
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন, অন্যান্য ধর্মের মানুষদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষ আগ্রাসী হওয়া এবং দেশটিতে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ ভারতের গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধানের দেওয়া মন্তব্যকে ‘গুরুতর’ অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌফিক হোসেন।মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অবস্থানরত সাংবাকিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বক্তব্যের সাথে সাথেই বাংলাদেশ সরকার প্রধানের প্রেসমিনিস্টার প্রতিবাদ জানিয়েছে।প্রতিবাদ সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে যে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকার প্রধানের প্রতিবাদের সাথে সম্পূর্ণ একমত প্রকাশ করছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমি বলতেই পারি বাংলাদেশের যেসব বিষয়গুলো উদ্বেগের, যে জায়গাগুলোতে আমাদের তথা যুক্তরাষ্ট্রের ফোকাস রয়েছে, তার মধ্যে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং বাংলাদেশে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান।’’
গোয়েন্দা প্রধান তুলসী আরও বলেন, ‘‘ইসলামী সন্ত্রাসবাদী’রা নানা দেশে ‘ইসলামী খেলাফতের’ আদর্শে শাসনক্ষমতা হাতে নিতে চায়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন এই আদর্শকে পরাস্ত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।’’
জবাবে বাংলাদেশ সরকার বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ‘নিপীড়ন ও হত্যা’ করা হয়েছে—এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হলো ইসলামপন্থী খিলাফতের মাধ্যমে শাসন করা।’’
তুলসী গ্যাবার্ডের এই মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেছে, ‘‘বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।’’
ইসলামী সন্ত্রাসবাদে বিপদ বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করছে বলে বার্তা সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া আরেকটি সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন গ্যাবার্ড।
তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে সরকার বলেছে, ‘‘বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।’’ তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যে পুরো বাংলাদেশকে অন্যায় ও অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেস মিনিস্টার ব্রুস বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্তের প্রকৃতির ক্ষেত্রে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেন। তবে যখন আবার আলোচনা, কূটনৈতিক বিবেচনা, এর সঙ্গে যুক্ত কথাবার্তা এবং কী ঘটতে পারে তার কথা আসে, তখন তিনি এখানে ফলাফল কী হবে, তা অনুমান করতে চান না। তাঁর মনে হয়, সেটাই সবচেয়ে ভালো কাজ হবে।
আবার সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ব্রুস বলেন, তিনি এ বিষয়ে সরাসরি কোনো উত্তর দেবেন না। সরকারের সঙ্গে সরকারের কূটনৈতিক বিবেচনা বা একটি নির্দিষ্ট দেশে কী ঘটছে, সেসব সম্পর্কে মনোভাব ও পদ্ধতির উত্তর তিনি দেবেন না। যেগুলো একটি কূটনৈতিক ধরনের কথোপকথনের মধ্যে পড়ে, সেখানে স্পষ্টতই তিনি কথা বলতে পারেন না।
আফরোজা