
ছবি: সংগৃহীত
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা মাদক কারবারিদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। আর এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে থানা-পুলিশের বিরুদ্ধে।
তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায়, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে বদলগাছী সদরের হাঁপানিয়া, ফতেজঙ্গপুর মাদ্রাসার পেছনে, থানার উত্তর পাশে, মথুরাপুর ইউপির কাস্টগাড়ি, খাঁ পাড়া, জগৎনগর, জাবারীপুর বাজারের আশেপাশে, পাহাড়পুর ইউপির দারিশন, বিষপাড়া, চাপাডাল পচার মোড়, মিঠাপুর ইউপির সাগরপুর, জগপাড়া, কোলা ইউপির তেতুলিয়া, কোলা ও ভান্ডারপুর বাজারের আশেপাশে, বিলাসবাড়ি ইউপির মহেশপুর ও পারসোমবাড়ি বাজার, শ্রীরামপুর, চকাবির, আধাইপুর ইউপির সেনপাড়া হাড়িপাড়া, ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে নিউ রসুলপুর, বালুভরা ইউপির নিহনপুর, বালুভরা ইউনিয়নের কুশারমুড়ি ও রাঙ্গাতৈলসহ উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্রি হচ্ছে গাঁজা, ফেনসিডিল, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, হিরোইন ইত্যাদি।
মাদক কারবারিরা বিভিন্ন সময় থানায় আটক হলেও তারা থানা পুলিশের সহযোগিতায় এক দিনের ব্যবধানেই জামিনে বেরিয়ে এসে দ্বিগুণ উৎসাহে মাদক বিক্রি শুরু করে।
জানা যায়, গত ১৩ মার্চ বদলগাছী থানার এসআই আব্দুল মোমিন ও এএসআই শাফায়েত হাসমী সঙ্গীয় ফোর্সসহ সদরের হাঁপানিয়া গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে মাদক বিক্রি এবং সেবনরত অবস্থায় ঐ গ্রামের উজ্জল কুমার মহন্ত (৪৫) এবং মেহেদী হাসান (২০) কে ৩০ পুরিয়া গাঁজাসহ থানায় নিয়ে আসে, যার আনুমানিক ওজন ৫০ গ্রাম। ঘটনাস্থল থেকে ৩/৪ জন পালিয়ে যায়। কিন্তু আটককৃত উজ্জল কুমার মহন্ত এবং মেহেদী হাসানকে নিয়মিত মামলা না দিয়ে ১৫১ ধারায় মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করে। ফলে আসামীরা ঐ দিনই জামিনে বেরিয়ে আসে।
মাদক কারবারি উজ্জল কুমার মহন্ত একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। মাদক মামলায় এর আগেও উজ্জল একাধিকবার র্যাব ও ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়।
এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হাঁপানিয়া গ্রামে গেলে ১০ থেকে ১২ জন মহিলা বের হয়ে আসে। একপর্যায়ে তারা কান্নাকাটি করে বলতে থাকে উজ্জল আমাদের গ্রামের সব যুবক ছেলেদের নেশায় আসক্ত করে ফেলেছে। এখন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক অপরিচিত যুবকরা আমাদের গ্রামে নেশা করার জন্য আসে। সেদিন পুলিশ গাঁজাসহ ধরে নিয়ে গেল। পরের দিনই এসে আবার গাঁজা ব্যবসা শুরু করলো। উজ্জলের ছেলে প্রকাশ্যে গ্রামে গলা উঁচু করে বলে তার বাবা থানায় টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করে নিয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য উজ্জল কুমার মহন্তের বাসায় গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।
অপর আসামি মেহেদী হাসানের বাসায় গেলে তাকেও পাওয়া যায়নি। তার মা ও স্ত্রী জানায়, মেহেদীর মোবাইল থানায় আটকে রেখেছে। ১৫ হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল নিয়ে আসতে হবে। টাকা না দিলে মোবাইল দিবে না। উজ্জলের কাছে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। আর মেহেদীর কাছে ১৫ হাজার টাকা চেয়েছে। ঐ টাকা না দিলে মোবাইল দিবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের অভিযান থেকে পালিয়ে আসা একজন জানান, সেদিন উজ্জলের কাছে ৩০ থেকে ৪০ পুরিয়া গাঁজা ছিল। পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর কি করেছে জানি না।
এ বিষয়ে অভিযানে অংশ নেওয়া এএসআই শাফায়েত হাসমী বলেন, অভিযান পরিচালনা করেছি। দুজনকে নিয়েও এসেছি। কিন্তু কোন মাদক পাইনি।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া আব্দুল মোমিন গাঁজা থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, "যা হবার হয়েছে। এরকম ভুল আর হবে না।"
বাদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ শাহজাহান আলী বলেন, "সেদিন আমি থানায় ছিলাম না। তবে বিষয়টি আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।"
এ বিষয়ে জানার জন্য নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার বিপিএমকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করলেও তিনি কোনো রিপ্লাই দেননি।
আবীর