
ছবি:সংগৃহীত
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে লাচ্ছা সেমাই একটি ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাবার হিসেবে পরিচিত। চিলেকোঠা থেকে অট্টালিকা—সব ধরনের বাসিন্দাদেরই ঈদের দিনে লাচ্ছা সেমাই দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে লাচ্ছা সেমাই তৈরির পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এসেছে। সনাতনী পদ্ধতির বদলে এখন অটোমেশন পদ্ধতিতে মিক্সচার মেশিন ব্যবহার করে ময়দার খামির তৈরি করা হয়। এরপর দক্ষ কারিগরের হাতে সুনিপুণভাবে তৈরি হয় লাচ্ছা সেমাই।
বগুড়া ব্রেড, বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারি মালিক সমিতির তথ্যমতে, জেলায় প্রতি বছর ঈদের বাজারে প্রায় ২৫০টি কারখানায় ১৭,০০০ টন লাচ্ছা সেমাই উৎপাদন হয়। টাকার অঙ্কে এর মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এই লাচ্ছা সেমাই উত্তরাঞ্চল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হয়। জেলায় মোট কারখানার মধ্যে আট থেকে দশটি মোরগজাত কারখানা, বাকিগুলো খোলা বা কাচের খাঁচিতে বিক্রি হয়। এসব কারখানার বেশিরভাগই মৌসুমী ব্যবসায়ী ও কারিগর দ্বারা পরিচালিত হয়।
একজন কারিগর বলেন, "আমি ৩০ বছর ধরে এই কাজ করছি। ঈদের এই এক মাস আমরা খুব আনন্দের সাথে কাজ করি। যতই পরিশ্রম হোক না কেন, মাস শেষে যে টাকা পাই, তা দিয়ে ঈদের খরচ মেটানো যায়। আমাদের বেতন দিনে ৩০০ টাকা করে দেওয়া হয়, যা দিয়ে পরিবার চলে।"
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, উৎপাদন খরচ না বাড়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে লাচ্ছা সেমাইয়ের দামও স্থিতিশীল রয়েছে। তারা আরও জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লাচ্ছা সেমাইয়ের ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব। একজন ব্যবসায়ী বলেন, "সরকার যদি এই শিল্পটিকে সহায়তা করে, তাহলে এটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। আমরা চাই, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও লাচ্ছা সেমাই রপ্তানি করতে। যদি সহজভাবে রপ্তানি করা যায়, তাহলে শুধু দেশের বাজারে ৪০০ কোটি টাকা নয়, বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব।"
বগুড়া জেলার বিসিক কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বলেন, "লাচ্ছা সেমাইয়ের ব্যবসায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা আমরা দিচ্ছি। বাইরের উদ্যোক্তাদের জন্যও ঋণসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো উদ্যোক্তার আরও সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, আমরা জেলা পর্যায় থেকে তা নীতিমালা অনুযায়ী দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।"
জেলায় ঈদের সময় প্রায় ২৫০টি কারখানায় ২,৫০০ জনের বেশি মানুষ লাচ্ছা সেমাই উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত হন। এই শিল্পটি স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি আরও বিকশিত হতে পারে বলে ব্যবসায়ী ও কারিগররা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আঁখি