
ছবি: সংগৃহীত
কাউন্সিলর একরামুল হক হত্যাকাণ্ড, একটি মর্মস্পর্শী কল রেকর্ড। যা স্তম্ভিত করে দিয়েছিল পুরো দেশকে। বাবার আর্তনাদ সন্তানের মোবাইল ফোনে ধরা পড়ে, সেই রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। সন্তানরা শুনতে পাচ্ছিল, তাদের বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে!
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হক। টানা ১৩ বছর টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি থাকা এই নেতা ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়।
ইয়াবা ব্যবসার জন্য সারাদেশে সমালোচিত তৎকালীন এমপি আব্দুর রহমান বদি একরামকে পথের কাঁটা হিসেবে দেখতে শুরু করেন।
এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে র্যাবের কথিত ক্রসফায়ারের নামে তাকে হত্যা করা হয়। ছয় বছর পর নতুন অনুসন্ধানে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য—একরামের হত্যার পেছনে মাদক ব্যবসার অভিযোগ ছিল না, বরং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা বদির সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধই ছিল এই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ।
তৎকালীন র্যাবের ডিজি বেনজির আহমেদের নেতৃত্বে মাদকের বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধ চলছিল, যেখানে ক্রসফায়ারের নামে একের পর এক মানুষ খুন হচ্ছিল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো একাধিকবার র্যাবের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি জানালেও, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
একরামুল হকের হত্যাকাণ্ডের পর, ছয় শীর্ষ র্যাব কর্মকর্তাসহ পুরো বাহিনীর ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যদিও একে একপেশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা হয়। তার অন্যতম মদদদাতা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সেসময় গুঞ্জন ছিল, ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন অজুহাতে টেকনাফ সফরে যেতেন কাদের। বদির ডেরায় অবস্থান করতেন, আর ফেরার সময় তার বহরে চার-পাঁচটি গাড়ি যোগ হতো, যেগুলোর মাধ্যমে বদির ইয়াবার চালান নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছে যেত।
একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগম অভিযোগ করেন, তার স্বামী শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হননি, বরং এটি ছিল একটি রাষ্ট্রযন্ত্রের ষড়যন্ত্র।
হত্যাকাণ্ডের পর তিনি মামলা করার চেষ্টা করেন, কিন্তু আদালত ও থানার বারান্দায় ঘুরেও মামলা রেকর্ড করাতে পারেননি। কোনো আইনজীবীও তার পক্ষে দাঁড়াতে সাহস পাননি, কারণ র্যাবের হুমকি ছিল চরম।
শিলা ইসলাম