ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১

তিস্তার ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় শীঘ্রই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৯:২২, ২২ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৯:২৮, ২২ মার্চ ২০২৫

তিস্তার ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় শীঘ্রই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, তিস্তা পাড়ের অধিক ভাঙ্গন কবলিত ২০ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শীঘ্রই শুরু করা হবে।  

তিনি বলেন, তিস্তা পাড়ের বেশী ভাঙ্গনপ্রবণ ৪৩ কিলোমিটার এলাকার তীর রক্ষা বাঁধের জন্য ২৪৩ কোটি টাকার অনুমোদন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া গেছে। তবে ১ম বছরে তিস্তার অধিক ভাংগনপ্রবণ ২০ কিলোমিটার এলাকার তীর রক্ষা বাঁধের কাজ করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে তিস্তার অধিক ভাঙ্গন প্রবণ বাকী ২৩ কিলোমিটার এলাকার তীর রক্ষা বাঁধের কাজও দ্রুততার সাথে করা হবে। 

উপদেষ্টা শনিবার (২২ মার্চ) ঢাকার গ্রীন রোডস্থ পানি ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব পানি দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত 'পানি খাতে সংস্কার' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। 

উপদেষ্টা বলেন, সদিচ্ছা থাকলে সমন্বয় করে দ্রুততার সাথে কাজ করা যায় এটাই একটা বড় সংস্কার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চলমান  কাজে কোথাও গুণগত মানের ঘাটতি পরিলক্ষিত হলে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত  মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক মল্লিক সাঈদ মাহবুব- সহ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের জানানোর জন্য সকলকে অনুরোধ করেন। 

উপদেষ্টা রিজওয়ান হাসান আরও বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুমে দেশের যে সমস্ত জায়গায় ঘূর্ণিঝড় বা বেশি বন্যায় ভাঙ্গনের সম্ভাবনা  রয়েছে সেই সমস্ত এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় অফিসগুলোকে ইমারজেন্সি বেসিসে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জিও ব্যাগ এবং ব্লক  প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জরুরি অবস্থায় রেসপন্স করার জন্য কি কি ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে তার তালিকা এপ্রিল মাসের মধ্যে  জমা দিতে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। 

তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনার ফিজিবিলিটি স্টাডির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে দুইটা শর্তে এবং সেটা হচ্ছে  পাওয়ার চায়না তিস্তা পাড়ের মানুষদের কাছে গিয়ে তাদের পরিকল্পনার কথাটা বলবে। যারা নদী নিয়ে কাজ করে তাদের সাথে কথা বলবে।ইতিমধ্যে তিস্তা পাড়ের ৫ জেলায় গণশুনানি হয়েছে। এখন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনা করা হবে, ওই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনার জন্য চীন থেকেও তাদের বিশেষজ্ঞ/ এক্সপার্ট টিম আসবে। সকলের সম্মতি নিয়েই আসলে কতটুকু উপকার হবে এটা বুঝে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন। 

রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, নোয়াখালীতে গত বন্যার পরে পানি নামছিলনা। বন্যার সময় নোয়াখালীতে পানি নামছিলনা কারণ সেটা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সাগর থেকে জোয়ার উঠে আর নামতে পারছেনা কারণ সেখানে খাল গুলো ভরাট হয়ে গেছে। সেটা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। 

উপদেষ্টা বলেন, শিল্পে পানি ব্যবহার নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আমরা সেটির বাস্তবায়নে যাব। আলোচনা সভায় পানি নীতি এবং জাতীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা হালনাগাদ করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। 

এছাড়া তিনি তাঁর বক্তব্য বলেন, আগামী ১৪ এপ্রিলে নদীগুলোর স্থানীয় নামসহ  বাংলাদেশের নদ-নদীর একটা সম্পূর্ণ তালিকা আমরা প্রকাশ করতে পারব। নদী দখল ও দূষণরোধে প্রত্যেক জেলা হতে একটা করে কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন,  ঢাকার ৪ টি নদীসহ বাকি ৭ বিভাগ হতে ৭ টি নদী এবং কক্সবাজার জেলার বাঁকখালী নদীসহ মোট বারোটি নদী এবং সেই সাথে  রংপুর জেলার শ্যামা সুন্দরী খাল এবং ঘাগট নদী মিলিয়ে মোট ১৪টি নদীর কর্মপরিকল্পনা খুব দ্রুত চূড়ান্ত করে ফেলতে পারব।  এর মধ্যে ১০টি নদীর দখল ও দূষণমুক্তকরণে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড, পরিকল্পনা কমিশন এবং জরুরী ফান্ড দিয়ে যতটুকু পারা যায় দ্রুত কাজ শুরু করা হবে বলে উপদেষ্টা তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন। এছাড়া ঢাকার ৪ টি নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বিশ্ব ব্যাংক  অর্থ দিয়ে সহায়তা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

উপদেষ্টা আরও বলেন, ভবদহ এবং বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানে আমরা কাজ শুরু করে দেব। আড়িয়াল বিল ও চলনবিল নিয়েও আমরা শুরু করেছি। এছাড়া সবচেয়ে দূষিত লবণদহ ,তুরাগ ও হাড়িধোয়া এই ৩ নদী-সহ টাঙ্গাইলের লৌহজং নদী, হালদা নদী,তিতাস, কপোতাক্ষ,সালদা, মূয়ূর, আড়াইকূড়ি, বেতনা, গড়াই, ঘাঘট,বড়াল, সুতাং এবং মগড়া এই নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্তকরণে প্রাথমিকভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। 

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানের সভাপতিত্বে দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক একেএম তাহমিদুল ইসলাম। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জলাভূমি ও হাওর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আখতারুজ্জামান,পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মনিটরিং কমিটির আহবায়ক  ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মল্লিক সাঈদ মাহবুব, ইন্সটিটিউট অভ ওয়াটার মডেলিং এর নির্বাহী পরিচালক এস এম মাহবুবুর রহমান, ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, এএলআরডি এর নির্বাহী পরিচালক এবিএম শামসুল হুদা, সাংবাদিক ও রিভারাইন পিপলের সদস্যসচিব শেখ রোকন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. সাব্বির মোস্তফা খান, নদী গবেষক এবং রিভারাইন পিপলের পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। 
এছাড়া সভায়  পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব-সহ ঊর্ধ্বতন  কর্মকর্তাবৃন্দ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

আকাশ/শহীদ

×