ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন মোড়, ভারতের সতর্ক নজর

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১৮ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন মোড়, ভারতের সতর্ক নজর

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালে বাংলাদেশের নাটকীয় রাজনৈতিক ঘটনাবলীর মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। এ সময় অনেক ঘটনাই বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক।

ভারত এই নতুন রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির দিকে সতর্ক দৃষ্টিতে নজর রাখছে। সোমবার (১৭ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কয়েক দশকের বৈরিতার পর গত মাসে দুই দেশ প্রথমবারের মতো সরাসরি বাণিজ্য শুরু করে। এই সময় বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালু হয়েছে, সামরিক সম্পর্ক উন্নত হয়েছে, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে।

ভারতের ভূখণ্ড দ্বারা বিচ্ছিন্ন এই দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক জটিল ও বেদনাদায়ক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ, যা তখন পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু করে। নয় মাসের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ভারত বাঙালি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছিল, যার ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

যদিও যুদ্ধের ক্ষত দীর্ঘস্থায়ী ছিল, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক উষ্ণ ছিল। তবে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর এই সম্পর্ক আবার শীতল হয়ে যায়। তিনি দিল্লির কাছ থেকে শক্তিশালী সমর্থন পেয়েছিলেন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কে নতুন গতি এসেছে।

সাবেক বাংলাদেশি কূটনীতিক হুমায়ুন কবিরের মতে, "গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক কঠিন সময় পার করেছে। তবে বর্তমানে এটি স্বাভাবিক প্রতিবেশী দেশের মতো অবস্থানে ফিরে আসছে।"

ভারত বিশেষভাবে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের এই পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করছে, কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক রয়েছে।

শেখ হাসিনার বিদায়ের পর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কও এখন সংকটের মুখে। মানবতাবিরোধী অপরাধ, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে বিচারপ্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে ভারত এখন পর্যন্ত সেই দাবির কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। হাসিনা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করা একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। লন্ডনের কিংস কলেজের সিনিয়র ফেলো ও পাকিস্তানি গবেষক আয়েশা সিদ্দিকা বলেছেন, "বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এখন কৌশলগত সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। তারা একত্রে ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে ভারসাম্য সৃষ্টি করতে চায়।"

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সরাসরি বাণিজ্যের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও সম্পর্কের উন্নতি দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে সাক্ষাৎ করেছেন। সামরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশি সামরিক প্রতিনিধিদল পাকিস্তান সফর করে এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে আলোচনা করে। ফেব্রুয়ারিতে করাচিতে পাকিস্তানের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বহুজাতিক নৌ মহড়ায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী অংশগ্রহণ করে।

২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী বীণা সিক্রি বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের এই পরিবর্তনকে "ডেজা ভু" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, ঢাকায় দায়িত্ব পালনকালে ভারত বারবার পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও বাংলাদেশি সামরিক বাহিনীর কিছু অংশের সহায়তায় ভারতীয় বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছিল।

সূত্র : https://youtu.be/_YtrhRmocLY?si=gTn_J2j3i29u4VOD

আসিফ

×