ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ২৪ মার্চ ২০২৫

অগ্নিঝরা মার্চ

২৫ মার্চ, ১৯৭১

২৫ মার্চ, ১৯৭১। ভেস্তে যায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমঝোতা বৈঠক। আলোচনা নয় বরং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই ছিনিয়ে আনতে হবে মহার্ঘ স্বাধীনতা। একাত্তরের এদিন বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠেও উচ্চারিত হয়- আমরা আর মুখ বুজে সহ্য করব না। এবার আঘাত এলে হানা হবে পাল্টা আঘাত। সে লক্ষ্যে প্রতিটি বাঙালিকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 
একাত্তরের এদিনটিও ছিল আন্দোলনমুখর। কিন্তু বাঙালি জাতি সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বুঝতে পারেনি আর কয়েক ঘণ্টা পর নেমে আসবে অমানিশার অন্ধকার। বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরই গণহত্যার হুকুম দিয়ে বাংলাদেশের মাটি ত্যাগ করে পাকিস্তানে ফিরে যান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধুও কয়েকদফা বৈঠক করেন দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে। আর রাতেই বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন আন্দোলনকে চিরদিনের মতো স্তব্ধ করে দিতে পাক হানাদাররা চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। 
সেই রাতের আক্রমণের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না বাঙালিরা। একাত্তরের অগ্নিঝরা এদিনে বাঙালি জাতি তথা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিল ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংসতা। গণহত্যার নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানি দানবরা মেতে ওঠে নির্বিচারে স্বাধীনতাকামী বাঙালি নিধনযজ্ঞে। এ রাতেই বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম মুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করেছিল বিশ্ববাসী। ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে মাত্র এক রাতেই হানাদাররা হত্যা করেছিল হাজার হাজার ঘুমন্ত বাঙালিকে। 
কিন্তু ওই ভয়ঙ্কর রাতে বসে থাকেনি বীর বাঙালিরা। মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী হয়ে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সম্মুখসমরে পুলিশ বাহিনীর অস্ত্রগুলো গর্জে উঠেছিল আজ থেকে ৫৪ বছর আগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাযজ্ঞের পর পাক হানাদাররা আঘাত হানে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে। 
ব্যারাক থেকে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা তালাবদ্ধ অস্ত্রাগার ভেঙ্গে হাতে তুলে নেন অস্ত্র ও গুলি। গড়ে তোলে সশস্ত্র প্রতিরোধ। দু’পক্ষের মধ্যে চলে প্রচ- গোলাগুলি। কিন্তু পাক বাহিনীর অত্যাধুনিক মেশিনগান, মর্টার ও হেলিকপ্টার গানশিপের প্রচ- আক্রমণে পুলিশ বাহিনী বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি।

সশস্ত্র প্রতিরোধে পাক হানাদারদের হামলায় দুজন ডিআইজিসহ অসংখ্য পুলিশ সদস্য শহীদ হন। রাতভর চলে লুটপাট। আর গ্রেপ্তার পুলিশ সদস্যদের ওপর চলে নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশের হেডকোয়ার্টার। 
এক রাতেই রাজারবাগ পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। রাজারবাগ আক্রান্ত হওয়ার পরপরই ওয়্যারলেস বা বেতারযন্ত্রের অপারেটর কনস্টেবল মোঃ শাহজাহান মিয়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজ উদ্যোগে ইংরেজিতে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের বার্তাটি দেশের সব থানায় পাঠিয়ে দেন। 
২৫ মার্চ তিনি তাঁর বার্তায় বলেন, ‘বেইজ ফর অল স্টেশন্স অব ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ, কিপ লিসেন অ্যান্ড ওয়াচ, উই আর অলরেডি অ্যাটাকড বাই পাক আর্মি। ট্রাই টু সেভ ইয়োরসেল্ভস, ওভার।’ রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বেতারযন্ত্রটির মাধ্যমে সারাদেশে এই বার্তা প্রচার করেন। রাজারবাগের জাদুঘরে  সেই বেতারযন্ত্রটি স্থান পেয়েছে।
জাতি আজ শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে গণহত্যার শিকার সব বীর বাঙালিকে। গণহত্যা দিবস স্মরণে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা আর পাক হানাদারদের ঘৃণ্য হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাবে। গণহত্যা দিবসে তাই এবার বাঙালি জাতি আজ হৃদয় থেকেই কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে শহীদ বীর বাঙালিদের।

×