
.
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থী ও জনতা। এ সময় তারা বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা যদি বিলম্বিত হয় তাহলে আবারও জুলাই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বাংলাদেশে। খবর স্টাফ রিপোর্টার, বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ও সংবাদদাতার।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ইনকিলাব মঞ্চ। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিলটি বের হয়। কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন দিয়ে শ্যাডো হয়ে সূর্য সেন হল ও ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে ফিরে আসে। সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত দেড়টায় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় মুখপাত্র আশরেফা খাতুন বলেন, আমরা ৫ আগস্টের পররাষ্ট্র কাঠামোতে যে পরিবর্তন আশা করেছি তা হয়নি। ৫ আগস্টে রাজপথে যে আওয়ামী লীগের ফয়সালা হয়ে গেছে, সে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে এখনো আমাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। আমাদের যেহেতু রাস্তায় নামতে হয়েছে, আমরা বিচার নিশ্চিত করে ছাড়ব। এর আগে রাজপথ ছেড়ে যাব না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। পরে নগরীর কাজলা মোড় হয়ে তালাইমারির বিজয় ২৪ চত্বরে গিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবির সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের প্রশ্ন আমরা ৫ আগস্টেই নিশ্চিত করে ফেলেছি। আওয়ামী লীগকে বাংলার মাটিতে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ যদি দেশের রাজনীতিতে ফিরে আসতে চায়, তাহলে ২ হাজার শহীদের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে হবে।
আরেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, যেদিন আবু সাঈদের রক্তে রংপুরের জমিন লাল হয়েছে, সেদিনই আওয়ামী লীগ রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। একটি রাজনৈতিক দল যখন রাজনীতি বাদ দিয়ে গণহত্যা, গুম, খুন ও ত্রাসের রাজনীতিতে মেতে উঠে, তখন সেটাকে নাৎসি পার্টি হিসেবে নিষিদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকতে পারে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবি শাখার সমন্বয়ক মাহায়ের ইসলামের সঞ্চালনায় এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ শতাধিক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার ফজরের পর থেকে তারা প্রশাসন ভবনের নিচে অবস্থান করেন। রাত ৮টা পর্যন্ত তারা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। দাবি আদায় না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়। এই কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক মুখলেসুর রহমান সুইট, সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, তানভীর মাহমুদ, ইয়াসিরুল কবির, গোলাম রব্বানী, ইসমাইল হোসেন রাহাতসহ অন্য শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
চট্টগ্রাম ॥ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার দুপুরে নিউমার্কেট চত্বরে সমাবেশে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সংগঠক রাসেল আহমেদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
এ সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে রাফি বলেন, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে পতন ঘটানোর মধ্য দিয়ে আমরা আপনাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েছি। কোনো সুশীলতা দেখাতে নয়। আপনি যত টানা দেরি করছেন আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে, তার চেয়ে তাড়াতাড়ি করছেন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের জন্য আপনাদের বসানো হয় নাই। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা যদি বিলম্ব করা হয় তাহলে আবারও জুলাইয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটবে বাংলাদেশে।
রাসেল আহমেদ বলেন, সাত মাস পেরিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয় নাই। অধিকন্তু আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করে ফিরিয়ে আনতে কাজ করা হচ্ছে। আমরা জীবন দিয়েছি, ভাইদের হারিয়েছি। স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের যে সংগ্রাম শুরু হয়েছে তা ততদিন পর্যন্ত চালিয়ে যাব, যতদিন পর্যন্ত এ রাষ্ট্রে ন্যায়, সাম্য ও মানবিক মর্যাদার ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে না।