ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের সাথে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে এক কাতারে রাখায় একমত নয় বিএনপি

প্রকাশিত: ২০:০৬, ২৩ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২০:০৭, ২৩ মার্চ ২০২৫

সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের সাথে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে এক কাতারে রাখায় একমত নয় বিএনপি

ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে একই কাতারে আনার প্রস্তাবে দ্বিমত জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দেওয়া সংস্কার সংক্রান্ত মতামতে এসব বিষয় স্পষ্ট করেছে দলটি।

রবিবার (২৩ মার্চ) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের কাছে এ মতামত জমা দেয় বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এ মতামত জমা দেয়। প্রতিনিধি দলের অপর সদস্য ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল হোসেন জবিউল্লাহ।

মতামত জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, পাঁচটি সংস্কার কমিশনের দেওয়া সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের প্রথম পৃষ্ঠাকে পুনর্লিখনের প্রস্তাব এসেছে, যেখানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে এক কাতারে রাখা হয়েছে। বিএনপি এ বিষয়ে একমত নয় এবং ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, কমিশনের সুপারিশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘প্রজাতন্ত্র’ শব্দের পরিবর্তে ‘জনগণতন্ত্র’ বা ‘নাগরিকতন্ত্র’ ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে, যা ইংরেজিতে ‘পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ নামে লেখা হবে। তবে বাংলায় ‘জনগণতন্ত্র’ বা ‘নাগরিকতন্ত্র’ ব্যবহারের যে প্রস্তাবনা এসেছে, সেটিকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করে বিএনপি।

প্রশাসন সংস্কার নিয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সুপারিশকৃত ২৬টি প্রস্তাবের মধ্যে অর্ধেকের সঙ্গে দলটি একমত, বাকিগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। বিশেষ করে সচিব পর্যায়ে পদোন্নতির নিয়ম পরিবর্তনের প্রস্তাব এবং এসএসপি (সিনিয়র সিলেকশন গ্রেড) ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশের বিষয়ে দলটি ভিন্নমত পোষণ করেছে।

বিচার ব্যবস্থার সংস্কারে বেশিরভাগ সুপারিশের সঙ্গে বিএনপি একমত হলেও কয়েকটি বিষয়ে দলটির মন্তব্য রয়েছে। তিনি জানান, বিএনপি তাদের ৩১ দফার মধ্যে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতার কথা বলেছে, তাই এ বিষয়ে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট।

নির্বাচনী সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি বলেছে, কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখিত ২৭টি সুপারিশের অধিকাংশ সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যা তারা পুরোপুরি বুঝতে পারেনি।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সুপারিশে নির্বাচন কমিশনের কিছু ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা বিএনপির মতে কমিশনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল। বিশেষ করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হাত থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে দলটি সমর্থন করে না। বিএনপি চায়, এনআইডির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের অধীনে ফিরিয়ে আনতে আইন সংশোধন করা হোক।

বিএনপি মনে করে, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা উচিত। দলটির দাবি, এ বিষয়ে আইনের একটি মুদ্রণজনিত ভুল সংশোধন না হওয়ায় নির্বাচন কমিশন ডিলিমিটেশন সংক্রান্ত শুনানি করতে পারছে না, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলতে পারে।

এছাড়া, নির্বাচন কমিশনকে সংসদীয় কমিটির কাছে জবাবদিহিতার আওতায় আনার সুপারিশেও আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। তাদের মতে, কমিশনকে সংসদীয় কমিটির অধীন না রেখে বর্তমান পদ্ধতিতেই পরিচালিত হওয়া উচিত।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও মূলনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের সুপারিশ এসেছে, যেখানে নতুন একটি অধ্যায় সংযোজনের কথা বলা হয়েছে। তবে বিএনপি মনে করে, পার্লামেন্টারি ও রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে এ ধরনের প্রস্তাব এসেছে।

বিএনপি বলছে, সংবিধানের যেসব ধারা রয়েছে, সেগুলোর পরিবর্তন বা সংশোধনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। দলটি সংবিধানের পূর্বের অবস্থান বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, দেশের সংস্কার প্রয়োজন, তবে তা রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে করা উচিত নয়। সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তন কিংবা রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।”

সংবিধান সংশোধন, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব এবং বিচার বিভাগীয় সংস্কারের বিষয়ে সরকারকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। তারা মনে করে, বিদ্যমান আইনি কাঠামো ও সংবিধানের মৌলিক বিষয়গুলো সংরক্ষণ করা জরুরি।

বিএনপি আশা করছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলোর বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করবে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মতামতকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করবে।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/lvvByzberHo?si=6afZvQwUXLTYoBfA

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×