
ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরে ঈদ বোনাস, বকেয়া বেতনসহ চলতি মাসের অর্ধেক বেতন ও বাৎসরিক (অর্জিত) ছুটির টাকা পরিশোধসহ পৃথক দাবিতে চারটি কারখানার শ্রমিকরা বৃহষ্পতিবার কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে। ঈদের প্রাক্কালে শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে আলীফ গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা বেআইনিভাবে ধর্মঘট করে কাজ বন্ধ রাখার কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির কথা উল্লেখ করে ওই তিনটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
শিল্প পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন যাবত ঈদ বোনাস, বাৎসরিক (অর্জিত) ছুটির টাকা ও চলতি মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধের দাবিতে মহানগরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় অবস্থিত আলীফ গ্রুপের স্বাধীন গার্মেন্টস লিমিটেড, স্বাধীন ডাইং লিমিটেড ও স্বাধীন প্রিন্টিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে আসছিল। ওই তিনটি কারখানার শ্রমিকরা একাধিকবার সড়ক অবরোধও করেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায় নি। এতে শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে কারখানা তিনটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করে একটি নোটিশ গেইটে টানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে ওই নোটিশ দেখতে পায়। ঈদের প্রাক্কালে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়।
শ্রমিকরা জানান, কয়েকদিন ধরেই বাৎসরিক ছুটির টাকা, ঈদ বোনাস ও চলতি মাসের অর্ধেক বেতনের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোন সমাধান না দিয়ে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। ঈদ আসলেই মালিক এবং কারখানার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কেন আমাদের সাথে এমন আচরণ করেন। সামনে ঈদ, অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা যখন তাদের সন্তান এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত তখন আমরা আমাদের পাওনা টাকা ও চাকুরির জন্য সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছি, আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। সারা বছর কাজ করি কারখানার লাভের জন্য। আর ঈদ আসলেই মালিক পক্ষ আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন। কর্তৃপক্ষের কেউ না থাকায় আমাদের দাবি নিয়ে কারো কোন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না।
জিএমপির কোনাবাড়ী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা কিছুদিন ধরেই তাদের পাওনাদির জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোন সমাধান না করেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। এতে শ্রমিকরা আরো ক্ষুব্ধ হয়।
তিনি আরো বলেন, মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলছেন ২৫ মার্চ ঈদ বোনাস দিবে এবং ২৭ মার্চ চলতি মাসের অর্ধেক বেতন দিবে। শ্রমিকরা কারখানা কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি প্রত্যাখ্যান করে কর্ম বিরতি পালন করছেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মেট্রোপলিটন পুলিশ ও শিল্প পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, ঈদুল ফিতরের ছুটি দুইদিন বৃদ্ধির দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে বিক্ষোভ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে সদর উপজেলার ইউটা পোশাক তৈরী কারখানার পোশাক শ্রমিকরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে প্রায় এক ঘন্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ, শ্রমিক ও এলাকাবাসী জানায়, এবার ঈদুল ফিতরের ছুটি ১০দিনের ঘোষণা দেয় গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া মনিপুর এলাকায় ইউটা কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শ্রমিকরা ঈদের ছুটি দুইদিন বাড়িয়ে ১২ দিন করার দাবি জানায়। শ্রমিকদের দাবি মেনে না নেওয়ায় তাদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বৃহষ্পতিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে সকাল ৯টার দিকে তারা কারখানার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখে। এতে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রী ও পথচারীসহ পরিবহন শ্রমিকরা। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদেরকে বুঝিয়ে সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দিলে প্রায় একঘন্টা পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
জয়দেবপুর থানার ওসি আব্দুল হালিম জানান, সারাদেশেই ঈদের ছুটি ১০ দিন করা হয়েছে। কিন্তু ইউটা কারখানার শ্রমিকরা তা না মেনে ১২ দিন ছুটি ঘোষণার দাবি করে। একপর্যায়ে তারা মহাসড়কটি প্রায় এক ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। এতে যান চলাচল বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
আবীর