
পবিত্র মাহে রমজানের ২৪তম দিবস
আজ মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিলের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র মাহে রমজানের ২৪তম দিবস। রমজান মাসে কুরআন তিলাওয়াতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কুরআনুল কারীম হলো এক অফুরন্ত শিক্ষা ভাণ্ডার। এতে রয়েছে মানুষের চলার পথের বিভিন্ন হুকুম আহকাম। এ সঙ্গে এ পবিত্র গ্রন্থে স্থান পেয়েছে বহু দুর্লভ ইতিহাস, সৃষ্টিরহস্য, নানা সভ্যতা ও ধ্বংসযজ্ঞের যুক্তিনির্ভর ও আকর্ষণীয় আলোচনা।
আল কুরআনের একটি সূরার নাম ‘লাহাব’। হুজুরে পুর নূর (স.) এর একজন চরম শত্রুকে উদ্দেশ করে এ সূরা নাযিল হয়। তার নাম আবু লাহাব। আবু লাহাব এবং তার স্ত্রী উম্মে জামিল আল্লাহর নবী (স.)-কে উৎপীড়ন ও কষ্টদানের মধ্যেই শান্তি খুঁজে পেত। প্রত্যেক সমাজে এমন কিছু মানুষ নামের কীট থাকে, যারা অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজেরা আত্মতৃপ্তি অনুভব করে। অন্যের ক্ষতিসাধনে সদা থাকে তৎপর। কিন্তু তাদের আখের বা পরিণাম কখনো ভালো হয় না।
এ রমজান মাসেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর মহান নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সঙ্গে ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী আবু লাহাবকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছিলেন। যার ওপর আল্লাহ না’রাজ হন, তার ধন-দৌলত থেকেও তাকে কোনো ধরনের ‘রক্ষার’ উপকরণ হয় না। আবু লাহাবের মৃত্যুর কুরআনিক বর্ণনা সে ইঙ্গিত বহন করে।
রমজানের রোজা যে বছর ফরজ হয়, সে বছরেই আবু জেহেল আবু লাহাবদের সঙ্গে ইসলামের প্রথম সংঘাত ‘বদর যুদ্ধ’ সংঘটিত হয় খৃ. ৬২৪ সালে। এর এক সপ্তাহ পর অর্থাৎ ২৪ রমজান আবু লাহাব মারা যান। তিনি ছিলেন হযরত আবদুল মুত্তালিবের অন্যতম সন্তান। জাতের ঘরে কুজাত। উল্লেখ্য, আবদুল মুত্তালিব হলেন রাসুলুল্লাহ (স.) এর দাদাজান।
প্রিয় নবী (স.) ও তাঁর অনুসারীদের অবর্ণনীয় কষ্টদানের জন্য আল্লাহ তায়ালা সংশ্লিষ্ট সূরায় আবু লাহাবের সর্বাত্মক ধ্বংসের ঘোষণা দেন। বলা হয়েছে: তাব্বাত ইয়াদা আবী লাহাব - অর্থাৎ আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক, এবং ধ্বংস হোক সে নিজে। কোনো কাজে আসেনি তার ধনসম্পদ—-।
বদর যুদ্ধের ৭ দিন পর তার গলায় প্লেগের ফোড়া দেখা দেয়। সংক্রমণের ভয়ে পরিবারের সদস্যরা তাকে নির্জন জায়গায় ফেলে আসে। শেষ পর্যন্ত এখানেই অতি অসহায় ও করুণ অবস্থায় মৃত্যু ঘটে। তিনদিন পর্যন্ত তার মৃতদেহ কেউ স্পর্শ করেনি। পচন শুরু হলে চাকর-বাকর গিয়ে তাকে মাটিচাপা দেয়। - (বয়ানুল কুরআন)।
মৃত্যুকালে তার ধনসম্পদ কোনো কাজে তো আসেইনি বরং পরবর্তীতে সংসারে স্ত্রী-পুত্র পরিজনে নিয়ে আসে অসন্তোষের আগুন। একইভাবে আবু লাহাব ও তার স্ত্রী যে কাঁটাযুক্ত গাছ দিয়ে হযরত মুহাম্মদ (স.) এর পথে বাধা সৃষ্টি করত ঠিক একইরকম কণ্টকযুক্ত কাঠের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তাদেরকে দোজখে প্রজ্বালিত করার জন্য। - (মাআরিফুল কুরআন)।
আমরা যেন কখনো দ্বীনের নুকসানি করে, প্রিয় নবী (স.) এর অবাধ্য হয়ে কিম্বা ধন-সম্পদের মোহে মত্ত হয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান না করি। এর পরিণাম ইহ পরকালে কোথাও মঙ্গলজনক নয়।