
বাউফলের কালাইয়া বানিজ্যিক বন্দর। এক সময় সোমবারে হাট হিসাবে পরিচিত ছিল। এখানে স্বল্প পরিশরে খোলা আকাশের নিজে সপ্তাহে একদিন, “সোমবার” হাট বসত। সময়ের বিবর্তনে এই হাট এখন বানিজ্যিক বন্দরে রূপান্তর হয়েছে। তবে এখনও এখানে সপ্তাহে একদিন “সোমবার” হাট বসে।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন বিকিকিনির জন্য। এখানে একদিনে কয়েক কোটি টাকা বিকিকিনি হয়। তাই ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাজস্ব আয় বেড়েছে সরকারের। প্রত্যেক বাংলা বছরের বৈশাখ মাসে কালাইয়া বন্দর ইজারা দেয়া হয়। এবছর ৫ কেটি টাকার উপরে ইজারা দেয়া হয়েছে।
এ বন্দরে রয়েছে আলাদা ধান, গরু, মহিষ, ছাগল-মুরগির ও ভ‚ষা মালের হাট। তেতুঁলীয়া নদীর সন্নিকটে এই বন্দরটি অবস্থান হওয়ায়, জেলেদের নানা সামগ্রী বিক্রির আলাদা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে। মুদি-মনোহরী মালামাল বিক্রির জন্য রয়েছে কয়েকশ’ পাইকারী ও খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৫ কিলোমিটার ব্যসার্ধ নিয়ে বর্তমানে কালাইয়া বন্দর।
ঢাকা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর , ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ বন্দরে বিকিকিনির জন্য ব্যবসায়ারি আসেন। কেউ আসেন গুরু-মহিষ ক্রয়ের জন্য। আবার কেউ আসেন, ধান, চাল ও ডাল ক্রয়ের জন্য। তবে ধান, চাল ও ডাল ক্রয়ের জন্যই এ বন্দরে ব্যবসায়ীরা বেশি আসেন।
ট্রাক, কার্গো ও লঞ্চ বোঝাই করে এখান থেকে ধান, চাল ও ডাল নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ছাড়া এ বন্দরে নিত্য ব্যবহার্য্য পন্য সামগ্রী বিকিকিনি হয়। এ বন্দরে মাসেন্টপট্রি, সদর রোড, বাজার রোড, কুমারপট্রি, খলিফা পট্রি, কলেজ রোড, হাইস্কুল রোড, সিনামা হল রোড, লঞ্চ ঘাট রোডসহ মোট ৩২টি অলি-গলি রয়েছে। এ বন্দরে তমির উদ্দিন আউলিয়ার দরগা, বড় মসজিদ, উর্ধপ সাহজী মন্দীর, ভুমি অফিস, একটি ড্রিগী কলেজ, একটি মাদ্রাসা, একটি হাইস্কুল ও একটি বালিকা বিদ্যালয়, কমলা রানীর দীঘি (বিলুপ্তপ্রায়) ও একটি দৃষ্টি নন্দন বড় পুকুর রয়েছে। তবে এই কালাইয়া বন্দরের একটি চমকপ্রদ ইতিহাস রয়েছে।
কালাইয়া লক্ষ্মী নারায়ন মন্দীরের সভাপতি ও বাউফল প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি অতুল চন্দ্র পাল জানান, দ্বাদশ শতাব্দিতে বাংলাদেশে চন্দ্রদ্বীপ নামে একটি রাজ্য ছিল। আর ওই রাজ্যের অবস্থান ছিল বাউফলের নাজিরপুর ইউপির কচুয়া নামক স্থানে। ওই রাজ্যের অবস্থানকে কোন কোন ইতিহাসবিদ বাকলা বলেও উল্লেখ করেছেন।
১৪৯০ খ্রিষ্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের শেষ রাজা জয়দেব বল্লভের মৃত্যুর পর তার কন্যা কমলা রানী রাজ্যের রানী হন। ওই সময় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে জনবসতি স্থাপন ও বাণ্যিজ্য প্রসারের জন্য ভোলা ও বাউফলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মেঘনার অববাহিকা প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদী ছিল একমাত্র পথ। ওই নদী দিয়ে ভারতীয়, পর্তূগীজ, ফিড়িঙ্গি ও বার্মার বণিকরা আসা যাওয়া করত। তাদের বিশ্রাম ও পানীয় জল সংগ্রহের একমাত্র স্থান ছিল বাউফলের বাকলা বা কচুয়া।
বণিকদের আসা যাওয়ায় বাকলা অরক্ষিত হয়ে পরলে, কমলা রানীর স্বামী কালা রাজা বাকলার অদুরে বনিকদের যাত্রা বিরতি, নৌকা-গয়না রাখা, প্রজাদের নিত্যনৈমিত্তিক মালামাল ক্রয়-বিক্রয়েরর স্থান নির্দিষ্ট করে দেন। সেই থেকে কালা রাজার নামের সাথে মিল রেখে কালাইয়া হাট হয়। সেখান থেকে যুগের পরিবর্তনে কালাইয়া বন্দর হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এ বন্দরের বতর্মান বয়স ৫শ বছরের অধিক হলেও’ এখানের মানুষের আশা অনুযায়ি এই বন্দরের সে রকম কোন উন্নয়ন হয়নি।
কামরুজ্জামান বাচ্চু, /মেহেদী হাসান