ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ১৮ মার্চ ২০২৫

মাহে রমজান

কুরআনুল কারীম নাযিলের মাস মাহে রমজান

কুরআনুল কারীম নাযিলের মাস মাহে রমজান। এ মাসে আমাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব কুরআন পড়া, কুরআন শরীফের মর্ম অনুধাবন করা। আজ আমরা পবিত্র কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা সুরাতুল আনআমের ফযিলত ও পটভূমি পর্যালোচনা করব। সুরাতুল আনআম পবিত্র কুরআনের ৬ষ্ঠ সুরা। এতে ২০টি রুকু, ১৬৫টি আয়াত, ১২,৯৩৫টি হরফ রয়েছে।

বিখ্যাত কুরআন বিশারদ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদি.) বলেন : সুরা আনআমের একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, কয়েকটি আয়াত বাদে গোাটা সুরাটি একযোগে একই রজনীতে মক্কা শরীফে অবতীর্ণ হয়েছে। সত্তর হাজার  ফেরেস্তা তাসবীহ পাঠ করতে করতে এ সুরার সঙ্গে অবতরণ করেছিলেন। আর আঁ-হজরত (স.) আল্লাহর প্রশংসা সূচক ‘সুবহানা রাব্বিায়াল আজীম’ পাঠ করছিলেন সেজদাবনত হয়ে। -(খাজাঈনুল ইরফান, অখ- ১৫২)।
অন্য এক বর্ণনায় হজরত মুয়াজ ইবনে জাবালের (রাদি.) চাচাত ভগ্নি আসমা বিনতে ইয়াজিদ বলেন : এ সূরা যখন হুজুর (স.) এর ওপর নাজিল হচ্ছিল তখন তিনি এক উষ্ট্রীর পিঠে আরোহিত ছিলেন। আর আমি ওটার লাগাম ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন দুর্বহ চাপে উষ্ট্রীর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল ওটার মেরুদ- এখনি বুঝি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। 
হাদীসে এ কথাও স্পষ্টরূপে উলেখ হয়েছে যে, যে রাতে এ সূরা নাজিল হয়েছিল, সেই রাতেই হজরত নবী করীম (স.) এটি লিপিবদ্ধ করিয়ে ছিলেন। সূরাটির বিষয়ে উপরোক্ত ফজিলত ও গুরুত্ব সম্ভবত এ জন্যই প্রকাশ করা হয়েছে যে, মক্কার সর্বশেষ পর্যায়ে এ সূরার মাধ্যমে মহানবী (স.) কুফফারে মক্কার তাওহীদ বিরোধী ভ্রান্ত ধারণা ও বিশ্বাসগুলোর যুক্তিপূর্ণ প্রতি উত্তর দিতে সক্ষম হবেন। 
ইসলামের দাওয়াত প্রচারের কাজ করতে করতে খোদার রসুলের (স.) বারোটি বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। এ সময় কুরাইশদের শত্রুতা, বিরুদ্ধতা ও জুলুম নিষ্পেষণের মাত্রা চরম সীমায় পৌঁছেছে। ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লোক তাদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে দেশ ছেড়ে হাবশায় হিজরত করে বসবাস করতে শুরু করল তখন জীবিত ছিলেন না হজরতের মুরুব্বি চাচা আবু তালিব, আর না অনুপ্রেরণা দানকারিণী বিবি খাদিজা (রাদি.)।
আবু ইসহাক ইসকেরায়য়িনী বলেন : এ সূরাটিতে তাওহীদের সমস্ত মূলনীতি ও পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। এ সূরাটি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বাক্য দ্বারা আরম্ভ করা হয়েছে। এতে খবর দেওয়া হয়েছে যে, সর্ববিধ প্রশংসা আল্লাহর জন্য। প্রথম আয়াতের উদ্দেশ্য হলো একত্ববাদের স্বরূপ ও সুস্পষ্ট প্রমাণ বর্ণনা করে জগতের ঐসব জাতিকে হুঁশিয়ার করা, যারা মূলত একত্ববাদের বিশ্বাসী নয় কিংবা বিশ্বাসী হওয়া  সত্ত্বেও একত্ববাদের তাৎপর্যকে পরিত্যাগ করে বসেছে। 
এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে সুরাতুল আনআম। ‘আনআম’ অর্থগৃহ পালিত জন্তু। সুরাটির ১৬, ১৭ রুকুতে ‘আনআম’ শব্দটি বেশ কয়েকবার উল্লেখিত হয়েছে। তা থেকেই উক্ত নামে সুরাটির নামকরণ। ইসলাম ধর্মে চতুষ্পদ গৃহপালিত জন্তু সম্পর্কীত সুস্পষ্ট হালাল-হারামের বিধান রয়েছে। কোনো কোনো জীব জন্তু হারাম, কখন এবং কেনই বা হারাম আর হালাল (বৈধ) হলো এর রহস্যই বা কি? 
মানুষের বিপদ আপদ দূর হওয়ার জন্য বুজুর্গানে দ্বীন এ সূরা পাঠ করার ওপর বিশেষ জোর দিয়ে থাকেন। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে পবিত্র কুরআন ও রমজানের বরকতে আসমানী বালা ও জমিনী বালা মুসিবত থেকে পানাহ দান করুন- আমিন।

×