
সংগৃহীত
সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে “আমার বাংলাদেশ পার্টি” (এবি পার্টি) এর সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ তার মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি গণপরিষদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের সংবিধান পুনর্লিখনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বক্তব্য রাখেন।১৯৭২ সালের সংবিধান নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে ফুয়াদ বলেন, “এবি পার্টির পক্ষ থেকে আমরা বলেছি, এই সংবিধানকে ফেলে দেওয়া উচিত। কারণ আমরা পুনর্লিখনের পক্ষে।
ফুয়াদ বলেন, “সংবিধানের আলোকে সংসদে পাশ করা যে কোন আইন, জুডিশিয়ারি যদি মনে করে যে এটি ন্যায্য নয়, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তাহলে সেটি স্ট্রাইক আউট করে দিতে পারে। তবে গণপরিষদের সিদ্ধান্তকে কখনো সংবিধান স্ট্রাইক আউট করতে পারবে না, কারণ গণপরিষদই নিজে সংবিধান তৈরি করে।” তিনি আরও যোগ করেন, “গণপরিষদ প্রয়োজন, কারণ এটি সংবিধান পুনর্লিখনের জন্য সেফগার্ড হিসেবে কাজ করবে।”
সংস্কার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে।বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি এখনও পর্যন্ত মতামত জানাননি। বিএনপি বলছে, তারা ৩১ দফার আলোকে মতামত দিবেন। আর জামায়াত সবসময়ই সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা বলেছেন। নাগরিক পার্টি বলছে, যে আগে গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে।
এ বিষয়ে এবি পার্টির অবস্থান জানিয়ে, “আমার বাংলাদেশ পার্টি” (এবি পার্টি) এর সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “মোটাদাগে, এর আগে যে পাঁচ-ছয়টা কমিশনে আমরা যে সুপারিশ দিয়েছি, একই ধরনের কথাবার্তাগুলো সেখানে আবার বলা ছিল। আমাদের মতামত আবার দিয়েছি। নির্বাচনের বিষয়ে ঐক্যমত হওয়া সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন যখন আসে, তখন আমরা অনেক কম্প্রোমাইজড হয়ে যাই। আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, যে রাজনৈতিক দল এবং অংশীজনরা এবং ছাত্ররা মিলে এত বড় একটা ঐতিহাসিক ঘটনাটা ঘটিয়েছে, তারা দেশটির জন্য আরও স্যাক্রিফাইস করতে পারবেন এবং একটি নির্বাচনের মাধ্যমে সেটা করা সম্ভব। যদি একটা পার্লামেন্ট গঠিত হয়, তাহলে সেই পার্লামেন্ট ছয় মাস বা এক বছরের জন্য গণপরিষদের ভূমিকা পালন করবে।”
ফুয়াদ আরও বলেন, “এখানে সরকারি দল এবং বিরোধী দল কেউ থাকবে না। সবাই গণপরিষদ সদস্য। এরপর মেয়াদ শুরু হবে, যা হবে রেগুলার পার্লামেন্টের মতো।”
তিনি আরো বলেন, “সংবিধানের আলোকে সংসদে পাশ করা যে কোন আইন, জুডিশিয়ারি যদি মনে করে, বিচার বিভাগ যদি মনে করে যে এটি ন্যায্য নয়, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তখন সেটি স্ট্রাইক আউট করে দিতে পারবে। তবে গণপরিষদের সিদ্ধান্তকে সংবিধান কখনো স্ট্রাইক আউট করতে পারবে না, কারণ গণপরিষদই নিজে সংবিধান বানায়।”
এছাড়া, ফুয়াদ ১৯৭২ সালের সংবিধান নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে বলেন, “এবি পার্টির পক্ষ থেকে আমরা বলেছি, এই সংবিধানকে ফেলে দেওয়া উচিত। কারণ আমরা পুনর্লিখনের পক্ষে। আমরা মনে করি এটি একটি ‘ব্যাডলি ড্রাফটেড কনস্টিটিউশন’। আমাদের সংবিধানে যা লেখা আছে, তার ৯০ শতাংশই সংবিধানের সূচির যোগ্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “সংবিধান পুনর্লিখনের প্রয়োজন রয়েছে, কারণ রাষ্ট্রের কাঠামো ও কার্যক্রমের জন্য কিছু প্রসিজিউরাল বিষয় আলাদা আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত হওয়া উচিত। সংবিধান হচ্ছে মাদার অ্যাক্ট, যার মধ্যে রাষ্ট্রের নীতিগত ভিত্তি থাকতে হবে এবং এটি ছোট আকারে, মাত্র ৮-১০ পৃষ্ঠার মধ্যে থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র, আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফরমান, এগুলোকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত এবং এটি একটি ইউনিটারিয়ান স্টেটের মতো হতে হবে, যেখানে একটি সংসদ থাকবে, একটি জুডিশিয়ারি থাকবে। এইভাবে, সংবিধানটি পুনর্লিখন করা সম্ভব।”
ফুয়াদ বলেন, “এখনকার সংবিধান আইন বই হয়ে গেছে, এটি আর সংবিধান নয়। এই কারণে আমরা বারবার বলেছি, এটি ‘ব্যাডলি ড্রাফটেড কনস্টিটিউশন’ এবং এটিকে ফেলে দেওয়া উচিত। ফেলে দেওয়া মানে কন্টেন্ট ফেলে দেওয়া নয়, মৌলিক মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে শুধু একটি লাইনই লিখে দেওয়া উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “অনেক বিষয় আছে যা আসলে সংবিধানে থাকার প্রয়োজন নেই। এটি আজগুবি বইতে পরিণত হয়েছে। আমরা যদি সংবিধানকে নতুন করে ঢেলে সাজাই, তাহলে তা হবে দেশের জন্য একটি ভালো পদক্ষেপ। তাই, আমাদের উচিত একটি ছোট্ট সংবিধানে একমত হওয়া এবং এটিকে আরও সহজ ও কার্যকরী করা।”
সূত্র:https://tinyurl.com/42xb5595
আফরোজা