ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

সংবিধান সংশোধন, নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়ন ও দায়বদ্ধ করতে হবে: বদিউল আলম মজুমদার

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২০ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২৩:২৮, ২০ মার্চ ২০২৫

সংবিধান সংশোধন, নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়ন ও দায়বদ্ধ করতে হবে: বদিউল আলম মজুমদার

ছবি : সংগৃহীত

সংবিধান সংশোধন, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) এক বক্তব্যে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে। একইসঙ্গে তাদের দায়বদ্ধতার আওতায় আনতে হবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তবে শুধু স্বাধীন করলেই হবে না, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। অতীতে নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা না থাকায় নানা অনিয়ম হয়েছে। বিশেষ করে নুর হুদা কমিশনের সময় নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছিল। এই অবস্থার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য কমিশনকে দায়বদ্ধ করা জরুরি।”

সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে বদিউল আলম বলেন, শেখ হাসিনা পঞ্চদশ সংশোধনের মাধ্যমে কার্যত সংবিধান পুনর্লিখন করেছেন। তিনি বলেন, “এক-তৃতীয়াংশের বেশি সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে এবং এমন বিধান করা হয়েছে যে, এই অনুচ্ছেদগুলো আর কোনোভাবেই সংশোধন করা যাবে না। এটি সংবিধান পুনর্লিখনেরই সমতুল্য। এখন সংবিধানের এই অংশগুলো সংশোধনের জন্য নতুন উদ্যোগ নিতে হবে।”

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রসঙ্গে বদিউল আলম বলেন, “যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যায় ও অপরাধের জন্য কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন বদিউল আলম। তিনি বলেন, “একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতে দেখা গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা জরুরি।”

তিনি জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আদালতে রিট আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। তবে আমরা আদালতে রিভিউ করেছি। আশা করি, আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবারও চালু হবে।”

বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, “নির্বাচনের আগে ও পরে রাজনৈতিক সংস্কার জরুরি। রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। টাকার খেলা, অনিয়ম ও দলীয় প্রভাব বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়ন এবং জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।”

সংসদ ভবন সম্পর্কে বদিউল আলম বলেন, “সংসদ ভবন বিশ্বের অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন। অনেক বিদেশি এই ভবন দেখতে আসে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত ১৫ বছরে এই সুন্দর স্থাপনায় নীতিহীন ও দুর্নীতিবাজদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি পরিবর্তন করা জরুরি।”

সংস্কার এবং নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “সংস্কার এবং নির্বাচন পরস্পরের বিপরীত নয়। একটির জন্য আরেকটি বন্ধ রাখা যাবে না। সমান্তরালভাবে দুটো প্রক্রিয়া চলা উচিত। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতায়ন ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে।”

বদিউল আলম মজুমদার তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, “একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন অপরিহার্য। এই লক্ষ্যে সব ধরনের আইনি ও সাংবিধানিক পদক্ষেপ নিতে হবে।”

 

মো. মহিউদ্দিন

×