্টে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দেন রোহিঙ্গা সমস্যা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলির হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ।

×