
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তাবাহী মাহে রমজান
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তাবাহী মাহে রমজানের আজ ২০তম দিবস। দিনের অবসানে সমাপনী দশকের সূচনা। আজ এখানে আমরা পবিত্র মাহে রমজানের একটি আত্মগঠনমূলক ইবাদতের কথা তুলে ধরতে চাই। আর তা হলো ইতিকাফ সাধনা। ইতিকাফ হচ্ছে পবিত্র রমজান মাসের সামগ্রিক কল্যাণ ও বরকত লাভের জন্য একটি বলিষ্ঠ সহায়ক শক্তি।
রমজানের প্রথম অংশে কোনো কারণে যদি পূর্ণ প্রশান্তি, স্থির চিত্ততা, চিন্তা ও হৃদয়ের একাগ্রতা এবং আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন ও তার রহমতের দরোজায় পড়ে থাকার সৌভাগ্য অর্জিত না হয়, সে অপূরণীয় ক্ষতি ও আফসোস পুষিয়ে দিতে করুণাময়ের পক্ষ থেকে উত্তম ব্যবস্থা হলো ইতিকাফ।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) খালিস নিয়তে ইতিকাফ পালনের সাওয়াবকে এক হাদিসে হজ ও ওমরার পূণ্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন। হজরত আয়েশা (রাদি.) রিওয়ায়েত করেছেন: ‘ওফাতের পূর্ব পর্যন্ত নবী কারীম (স.) রমজানের শেষ দশদিন বরাবর ইতিকাফ পালন করেছেন এবং তার ইন্তিকালের পর তার স্ত্রীগণ ইতিকাফের এ পুণ্যধারা অব্যাহত রেখেছেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)। এরপর থেকে উম্মাহর দ্বীনদার মানুষগণ ব্যাপকভাবে তা পালন করে আসছে। ছোটকালে আমরাও মহল্লার মসজিদগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ময়Ñমুরুব্বিকে ইতিকাফ গ্রহণ করতে দেখতাম।
কিন্তু এ স্বল্পকালের ব্যবধানে বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে মানুষের মন-মানসিকতার মাঝে। এখন মসজিদে মসজিদে একজন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত মুতাকিফ বা ইতিকাফ করণেওয়ালা লোক পাওয়াও মুশকিল। এটি রীতিমতো উদ্বেগের বিষয়। আজকের ধর্মপ্রাণ মুরুব্বি শ্রেণির উচিত, আমাদের মহান পূর্বসূরিদের ঐতিহ্যময় সাধনার পথে নিজেদের অবগাহন করা, নিজেদের সম্পৃক্ত করা এ ধারাবাহিক সুন্নাতে নববী, সুন্নাতে আসহাব ও সুন্নাতে সালফেসালেহীনের সঙ্গে।
আসলে ঐতিহ্যজ্ঞান ও ঐতিহ্য সচেতনতা বড় কথা। আজকে আমাদের সমাজে খোদাভীতিও আছে, ধর্মকর্ম পালনের মানসিকতাও আছে, নেই শুধু ঈমান ও আমলের শাখাগুলো চেনার পর্যাপ্ত জ্ঞান। দেশ ও জাতির আলিম ওলামাদের উচিত, নিজেরা পালন করে এবং অন্যদের উৎসাহিত করে সমাজে আবার ইতিকাফের মর্যাদা ও আগ্রহ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। কুপ্রবৃত্তি দমন ও চরিত্র সুনিয়ন্ত্রিতকরণের জন্য ইতিকাফ একটি বলিষ্ঠ ওয়াসিলা।
কারণ, মসজিদ এমন এক শান্ত শীতল পূতস্নিগ্ধ জায়গা, যেখানে মানুষ কখনো কুচিন্তা মাথায় রাখতে চায় না। মসজিদে থাকা ও শোয়া অনেক ওলামায়ে কেরাম জায়েজ মনে করেন না। কিন্তু শরিয়ত শুধু ইতিকাফের সময় তা উদারভাবে অনুমোদনপূর্বক উৎসাহিত করে। সুতরাং এ সুযোগ কাজে লাগানো দরকার।
এখানে আসলেই তো আপনার মাঝে নির্জন বাস, কবর জীবনের কথা, নিরব নিস্তব্ধ এক আখেরি মঞ্জিলের কথা ভাবার ফুরসৎ হয়। যারা স্বেচ্ছায় কিংবা সামাজিক অর্পিত দায়িত্ব নিয়ে ইতিকাফ করেন, তারা গোটা সমাজের, গোটা মহল্লার মেহমান। তাদের প্রতি কোনো কার্পণ্য নয়, অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সকলের সহানুভূতি পরায়ন হওয়া উচিত ।
পরিশেষে আমরা বলব, ইতিকাফ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। অর্থাৎ এটি নিয়মিত সামাজিক সুন্নাত, মহল্লার কেউ কেউ পালন করলে সবাই অন্তত এর সওয়াবের ভাগি হয় এবং দায় থেকে মুক্তি পায়। আর যদি মহল্লার কারও পক্ষ থেকে তা পালিত না হয়, তাহলে গোটা মহল্লাবাসী এর জন্য দায়ী ও গুনাহগার হয়ে থাকে। এ জন্য কাউকে বলে কয়ে হলেও তা আদায়ের ব্যবস্থা নিন।