
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজ নিয়ে ঘোষিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের বিরুদ্ধে একদল শিক্ষার্থী আপত্তি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই, আমাদের ক্ষোভ ছিল প্রশাসনের প্রতি। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম শেষে আমরা নতুন পরিচয় পেয়েছি। তবে, ঢাবির যেসব ভাইয়েরা 'ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়' থেকে 'ঢাকা' নামটি বাদ দেওয়ার জন্য স্মারকলিপি প্রদান করেছেন সেটার তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের স্বাধীনতা আমাদের, আর যদি কেউ হস্তক্ষেপ করতে চাই তাহলে আমরা তা রুখে দিতে প্রস্তুত আছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্তক্ষেপকে তীব্র ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান জানিয়ে সাত কলেজ আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। তবে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের একটি বৈষম্যমূলক জঘন্য শিক্ষা ব্যবস্থা উপহার দেওয়ায় সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অনেক বেশি ক্ষুব্ধ। যার ফলশ্রুতিতে একটি দীর্ঘ ৬ মাসের বিরামহীন সংগ্রাম শেষে রাষ্ট্র একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে " বাংলাদেশ সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়" প্রতিস্থাপনের। তবে নামটির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে যেহেতু এটি একটি গণ আন্দোলন ছিলো এবং শিক্ষার্থীদের বঞ্চনার রাস্তা থেকে বলে আসতে আসতে শিক্ষার্থীদের একটি চূড়ান্ত সমাধানের পথে কাজেই সেই সময় গণ আন্দোলনের মধ্যেই ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় বা ঢাকেবি নামটি জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে এক সময় নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের জন্য মেইলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন মানুষের কাছ থেকে নাম আহ্বান করলে এই নামটি জনপ্রিয়তা পায়। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এই নামটি চূড়ান্তভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়। এর পরবর্তীতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা অনেক আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে এবং এই নামটিকে ইতিমধ্যে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে ধারণ করে নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তবে প্রতিহিংসায় জড়িয়ে পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী এই নামটি পরিবর্তনের জন্য স্মারকলিপি দিয়েছে। যেটি অত্যন্ত নেক্কারজনক ও নিচু মানসিকতার পরিচয়। বরং শিক্ষার্থী হিসেবে অনেকেই যে নিচু মানসিকতা পোষণ করে সেটিই তারা এর মাধ্যমে প্রকাশ করলেন। তারা হয়তো অবগত আছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি টি "ডিআইইউ " নামে পরিচিত আছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি নাম আছে। জেইউ এর পাশাপাশি জেএনইউ - জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। নাম কোনো ক্ষেত্রে কখনোই কোনো বাঁধা হতে পারে না। তবে যে নামটি জনপ্রিয়তা পায় শিক্ষার্থীরা মনে ধারণ করে সেই নামটি চূড়ান্ত ধাপ এবং এই ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্তক্ষেপকে তীব্র ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করছি এবং অনতিবিলম্বে তাদের এই নেক্কার জনক যেই স্মারকলিপি এইটি উইথড্র করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, যদি তার পরেও জোরপূর্বক কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ বা কোনোপ্রকার পায়তারা করা হয় তাহলে দেড় লক্ষ শিক্ষার্থী এই ধরনের নেক্কারজনক নিচু মানসিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে এবং সেটাও অন্য দিকে যেতে পারে পরিস্থিতি। তো এরকম কোনো পরিস্থিতি আমরা আশা করছিনা পাশ্ববর্তী ক্যাম্পাস হিসেবে বরং তাদের সহযোগিতা কামনা করি। তাদের ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না, তাদের যে ক্যাম্পাস, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার জন্য ঢাকা কলেজ তাদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে পাশে থেকে ছিলো কিন্তু ঢাকা কলেজ সহ সাত কলেজকে যখন মানহীন শিক্ষা দেয়া হলো সেখানে একমাত্র দায়ী হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কাজেই এই মানহীন শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মুক্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে থাকবে বলে প্রত্যাশা করছি।।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী তাসলিমা জান্নাত বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন করেছি আমরা, ২০১৭ সাল থেকে এই সাত কলেজ নিয়ে অনেক অপমান, অসম্মান, বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে আমাদের ভাই-বোনদের। শেষ পর্যন্ত আমাদের একটা পরিচয় হয়েছে। তবে,এটা নিয়ে ঢাবির কয়েক শিক্ষার্থী স্মারকলিপি দিয়েছে যা হাস্যকর। আমরা সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সর্বদা প্রস্তুত আছি।
প্রতিবাদ জানিয়ে বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থী মারিয়া আক্তার বলেন, সাত কলেজের সমন্বয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় টি হতে যাচ্ছে সেটির একটি যুগান্তকারী নাম নির্বাচন করা একান্তই এই সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যাপার। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হস্তক্ষেপ একেবারেই অবাঞ্ছিত বলে মনে করছি। কারণ এতে যেমন তারা হীনমন্যতার পরিচয় দিচ্ছে তেমন তাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে ইচ্ছে হয় তারা কি পরিচয় সংকটে ভুগছেন কিনা? কারন তারা যে লজিক দিচ্ছেন যে 'ঢাকা' শব্দ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে রয়েছে সেখানে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এর নাম থাকতে পারবেন না। এটি কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয় যে সেখানে কারো দখলদারিত্ব কেউ বরদাস্ত করবে।
তিনি আরো বলেন, দেখতে গেলে শতবর্ষ পুরনো ঢাকা কলেজ এর সাথে 'ঢাকা' নামটি রয়েছে আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরে প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ঢাকা' নামটি সরানোর জন্য যদি ঢাকা কলেজ এর ছেলেরা স্মারকলিপি দেয় আপনারা কোথায় যাবেন? তখন কি আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা সরিয়ে শাহবাগ বিশ্ববিদ্যালয় দিবেন? আসলে এই বিষয় গুলো নিতান্তই হাস্যকর এবং যারা এগুলো করছে তারা ঢাবির সম্মান নষ্ট করছেন।
প্রসঙ্গত, 'ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) তিন দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন একদল শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের ৩ দফা দাবিসমূহ হলো:
১. নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থেকে ‘ঢাকা’ শব্দটি বাদ দিতে হবে।
২. বিভ্রান্তি এড়াতে সম্পূর্ণ ভিন্ন, স্বতন্ত্র মৌলিক একটি নাম নির্ধারণ করতে হবে, যেমন ‘বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ (Central University of Bangladesh) বা ‘মহানগর বিশ্ববিদ্যালয়’ (Metropoliton University।
৩. ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিকট আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানিয়ে নাম পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করতে হবে।
আসিফ