
ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মাত্র ১ হাজার টাকা ভাড়ায় ডাকাতি করতে গিয়ে এক মাটি ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে ডাকাত সদস্যরা। এসময় তাদের হামলায় অপর এক মাটি ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ডাকাত দলের দুই সদস্যকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন এলাকাবাসী।
আজ শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত এ নৃশংস হত্যার ঘটনায় কালিয়াকৈর থানা পুলিশ এখনও হত্যা মামলা নেয়নি। একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিহত মাটি ব্যবসায়ী কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের গাবচালা এলাকার মুক্তার আলীর ছেলে সজীব হোসেন (৩৮)। অপরদিকে গ্রেফতারকৃত ডাকাত দুই সদস্যরা হলো বগুড়ার শেরপুর থানার হাটিগাড়ি এলাকার আসাদুল শেখের ছেলে সোহেল শেখ (৪০) ও দিনাজপুরের বিরামপুর থানার মহেশপুর এলাকার মিরাজ হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান (৪৫)।
প্রায় প্রতিদিনই কালিয়াকৈর উপজেলার কোনো না কোনো স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এমন ডাকাতের ঘটনা ঘটছে বলে বিশিষ্টজনেরা জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী, নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার হাটুরিয়াচালা এলাকায় গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতে এই ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতে নিহত সজীব হোসেন ও রয়েল হাসান নামে দুই মাটি ব্যবসায়ী মোটরসাইকেল যোগে উপজেলার গাবচালা থেকে পাশ্ববর্তী হাটুরিয়াচালা এলাকায় যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বড়ইবাড়ি-জামালপুর আঞ্চলিক সড়কের হাটুরিয়াচালা এলাকার একটি নির্জন স্থানে পৌঁছালে তাদের গতিরোধ করে ১০/১৫ জনের একদল ডাকাত।
এসময় ডাকাত সদস্যরা সজীব ও রয়েলের কাছে থাকা টাকা-পয়সা লুট করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা দৌড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে ডাকাত সদস্যরা সজীবকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। তার সাথে থাকা অপর ব্যবসায়ী রয়েল কৌশলে দৌড়ে পাশের একটি বাড়িতে ঢুকে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করে।
পরে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে গেলে ডাকাত সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় ধাওয়া দিয়ে ডাকাত দলের সদস্য সোহেলকে আটক করে গণধোলাই দেয় এলাকাবাসী। এরপর আহত অবস্থায় ডাকাত সদস্য সোহেলকে পুলিশে সোপর্দ করে তারা।
আহত ওই দুই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে সফিপুর মর্ডান হাসাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সজীবকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর আহত মাটি ব্যবসায়ী রয়েলকেও সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এছাড়া, অজ্ঞান অবস্থায় আহত দুই ডাকাত সদস্যকে উদ্ধার করে পুলিশি নজরদারিতে উপজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও টাঙ্গাইলের কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
গ্রেফতারকৃত ডাকাত সদস্যের বরাতে মৌচাক ফাঁড়ির এসআই সাইদুর রহমান জানান, 'সোহেল ও মিজানুর বাড়ইপাড়া এলাকায় কয়েল কারখানার পাশে বাসা ভাড়া থেকে স্থানীয় চন্দ্রা স্পিনিং মিল নামে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। বৃহস্পতিবার তারাসহ কয়েকজন মাত্র এক হাজার টাকা ভাড়ায় ডাকাতি করতে যায়।'
তিনি আরও জানান, 'ডাকাতিকালে সজীবকে কুপিয়ে জখম করলে তিনি মারা যান। রাতেই পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্তের পর শুক্রবার বিকেল জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সজীব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় হত্যা মামলা নেয়নি পুলিশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা এবং এলাকাবাসী।
নিহতের স্ত্রী শারমিন বেগমের অভিযোগ, 'তার স্বামী সজীবকে পরিককল্পিত ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ হত্যা মামলা না নিয়ে নিয়মিত মামলা দিয়েছে।' হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে নিহতের পরিবার।
এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ জানান, 'এ ঘটনায় থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও গ্রেফতারকৃতদের গাজীপুর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় আরও যারা জড়িত, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।'
রাকিব