ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

রাজধানীতে ছুটির দিনে মার্কেট শপিংমলে উপচেপড়া ভিড়

নাজমুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২১ মার্চ ২০২৫

রাজধানীতে ছুটির দিনে মার্কেট শপিংমলে উপচেপড়া ভিড়

.

পবিত্র রমজানের শেষ ভাগে প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানীসহ সারাদেশে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। 
ঈদ উৎসবকে প্রাণবন্ত করতে প্রতিবছর এই সময় বিপুল লেনদেন হয়, বিশেষ করে পোশাক খাতে। প্রত্যেকেই সামর্থ্য অনুযায়ী ঈদকেন্দ্রিক একটা বাজেট তৈরি করেন। এবারের ঈদে অন্তত দুই লাখ কোটি টাকা বা ততোধিক ব্যবসা সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। প্রবাসীরা তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের জন্য ঈদ উদ্যাপনের জন্য বাড়তি টাকা পাঠান। চলতি মার্চ মাসের প্রথম ১৯ দিনে ২২৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। দেশীয় মুদ্রায় বর্তমান বিনিময় হার হিসাব (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা) ধরে এই অঙ্ক ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
শুক্রবার ছুটির দিনে রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে রাজধানীর গুলিস্তান, ইসলামপুর ও নিউমার্কেট এলাকা। সকাল থেকেই পুরো এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড়। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে পরিবার-পরিজন ও প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে নতুন কাপড় কিনতে সবাই ভিড় করছেন শাড়ি, থ্রিপিস, বাচ্চাদের পোশাক, পাঞ্জাবি, পায়জামা এবং টিশার্টসহ অন্য পোশাকের দোকানগুলোতে। পুরুষের তুলনায় নারী ক্রেতার সংখ্যাই বেশি।
সকাল থেকে নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের জন্য কেনাকাটা করতে সকাল থেকেই মানুষজন ভিড় করছেন। আর প্রতিটি মার্কেটই সাজানো হয়েছে। ক্রেতার চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন পোশাক, স্টাইলিশ জামাকাপড়, জুতা, ব্যাগ এবং সাজসজ্জার নানা উপকরণে দোকানগুলো ভরে উঠেছে। পুরো এলাকার শপিং মল ও মার্কেটগুলোর প্রায় প্রতিটি দোকানেই ঈদ উপলক্ষে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে নানা ধরনের গয়না, ঘর সাজানোর জিনিসপত্র, সুগন্ধি, পারফিউম এবং ডিজিটাল গ্যাজেটগুলোর চাহিদাও রয়েছে। নতুন জামাকাপড়ের পাশাপাশি অনেক ক্রেতাই উপহার হিসেবে এসব পছন্দ করছেন। আবার ফুটপাতগুলোর ভাসমান দোকানগুলোতেও ঈদের বিভিন্ন পোশাকের ব্যাপক সমারোহ দেখা গেছে। মার্কেটে মানুষের ভিড়ে প্রচুর উপস্থিতির কারণে হাঁটতে হচ্ছে বেশ ধীরগতিতে।
দোকানগুলোতে শিশু, নারী এবং পুরুষদের জন্য নানান ডিজাইন ও মানের জামাকাপড় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। শপিং মল ও মার্কেটে শাড়ি, কুর্তা, পাঞ্জাবি-পায়জামা, সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, ওয়ান পিস পাওয়া যাচ্ছে। আর বিভিন্ন দোকানে পুরুষের চেয়ে ভিড় বেশি জমাচ্ছেন নারী ক্রেতারা। যাদের অধিকাংশই পোশাক, গহনা, মেকআপ আইটেম এবং অন্যান্য উপহার সামগ্রী কিনছেন।
কলেজ পড়ুয়া খাদিজা খাতুন নামের এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় জনকণ্ঠের। তিনি বলেন, আগেভাগে বাড়ি চলে যাব। সেজন্য ছুটির দিন বেছে নিয়েছি কেনাকাটা করার জন্য। সকালেই এসেছি। তারপরও অনেক ভিড়ের মধ্যে পড়তে হয়েছে। নিউমার্কেটের বিক্রেতারা এমনিতেই দাম বাড়িয়ে বলেন। এরপর ঈদের এখনো অনেক বাকি। সেজন্য তারা দাম কমাতে চাচ্ছেন না। প্রতিটি জিনিসই দামাদামি করে কিনতে হচ্ছে।
কথা হয় সজিব ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী রহিমের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অন্য বছরের তুলনায় এবার আগেভাগেই বিক্রি শুরু হয়েছে। আর রোজার দ্বিতীয় দশক শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় থাকছে। তবে অধিকাংশ ক্রেতাই রাতের তুলনায় দিনের বেলাতে কেনাকাটা করতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
ধানম-ি হকার্স মার্কেটের ইসরাত শাড়ি ঘরের বিক্রেতা আব্দুর রউফ জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদের আগে একটু ভিড় হয়। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে। সে অনুযায়ী এবারও ভিড় হচ্ছে। 
মার্কেটের মতোই ফুটপাতেও জমজমাট বেচাকেনা চলছে জানিয়ে নাহিদ হাওলাদার নামে এক বিক্রেতা বলেন, মার্কেটের জিনিস আর আমাদের জিনিসের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নাই। বরং আমাদের দোকান ভাড়া লাগে না। তাই দাম অনেক কম। রোজার শুরু থেকেই ভালো বিক্রি হচ্ছে। আর গত শুক্রবারের তুলনায় আজকে ভিড় আরও বেশি। বিক্রিও বেশ ভালোই হচ্ছে। 
সায়েন্সল্যাব মোড়ের পাশের ফুটপাতে পায়জামা-পাঞ্জাবি বিক্রি করা রবিউল নামের এক হকার বলেন, এসময় ব্যবসা বেশ ভালো চলে। আমরা সীমিত লাভে বেশি বিক্রি করি। এতেই পর্যাপ্ত লাভ হয়। দোকানে কাপড় কিনতে গেলে খরচ অনেক বেশি। সেখানে দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, কারেন্ট বিল যুক্ত হয়। কিন্তু আমাদের এমন খরচ নেই। সেজন্য কম দামেই পায়জামা-পাঞ্জাবি বিক্রি করছি। আমার দোকানে মানভেদে ২৫০-৩০০ টাকায় পায়জামা এবং ৩০০-৫০০ টাকায় পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে।
ইসলামপুরের ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে নারী ও বাচ্চাদের পোশাকের চাহিদা কিছুটা বেশি। বাচ্চাদের থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। পাইকারি প্রতি বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ৪৫০০ থেকে ৮৫০০ টাকায়। বাচ্চাদের এসব থ্রি-পিস, লেহেঙ্গার প্রতিটি বান্ডেল ৩ ধরনের সাইজে এবং দুটি রঙে পাওয়া যায়। আবার দেশী কাপড়ের থ্রি-পিস ৫৯০ থেকে ৩২০০ টাকার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া ভারতীয় ও পাকিস্তানি থ্রি-পিস রয়েছে ২৫০০ থেকে শুরু করে ৬০০০ টাকার পর্যন্ত। তবে ভারতীয় থ্রি-পিস মাঝারি ধরনের গুলো পাওয়া যাচ্ছে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকায়।
ইসলামপুরের আম্বিয়া টাওয়ারের হাবিব গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী হাবিব হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, রোজার আগে বেচাকেনা ভালোই হয়েছে। তবে ঈদের আগ মুহূর্তে দ্বিতীয় ধাপে বেচাকেনা কিছুটা  কমলেও এখন আবার বেচাকেনা বাড়তে শুরু করেছে।
ঈদ বাজারের সার্বিক বিষয়ে দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল জনকণ্ঠকে বলেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রমজানের শুরুতে কেনাবেচা কিছুটা কম দেখা গেছে। রমজান মাসের কারণে দিনের বেলায় ক্রেতা সংখ্যা কম রাতে বেশি। এখন আবার বেচাকেনা বাড়তে শরু করেছে বলে জানান তিনি। 
এদিকে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা মানুষদের নিরাপত্তার স্বার্থে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অস্থায়ী তথ্য ও সেবাকেন্দ্র। সেখান থেকে মাইকে বিভিন্ন বিষয়ে ক্রেতাদের সতর্ক করা হচ্ছে।

×